ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশ সংস্কৃতির ভাল দিক গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ অক্টোবর ২০১৮

আকাশ সংস্কৃতির ভাল দিক গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করতে হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ৩ অক্টোবর ॥ রাষ্ট্রপ্রতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, গ্রাম-শহর নির্বিশেষে তথ্যপ্রযুক্তি এখন সবার জীবনে প্রভাব ফেলেছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহের ফলে সারা বিশ^ এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। ফলে আকাশ সংস্কৃতি এখন বাস্তবতা। বিভিন্ন দেশ ও জাতির সংস্কৃতিতে দ্রুত এর প্রভাব পড়ছে। একই গতিতে সাংস্কৃতিক চিন্তা চেতনা এবং ধ্যান ধারণাও বদলাচ্ছে। তাই আকাশ সংস্কৃতির ডামাডোলে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না। বরং তা থেকে ভাল দিক গ্রহণ করতে হবে এবং মন্দ দিকগুলোকে বর্জন করতে হবে। বুধবার বিকেলে নেত্রকোনা জেলা সদরের মোক্তারপাড়া মাঠে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক লোক সংস্কৃতি উৎসব ২০১৮’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বহির্বিশে^ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও ফুটিয়ে তোলার জন্য সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানগুলোকে সংগ্রহ করে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দিতে কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, নির্মাতা, সংগ্রাহক ও গবেষকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ভারতের বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর সবুজ কলি সেন, ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী দেবকন্যা সেন প্রমুখ। প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মৈমনসিংহ গীতিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী এবং নেত্রকোনা উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মতিয়র রহমান খান। সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দেয়ার আগে রাষ্ট্রপতি জেলা শহরের পুরাতন কারাগার এলাকায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেটর সেন্টারের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়া মোক্তারপাড়া মাঠে চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তিনতলা ভবন এবং নেত্রকোনা টেনিস ক্লাবের কোর্ট ও প্রশাসনিক ভবনের নবনির্মিত স্থাপনার স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। সাংস্কৃতিক উৎসবের লিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ। সংস্কৃতিই ব্যক্তি, জাতি ও দেশের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। একদিনে বা হঠাৎ করে সংস্কৃতি গড়ে উঠে না। দিনে দিনে মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ^াস, আচার-আচরণ, জীবনমান, চিত্ত বিনোদনের উপায় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সংস্কৃতি। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহু পুরনো ও সমৃদ্ধিশালী। তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যতদিন বাংলার আকাশ থাকবে, যতদিন বাংলার বাতাস থাকবে, ততদিন বাংলার সংস্কৃতি থাকবে।’ তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিশাল প্রান্তরে আমাদের অমূল্য গাঁথাগুলো জাতিসত্তার প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা দরকার। বাংলার প্রাচীন লোকসাহিত্যসহ আধুনিক লোকগীতি ও লোকসংস্কৃতি গবেষণার জন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্পসাহিত্য এবং সংস্কৃতিতেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া আজ স্পষ্ট। বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শনের বর্ণনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রাচীনকাল থেকেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ অঞ্চল থেকেই ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র মতো বিশ^ সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। চন্দ্র কুমার দে ও কেদারনাথ মজুমদারের সহযোগিতায় ড. দীনেশ চন্দ্র সেন এ দেশের সাধারণ মানুষের কথাসাহিত্য ও পালাগানকে সম্পাদনা করে এক শ্রেষ্ঠ কীর্তি রেখে গেছেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। লিখিত বক্তব্যের আগে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ কয়েক মিনিট অলিখিত বক্তব্য দিয়ে উপস্থিত সুধীনজনদের তাঁর স্বভাবসুলভ হাস্যরসে সিক্ত করেন। এ সময় তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার বেশিরভাগ এলাকা বছরের ছয় মাস পানির নিচে থাকে। এ সময় এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে অনেকে আমাদের অবহেলা ও অবজ্ঞার চোখে দেখতেন। তারা বলতেনÑ আমরা ‘ভাইট্যা’। এখন অবশ্য আর তা বলে না। হাওড়াঞ্চলের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নেত্রকোনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাঁর অতীত রাজনৈতিক জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করেন এবং পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মীদের নামোল্লেখ করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বক্তব্য শেষে কিছুক্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন রাষ্ট্রপ্রতি। নির্ধারিত এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে প্যান্ডেলের ভিতরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও রাষ্ট্রপতিকে দেখার জন্য পুরো মোক্তারপাড়া মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মঞ্চে বসে এ দৃশ্য দেখার পর রাষ্ট্রপ্রতি প্যান্ডেলের উত্তর দিকের বেষ্টনীর কাপড় খুলে দেয়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেন। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা কাপড়ের বেষ্টনী খুলে দিলে বাইরে অপেক্ষমাণ সাধারণ জনতাও রাষ্ট্রপ্রতির ভাষণ শোনার এবং অনুষ্ঠানে উপভোগের সুযোগ পান। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ বেলা দেড়টার দিকে জেলা সদরের সাখুয়া এলাকায় বিজিবির হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করেন। পরে তিনি স্থানীয় সার্কিট হাউসে গিয়ে গার্ড অব অনার গ্রহণ এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে মতবিনিময় করেন। পরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে লোকসংস্কৃতি উৎসবে যোগ দেন।
×