ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী;###;সব দলই নির্বাচনে আসবে বলে প্রত্যাশা ;###;কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে সেটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়;###;ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই

আমার শক্তি জনগণ ॥ সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ অক্টোবর ২০১৮

আমার শক্তি জনগণ ॥ সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের কোন পরামর্শ বা আন্তর্জাতিক চাপ নেই উল্লেখ করে বলেছেন, কে সমর্থন করল কী করল না কিংবা বাইরের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে আমি রাজনীতি করি না। আমার রাজনীতি দেশের জন্য, জনগণের জন্য। দেশের জনগণের ভোটের শক্তির ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমার জোর হচ্ছে, আমার দেশের জনগণ। আর সঠিক সময়েই আগামী নির্বাচন হবে। আমার প্রত্যাশা সব দলই নির্বাচনে আসবে। তবে অসংখ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে, সেটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আইন নিয়ে ভয় তাদেরই আছে যাদের অপরাধী মন। কারও যদি অপরাধী মন না থাকে বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে; তার উদ্বেগ হওয়ার কোনও কারণ নেই। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকার এবং দলের নেতা-মন্ত্রীদের নামে মিথ্যা সংবাদের ফাইল প্রস্তুত করে রেখেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করবেন- তারাই এই আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন। যারা ন্যায় ও সত্যের পথে রয়েছেন তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ভবিষ্যতে অপরাধ করার মানসিকতাও যাদের নেই তাদেরও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি সাংবাদিকদের কোন ভয় বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আর শয়তানের সঙ্গেও যারা (বিএনপি) জোট করতে চায়, তারা নিজেরা কি তা সবাই জানে। এদেশের মানুষ শয়তানদের কখনো ভোট দেবে না, ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বুধবার বিকেলে গণভবনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে এই সম্মেলনের বিভিন্ন দিক ও সাফল্যগুলো তুলতে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রায় সোয়া ঘণ্টাব্যাপী দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, আগামী নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, দেশকে নিয়ে নানা মহলের ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক নানামুখী তৎপরতা এবং দেশকে নিয়ে তাঁর আগামী দিনের পরিকল্পনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের অসংখ্য প্রশ্নের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসিমুখে সবগুলোর বিস্তারিত উত্তর দেন। আবার যেন ক্ষমতায় আসি বিশ্বনেতাদের প্রত্যাশা ॥ জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের কোন পরামর্শ কিংবা আন্তর্জাতিক চাপ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রাজনীতি কিংবা নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব নেতারা তাঁকে কোন পরামর্শ দেননি। তবে বিশ্বের বড় বড় দেশের রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান যার সঙ্গেই কথা বলেছি, তারা বলেছেন, তারা চান আগামীতেও যেন আমাদের সঙ্গে দেখা হয়। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, আমি যেন পুনরায় ক্ষমতায় আসি। তখন আমি তাদের বলে আসিনি, আপনারা একটু আসেন আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যান। আমি তাদের জবাব একটাই দিয়েছি, দেশের মানুষ যদি ভোট দেয় তবে আছি, না দিলে নাই। ক্ষমতা থাকলে লক্ষ্মী, যায় বালাই। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কী হবে না হবে, তা নিয়েও কোন কথা হয়নি। বরং আমিই তাদের বলেছি যে, আমাদের দেশে আগে নির্বাচন নিয়ে কী হতো, মিলিটারি ডিক্টেটর থাকতে নির্বাচন বলতে কী হতো। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতাদের জানিয়েছি আমাদের দেশে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, নির্বাচনী পরিবেশের যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমরাই করেছি। আমাদের সরকারের আমলে ছয় হাজারের ওপরে নির্বাচন হয়েছে, কয়টা নির্বাচনে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি? বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরু করেছে। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা তো সেখানে হস্তক্ষেপ করিনি। তিনি বলেন, সিলেটে আমরা হেরে গেছি সামান্য ভোটে। বিএনপি থাকলে তো সিল মেরেই নিয়ে নিত। আমরা তো সে পথে যাইনি। কাজেই, আমাদের ওপর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দেশের উন্নয়ন করি মনের টানে, নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করি না। জনগণের স্বার্থে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আমরা রাজনীতি করি। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। কারণ একমাত্র নৌকা ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়। পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের নিয়ে এত মায়াকান্না কেন ? আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে এবং দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না। নির্বাচনে আসা বা না আসা সেই দলটির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সেই সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে। এ সময় বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমার চেষ্টা ছিল, সবাই অংশ নিক। কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। আপনারা যাদের নির্বাচনে চাইছেন, তারা শত শত মানুষকে নিষ্ঠুর কায়দায় পুড়িয়ে মেরেছে। আর যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খায়, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কেন? তিনি বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাদের পরিবার কেমন আছে, আহত দগ্ধ মানুষগুলো কেমন আছে কেউ কি খোঁজ নিয়েছেন? এ সময় সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তাদের পরিবার কেমন আছে একটু খোঁজ নিন। অনেক মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবনযাপন করছেন। যাদের কারণে মানুষের এই অবস্থা, তাদের জন্য মায়াকান্নার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ আছে, মামলা আছে। ওই সব অভিযোগ-মামলার সাক্ষী দিতে এফবিআই পর্যন্ত প্রস্তুত রয়েছে। খালেদা জিয়া, তার ছেলে, তার দলের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন, আমাদের উদ্বেগ দেখবে কে? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দু’জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন, আমি বুঝলাম। কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা দেখবে কে বা যারা ভিকটিমাইজ হচ্ছে, তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে? আর তাদের কীভাবে কম্পোনসেট করবেন। ওই জায়গায় একটু কমতি আছে। যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। তিনি বলেন, আমরা এটা করার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনগুলো দেখেছি। আইনগুলো দেখা হয়নি, তা নয়। তারপর এটা অনলাইনে ছিল। এটা সকলের সঙ্গে আলোচনাও হয়ে গেছে। এরপর এসে হঠাৎ এত উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন কিসের জন্য? আমার সেটাই প্রশ্ন? তিনি বলেন, কারও যদি অপরাধী মন না থাকে বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে; তার উদ্বেগ হওয়ার কোন কারণ নেই। আগে তো সমন জারি করা হতো, সরাসরি গ্রেফতার করা হতো। আমি সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। আপনারা সাংবাদিকরা যাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের জন্য কি করতে পেরেছেন? আর আপনারা এখন উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠককে আমি এমন এমন মানুষ দেখেছি, তারা লেখা তৈরি করে বসে আছে। একটার পর একটা লেখা আমার বিরুদ্ধে চালাবে। উদ্বিগ্ন হবে তারা। আপনাদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমি যত দিন আছি। আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে স্পষ্ট বলব, যে সাংবাদিকরা মনে করে তারা কোন অন্যায় কাজ করে না, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না বা বিভ্রান্ত করবে না; তাদের উদ্বেগ হওয়ার তো কিছু নাই। সেখানে আইনের যেটা দেয়া আছে, সিআরপিসিতে যা আছে-তাই দেয়া আছে। সেখানে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ দমনে আমাদের কিছু কিছু ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের ট্র্যাক করার জন্য। এখন ট্র্যাক করার পর তো বসে থাকা যাবে না। তাকে তো ধরতে হবে। কারণ সেতো আমাদের জন্য বসে থাকবে না। সারা বিশ্ব এটাই করে। তাই উদ্বিগ্ন তারা বেশি হবে, যারা এত দিন ধরে খুব তৈরি-টৈরি হয়ে আছে। নির্বাচনের সিডিউল এলে যারা আমাদের ভালো করে ঘায়েল করার জন্য মিথ্যা ডকুমেন্ট তৈরি করে বসে আছে তারা উদ্বিগ্ন হতে পারে। তারা ভাবছে যে এরকম একটা মিথ্যা নিউজ করব, এই আইন থাকলে তো তা মাঠে মারা যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) একটা জিনিসের ল্যাপস (ঘাটতি) আছে। একটা জিনিস ওখানে ঢোকানো উচিত বলে আমি মনে করি। সেটা হলো- যদি কেউ কারও বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা তথ্য দেয়, তাহলে সেই মিথ্যা তথ্যটা তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এটা সত্য। যদি সে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, যে সাংবাদিক লিখবে বা যে পত্রিকা বা মিডিয়ায় তা প্রকাশ করবে তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখবে, তার যে ক্ষতিপূরণ হবে সেটার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটা ইংল্যান্ডে আছে। সম্প্রতি বিবিসিতে ঘটে যাওয়া ঘটনারও উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘আপনারা স্মরণ করে দেখুন, বিবিসি একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নিউজ করেছিল। পরে সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। আর বিবিসির টপ টু বটম সবাইকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ২০০৭ সালে আমি যখন বন্দী। আমার বিরুদ্ধে যত নিউজ করা হলো, পরে সেটা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হলো। ওই পত্রিকার কোন সাজা হলো না। কিন্তু তার সম্মান তো নষ্ট হলো। তাদের তো এই লজ্জা হয় না যে একটা মিথ্যা তথ্য দিল, তাতে সমাজে তার সম্মান নষ্ট হলো। যার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লেখা হলো তার তো সব গেল। পদ্মাসেতু নিয়ে যারা বড় বড় হেডলাইন লিখেছে, তারা তো এখনও সমাজে বুক উঁচু করে চলছে। কিন্তু পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে যে হেয়প্রতিপন্ন হলো; অসম্মান হলো তাদের কে দেখবে? বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি ॥ নির্বাচনী পরিবেশের প্রতি মানুষের একটা আস্থা ও বিশ^াস সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ তো ষড়যন্ত্রের একটা উর্বর ভূমি। প্রতিটি ক্ষেত্রে মনে হয়, এই দেশে কিছু লোক আছেই, যদি দেশে একটি সুন্দর পরিবেশ থাকে, দেশের যদি উন্নতি হয়, দেশের সাধারণ মানুষ যখন একটু ভাল থাকে, সেটা আবার অনেকের পছন্দ হয় না এবং তখনই তারা নানাভাবে উৎপাত করে। টানা মেয়াদে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সরকারের সাফল্য ও অর্জনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, অন্যায়টা কি আমরা করেছি? আমাদের এখনই রিজাইন দিতে হবে? উৎখাত করতে হবে বা এই সরকারকে ফেলে দিতে হবে বা সরকারের বদনাম করতে হবে? আমরা করি মনের টানে। নিজেদের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করি না। নিজেদের স্বার্থ নিয়ে দেশ চালাই নাই। শুধু দেশের মানুষের স্বার্থটা দেখি। সরকার প্রধান বলেন, তারপরও যারা এখনও বসে থাকে, সরকার চলে যাবে এমন কেউ আসবে, যারা এসে ওই চাল নাই চুলা নাই কিছু নাই তাদের ক্ষমতায় বসাবে। যারা মানুষের কাছে যেতেও পারবে না, সংগঠনও করতে পারবে না, জনগণের কাছে গিয়ে ভোটও চাইতে পারবে নাÑ কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে। তাদের খায়েশ পূরণ করতে যেয়ে তো মানুষকে খেসারত দিতে হয়? তিনি বলেন, সাড়ে ৯ বছর ক্ষমতায় আছি সবাই শান্তিতে আছে। যারা এ ধরনের অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী দ্বারা উপকৃত বা উৎসাহিত, তাদের তো একটা আকাক্সক্ষা থেকেই যাবে। সুপ্ত আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করতে যেয়েই তো দেশকে বারবার বিপদে ফেলা হয়। আমি ভোটে যেতে পারব না। সাহস নাই। কিন্তু আমার পতাকা চাই। আর সেই পতাকা দেবে কে? অবৈধ কোন ক্ষমতাদখলকারী। তখন স্বাদটা পূরণ হয়। যাদের স্বাদ পূরণ ব্যক্তিস্বার্থ এবং যারা নিজেদের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে- তাদের একটা অপচেষ্টা সব সময় আছে বাংলাদেশে। কতবার মৃত্যুর মুখে যেতে হয়েছে সেটা ভুলে যান কেন? জীবনে এগুলো পরোয়া করিনি। মানুষের জন্য কাজ করব। সেই চিন্তা করে কাজ করছি বলেই, আমি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি, এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি সাবধানবাণী উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের চিন্তা কিন্তু মানুষকে নিয়ে। আর কিছু না। ষড়যন্ত্রটা থাকবে, আছে। আমি জানি সেটা। তবে এটা নিয়ে পরোয়া করি না। তবে নেতাকর্মীদের একটু সজাগ করে দিতে চাই, তারা ভাবছে দশ বছর ক্ষমতায় আছি। এত ভাল কাজ করছি। কাজেই আমরা তো এমনিই চলে আসবো ক্ষমতায়। বাংলাদেশ তো সেরকম জায়গা না। এটা যদি আরও উন্নত সভ্য দেশ হতো তাহলে বলতাম। এখন আস্তে আস্তে ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তারা জানতে পারছে। এমন একটা সময় বাংলাদেশে গেছে যে, আমি মুক্তিযোদ্ধা এটা বলতেই যেন ভয় ছিল? আমরা বিজয়ী জাতি কিন্তু পরাজিত শক্তির হাতে আমরা খেলার পুতুল। আমরা পাপেট। সেই অসম্মানজনক জায়গা থেকে দেশটাকে তো তুলে আনতে পেরেছি। আমার কাজ করে দিয়েছি। এখন বাকি যারা আছে তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রসঙ্গ ॥ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন না না দিতে ভারতীয় সরকারের কাছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অনুরোধ জানানোর বিষয়টি তুলে ধরে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রথম একজন সংখ্যালঘু থেকে আমরা প্রধান বিচারপতি বানিয়েছিলাম। তিনি সেই পদটাকে সেভাবে সম্মানজনকভাবে ধরে রাখতে পারেন নাই। এখানে কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না। কারণ আপনাদের নিশ্চয়ই মনে তাঁরই সহকর্মীরা (আপীল বিভাগের বাকি সব বিচারপতি) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাঁর নামে অভিযোগ পেশ করেন এবং তাঁর সঙ্গে বিচারকাজ চালাতে অস্বীকৃতি জানান। সমস্যাটা কিন্তু ওখানেই সৃষ্টি। এখানে কিন্তু আমরা কিছু করিনি। তিনি বলেন, এখন যে কথাগুলো উনি (সিনহা) বলছেন, এখানে আমার কমেন্টে করার কিছু নাই। আমি তো আগেই বলেছি। তাই আমি কমেন্ট করতে চাই না। শেষ পর্যন্ত কি করেন আমি দেখি! আমি বিষয়টা অবজার্ভ করছি। এটুকু আমি বলতে পারি। আর বই যেটা লিখেছেন, বই পড়েন আপনারা? আমার কোন আপত্তি নাই। পড়ে দেখেন কি লিখেছে। তবে মূল কথা হচ্ছে আমরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওনি অনুরোধ করেছেন, আমাকে সমর্থন না দিতে! এই রকম তিনি কেন সবাই অর্থাৎ এই বিএনপি যাচ্ছে, সবাই যাচ্ছে, যেয়ে তো অনুরোধ করে আসছে। এখন কে সমর্থন করবে, আর কে সমর্থন করবে না বা বাইরের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে আমার রাজনীতি না। আমি মনে করি, আমার জোর হচ্ছে, আমার দেশের জনগণ। আমার জনগণের সমর্থন আছে কি না? জনগণ আমাকে চায় কি না? জনগণ আমাকে ভোট দেবে কি না? সেটাই বিবেচ্য বিষয় আমার কাছে। এ সময় ২০০১ সালে আমেরিকাকে গ্যাস দেয়ার গোপন চুক্তিতে সম্মতি না দেয়ার কারণে সরকার গঠন করতে না পারার দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার যদি ওরকম কারও সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে? এই প্রশ্ন যদি করেন তবে আমি বলব, আমার ক্ষমতায় না থাকাই ভাল। আর দরকার নাই ক্ষমতার। তবে তো খালেদা জিয়ার মতো ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় আসতে পারতাম। তাই আমার দেশের মানুষের শক্তিটা হচ্ছে, আমার সব থেকে বড় শক্তি। সেই শক্তি যদি না থাকে, আর দেশের মানুষ যদি না চায়, কে আমাকে ক্ষমতায় এনে বসাবে? ওই আকাক্সক্ষা নিয়ে রাজনীতি আমি করি না। কাজেই উনি (সিনহা) যেখানে যা বলছেন বলতে পারেন। তাতে কিছু যায় আসে না। সিনহার সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে কেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। জোট প্রসঙ্গে- শত ফুল ফুটুক ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা লাগে তবে আমি তা কারব। কারণ আমরা জানি বাংলাদেশে ভোট আছে দুপক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ আরেকটি হচ্ছে এ্যান্টি আওয়ামী লীগ। এখন এ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোটগুলোকে তো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। জোট হওয়া তো ভাল। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন। আর জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভাল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কি না বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কি না বা সেই সাহস আছে কি না- সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন। এ সময় হাসতে হাসতে তিনি বরেন, এসব জোট জনসভা করতে মানুষ চাইলে তার ব্যবস্থাও আওয়ামী লীগ করে দিতে প্রস্তুত। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। আমি বলেছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা জায়গা করে দিন, যে যত খুশি বক্তব্যে দিক। আরও দু-একটা জায়গা পাওয়া যায় কিনা তাও দেখছি। এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশে নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাছে উন্নয়ন যাতে দৃশ্যমান হয় সেজন্য আমরা ইচ্ছা ছিল পরপর দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকি। আমরা তা পেরেছি। এখন আমার কাছে ক্ষমতা- থাকে লক্ষ্মী, যা বালাই। আমার কোন চিন্তা নাই। দুই টার্ম ক্ষমতায় থেকেছি বলেই উন্নয়নগুলো এখন দৃশ্যমান হচ্ছে, মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। তাই ২০ দলীয় জোটের সম্প্রসারণ নিয়ে আমার কোন ভয় নাই। ভয় থাকে তার যার হারানোর কিছু আছে। আমার হারানোর কিছু নেই। আমি আমার বাবা, মা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। আমরা দুই বোন আছি, আমাদের ছেলেমেয়ে আছে। তারা আপনাদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জন্য কাজ করছে। সেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন বা অটিজম বলেন। সরকার পতনে প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গেও জোট করব- বিএনপি নেতা গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের এমন বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শয়তানের সান্নিধ্য চায় বা শয়তানের সহযোগিতা চায় তারা নিজেরাই কি আপনারা নিজেরাই জানেন। এর থেকেই তাদের (বিএনপি) মনমানসিকতা বুঝে গেছেন। আমাদের দেশবাসী তারা কি প্রস্তুত? যারা শয়তানের সঙ্গে হাত মেলাবে তাদের সমর্থন দিতে দেশবাসী তৈরি কি না, সেটাও আমার প্রশ্ন। নিশ্চয়ই এই দেশের মানুষ শয়তান চায় না। এটাই হলো বাস্তব কথা। সাম্প্রদায়িক আচরণ বিকৃতমনা ॥ সমাজের রেডিকালাইজেশন ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ও তাঁর দল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশেও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে। যারা এ ধরনের (অন্য ধর্মের মানুষকে) হেয় করতে কাজ করে, এরা আসলে বিকৃতমনা। এদের কোন নীতি নাই। এটা ঠেকাতে সমাজকেই আরও সচেতন হতে হবে, সাংবাদিকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি মোকাবেলা করার জন্যই তো আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইন পাস করেছি। এই সমস্ত নোংরামি যেন না হয়, সেটা মাথাই রেখেই সাইবার সিকিউরিটি আইনটি করা হয়েছে। প্রত্যেকটা দেশেই এটা একটা বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের ক্রাইম বা জঙ্গীবাদ এবং পর্নো নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সেজন্য সবাই প্রচ- উদ্বিগ্ন। আর ক্রিকেটার লিটন দাস চমৎকার খেলেছে। তারপরও কেন ছেলেটাকে গালি দেয়া হলো? জাতিসংঘ অধিবেশনে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। আর ফেসবুক ব্যবহার করি না। কিছু ঘটলে কেউ পাঠালে দেখি। ইভিএমের পক্ষে আমি ॥ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু ইভিএমের পক্ষে। আজ পর্যন্ত নির্বাচনের যতটুকু পরিবর্তন বা আধুনিকায়ন হয়েছে তা আমরাই করেছি। কাজেই আমি মনে করি যে, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আপনি যদি মোবাইলে টিপ দিয়ে টাকা পাঠাতে পারেন। টাকা হচ্ছে প্রিয় জিনিস। ভোটটাও আপনার প্রিয় জিনিস। তবে আপনি টিপ দিয়ে ভোটটাই দিতে পারবেন না কেন? বরং এমন একটা তৈরি করা উচিত যে, মোবাইল থেকেও যেন আপনারা ভোট দিতে পারেন। কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না। তিনি বলেন, আগে ইভিএমটা হোক। আমরা একনেকে প্রজেক্ট পাস করে দিয়েছি। যেহেতু প্রজেক্ট করে দিয়েছি, সেহেতু বুঝতেই পারেন, আমাদের মানসিকতা কি? কারণ জনগণের ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ^াস আছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। জনগণের ভোটের অধিকারটা সুরক্ষিত করা সেটা আমাদের দায়িত্ব। আর সেটা মনে করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই ইভিএমে আমার তো কোন আপত্তি নাই। আমি চাই, ইভিএম হলে আরও সুবিধা মানুষ পাচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে টিপ দিচ্ছে, ভোট হচ্ছে সঙ্গে গুনে গুনে রেজাল্ট পেয়ে যাচ্ছে। আগে যেমন সিল মেরে বাক্স ভরা বাক্স নিয়ে গেল বা একটা গাড়িতে করে যেয়ে ভোট দিল বা দশটা হোন্ডা বিশটা গুন্ডা নির্বাচন ঠা-া অন্তত সেই জায়গা থেকে তো মুক্ত হবে। জোটের কলেবর বৃদ্ধির দরকার নেই ॥ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটের কলেবর বৃদ্ধি পাবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জোটের কলেবর বৃদ্ধি মানে কি? আমাদের জোট তো আছেই। আমরা সেভাবেই চলছি। আর কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসে, তবে আসবে সেটা আমরা দেখব। আমাদের এত বেশি বড় কলেবর বৃদ্ধির দরকার নাই। এখনি শুনলেন যে, বিশাল বিশাল জোট হচ্ছে। যত বড় জোট হয় হোক, সেই সুযোগটা আমরা দিচ্ছি। ২০১৪ সালে চেষ্টা করেছিলাম। সকল দলকে নিয়ে একটা সরকার করতে। আমরা এরপরেও কিন্তু নির্বাচনে জিতে সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করেছি।
×