ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ চলছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৪ অক্টোবর ২০১৮

বাগেরহাটে ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ চলছে

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাট জেলায় এখন প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পকারখানা। এখানে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। কাজের সুযোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বেকার যুবা আর কাজের সন্ধানে অন্য জেলায় যেতে তেমন আগ্রহ দেখান না। মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পাশাপাশি সামাজিক আত্মমর্যাদাও বাড়ছে। অবহেলিত বাগেরহাট জেলায় এখন অপার সম্ভাবনার ‘স্বর্ণ দুয়ার’ উন্মোচিত হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের ভাষায় ‘বাগেরহাট হবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।’ বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র নন্দিত জননেতা শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি বলেন, বেকারত্ব আর ক্ষুধায় জর্জরিত বাগেরহাট এখন সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করছে। রামপাল-মোংলার বারবার ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য কেসিসির সদ্য নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও বাগেরহাট সদর আসরে সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা মনে করেন, বাগেরহাট হবে ‘দক্ষিণাঞ্চলের সিঙ্গাপুর’। সূত্রমতে, বাগেরহাটে এখন প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮টি মেগা প্রকল্পসহ নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এসব প্রকল্পের কাজ ২০১৯-২০ সালের মধ্যে শেষ হবে। ফলে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও সমৃদ্ধি আসবে।’ সরকারের গৃহীত বহুমুখী এ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনব্যাপী ‘উন্নয়ন মেলা’ শুরু হচ্ছে। বাগেরহাট স্বাধীনতা উদ্যান প্রাঙ্গণে ‘উন্নয়ন মেলা’র আয়োজন করেছে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন। এ মেলায় প্রায় ১শ’টি স্টলে জেলা পর্যায়ের সকল সরকারী, আধা-সরকারী দফতর, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। এসব স্টলে বর্তমান সরকারের আমলে গত ১০ বছরের নিজ নিজ দফতরের গৃহীত ও বাস্তবায়িত উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ভিডিও এবং স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হবে। এ মেলা সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতির পাশাপাশি মেলায় আমন্ত্রণে এবার ডিজিটাল প্রচারণা করেছে জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে মেলার বিষয়বস্তু তুলে ধরে জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস এক ভিডিও বার্তায় সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ‘শেখ হাসিনার দর্শন সব মানুষের উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪ মিনিটের ভিডিওটিতে বাগেরহাটে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র, খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ, খননের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পাওয়া মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌপথ, মংলা বন্দরের বহুমুখী উন্নয়ন, মংলা খাদ্য গুদাম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শরণখোলা-মংলা-রামপাল বেড়িবাঁধ, বেজপা, ইপিজেডসহ বাগেরহাটের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছে। একদা অবহেলিত এ জেলায় বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার মানোন্নয়নের পাশাপাশি বাগেরহাট জেলা দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হবে বলে জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস দৃঢ় আশাবাদী। মেলা চলাকালে রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পট গান এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রামাণ্য চিত্র এবং স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হবে। জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস মনে করেন, বিশ্ব ঐতিহ্যে সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ, মংলা সমুদ্র বন্দর, একটি বিমানবন্দর, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেল যোগাযোগ, বিদ্যুতকেন্দ্র এ জেলায় রয়েছে। এ কারণে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এ জেলা যে কতটা শক্তিশালী তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। পদ্মা সেতু, খুলনা-মংলা রেল যোগাযোগ প্রকল্প, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ফলে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ির সর্ববৃহৎ উৎপাদন ক্ষেত্র বাগেরহাট বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হতে শুরু করেছে। উন্নয়ন মেলা-২০১৮ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ফলে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, মেলায় জেলা প্রশাসনের স্টলে বাগেরহাট জেলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিখশ্রুত ১৮টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে এ যাবত বাস্তবায়িত সাইলো, মংলা বন্দরের পশুর নদী ড্রেজিং, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বাগেরহাট রাজিয়া নাসের হাসপাতাল, মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ ৫টি বৃহৎ প্রকল্প এবং বাস্তবায়নাধীন খুলনা-মংলা রেলপথ, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপাল তাপবিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, বেড়িবাঁধ, মংলা বন্দরের বহুমুখী উন্নয়নসহ ৭টি মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। জেলার পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলাতেও ‘উন্নয়ন মেলা’র আয়োজন করা হচ্ছে। এসব মেলায় ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
×