ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন ও খেলাধুলা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৪ অক্টোবর ২০১৮

উন্নয়ন ও খেলাধুলা

দেশের উন্নয়নের সঙ্গে খেলাধুলার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ একটি দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে যত এগিয়ে যায়, ততই উন্নত হয় তার খেলাধুলা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অন্যান্য। বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিল্লী সফরকালে এই বিষয়টিই উঠে এসেছে পারস্পরিক আলোচনায়। ৪ দিনব্যাপী দিল্লীতে আয়োজিত মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক স্যানিটেশন কনভেনশনে বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আফম মোস্তফা কামাল সেখানে গেলে সাক্ষাত ঘটে ভারতের অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে। সেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে ভারতের অর্থমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের ক্রীড়াঙ্গন তখনই উন্নত হতে পারে যখন সেই দেশ ধাবিত হয় উন্নয়নের দিকে। এর পর তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের বিষয়ে আলোকপাত করেন। উল্লেখ্য, দুবাইয়ে সম্প্রতি আয়োজিত এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের টাইগাররা অভূতপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। ফাইনালে তারা ভারতের শক্তিশালী ক্রিকেট দলের সঙ্গে সমানে সমানে লড়াই করে অর্জন করেছে রানার্স আপ। প্রসঙ্গত ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ অর্জনসহ মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীতের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি সেরা সাফল্য, তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধুলাকে শুধু রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না, বরং তা ছড়িয়ে দিয়েছে বিভাগীয় শহরসহ প্রত্যন্ত জেলাগুলোতে। এর সর্বশেষ উদাহরণ সাফ টুর্নামেন্টের প্রাক্কালে রংপুর ও নীলফামারীতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা। বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটসমৃদ্ধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও সাধারণ মানুষের মধ্যে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা দেখা ও উপভোগের আকাক্সক্ষা প্রবল। এর আগে সরকার সিলেট ও খুলনায় একাধিক আন্তর্জাতিক ও আন্তঃদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ খেলাধুলার আয়োজন করেছে। বর্তমানে চলছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ও অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এসবই খেলাধুলার প্রতি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্য প্রদর্শনের ইতিবাচক দিক। তবে এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ পর্যায়ক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধুলা ও টুর্নামেন্টে আরও আয়োজন করতে হবে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আগে ছোট-বড় সব স্কুলে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ ছিল। সেসব স্থানে এখন গড়ে উঠেছে বড় বড় বিল্ডিং। শিক্ষাঙ্গন সম্প্রসারিত হলেও সঙ্কুচিত হয়েছে খেলাধুলা ও বিনোদনের জগত। ফলে স্কুলগামী প্রজন্ম নিতান্তই ঘর তথা ফ্ল্যাটবন্দী হয়ে পড়েছে। একদিকে পিঠে ভারি বইয়ের বোঝা, অন্যদিকে প্রবল কোচিংয়ের চাপ। অতঃপর কোথায় যাবে এসব কচিকাঁচা? দ্রুত পড়ালেখা ও নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষার বাইরে যেটুকু সময় পায় শিশুরা, তাদের সময় কাটে টেলিভিশন দেখে অথবা কম্পিউটার কিংবা সেলফোনে গেম খেলে। দেশের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী এহেন প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠছে প্রায় বিকলাঙ্গ একটা গোষ্ঠী হিসেবে। শহর-নগরের পাশাপাশি গ্রামের অবস্থাও যে ভাল এমন বলা যাবে না। বড় বড় দালান-কোঠা এবং ছোট বড় শিল্প-কারখানা প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে সেখানে। ফলে গোচারণ ভূমি এবং খেলার মাঠ বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও। তাই বলে এখনও যে কিছু অবশিষ্ট নেই, তা নয়। উপজেলা সদর এবং বড়সড় গ্রামগুলোতে তো আছেই। আছে সরকারী খাসজমিও, সেসব সংরক্ষণ করে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা গেলে গ্রামের মানুষের একটি বিশুদ্ধ বিনোদনের ব্যবস্থা হতে পারে। গণমানুষকে নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করা গেলে নির্মল আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদক ইত্যাদির ছোবল থেকে সুরক্ষা সম্ভব হয় তরুণদের। এতে নতুন নতুন প্রতিভাও উঠে আসবে সুনিশ্চিত।
×