ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মাহবুবুর রহমান সাজিদ

প্রতিরোধ ও প্রতিকার

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৪ অক্টোবর ২০১৮

প্রতিরোধ ও প্রতিকার

ডেঙ্গুজ্বর সারা বিশ্বে একটি পরিচিত ও সংক্রামক রোগ। প্রতিবছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোক এই সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ হয়, যার প্রধান বাহক হচ্ছে এডিস মশা। জীবাণুবাহী এডিস মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সে ব্যক্তি চার থেকে ছয়দিনের মধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। আবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। সাধারণত শহর অঞ্চলে বা অভিজাত এলাকায়, এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। বস্তিতে বা গ্রামে বসবাসরত লোকজনের ডেঙ্গুজ্বর অপেক্ষাকৃত কম হয়। সম্প্রতি এই রোগটি আমাদের দেশে মহামারী আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে, ঢাকা শহরে এর প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ, ধানম-ি, কলাবাগান, নীলক্ষেত, কাকরাইল, রমনা, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, সিদ্ধেশ্বরী, মৌচাক, সেগুনবাগিচা ইত্যাদি অভিজাত এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে ৪০,০২৮ জন লোক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন যার মধ্যে ২৭০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। শুধুমাত্র এই বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত ৮৯৮ জন লোক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন যার মধ্যে ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে । শরীরে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনের মধ্যে সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে বলা হয় স্কিন র‌্যাশ, অনেকটা এ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং খাবারের রুচি কমে যায়। যেহেতু এই রোগের কোন টিকা নেই তাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, এডিস মশা অভিজাত এলাকায় এবং বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালানকোঠায় এরা বসবাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচ দিনের বেশি যেন না থাকে। এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোন সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীরে ভালভাবে কাপড় ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। দিনের বেলায় মশারি টাঙ্গিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে। যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফপ্যান্ট না পরিয়ে ফুলপ্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে কোন মশা কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পূর্বে প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য কোন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকবে। সর্বোপরি ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সভা সেমিনারে মাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তবেই সম্ভব হবে মরণব্যাধি ডেঙ্গুর কবল থেকে রক্ষা। আসুন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলি। এসএম হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×