ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩ অক্টোবর ২০১৮

ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে চলতি বছরের এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্রমাগত খারাপ হয়েছে, বিশেষভাবে ইউরোপে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা নতুন এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। খবর ইয়াহু নিউজ। চলতি বছর ট্রাম্প কানাডা ও জার্মানির মতো দেশের বিরুদ্ধে মৌখিক আক্রমণ আরও বৃদ্ধি করায় ঐতিহ্যগত মিত্রদের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে বলে জরিপে প্রতিফলিত হয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ২৫টি দেশের নাগরিকরা ট্রাম্পের নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতার তুলনায় রাশিয়ার ভøাদিমির পুতিন বা চীনের শি জিন পিংয়ের প্রতি বেশি আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ইরান পারমাণবিক চুক্তির মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা দেখিয়েছেন কিন্তু প্রতিবেশী মিত্র দেশ ও ন্যাটো জোটের মিত্রদের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। চলতি বছরের জুনে কানাডায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। আয়োজক দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘খুবই অসৎ ও দুর্বল’ বর্ণনা করে বিদ্রƒপ করেছিলেন। বাণিজ্য উদ্বৃত্তি, প্রতিরক্ষায় ন্যূনতম ব্যয় ও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে ট্রাম্প জার্মানির বিরুদ্ধেও একের পর এক তোপ দেগে যাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেয়ার পর দুই বছরের অর্জন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রায় সব প্রশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে, গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তৃতায় এমনটি দাবি করে বিশ্বনেতাদের হাসির পাত্র হয়েছিলেন ট্রাম্প। পিউ রিসার্চের জরিপ বলছে, ট্রাম্পের মেয়াদের প্রথম বছর ২০১৭ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির বড় ধরনের অবনমন ঘটে এবং ক্রমাবনতি ২০১৮ সালেও অব্যাহত আছে। মাত্র ৩০ শতাংশ জার্মান এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রসন্ন, গত বছরের তুলনায়ও যা ৫ শতাংশ কম। জরিপে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার (২৬ শতাংশ) পর জার্মানিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সবচেয়ে শোচনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে ৩৮ শতাংশ ফরাসী ও ৩৯ শতাংশ কানাডিয়ান। কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ স্প্যানিশ, ৯ শতাংশ ফরাসী ও ১০ শতাংশ জার্মান ট্রাম্পের নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল বলে জরিপে উঠে এসেছে। উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকানদের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রের কদর গত বছরের তুলনায় খানিকটা বেড়েছে, তারপরও দেশটির মাত্র ৩২ শতাংশ নাগরিক ওয়াশিংটনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। জরিপে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সবচেয়ে প্রসন্ন ইসরাইল, ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ কোরিয়া। তিনটি দেশেই এ সমর্থনের হার ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৫টি দেশের প্রত্যেকটির ৯০০ শ’র বেশি মানুষের সাক্ষাতকার নিয়ে মার্কিন এ জরিপকারী সংস্থা এসব তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। জরিপে ভাবমূর্তির দিক থেকে ট্রাম্পের অবস্থা যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও খারাপ তাও উঠে এসেছে। ২৫টি দেশের মধ্যে ২০টি দেশেরই সিংহভাগ মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর তাদের অনাস্থার কথা জানিয়েছেন বলেও ভাষ্য পিউ রিসার্চের। ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন আন্তর্জাতিক নীতি ঠিক করার সময় অন্যদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় না বলেও মনে করেন জরিপে অংশ নেয়া ২৫টি দেশের ১৯টিরই সিংহভাগ অংশগ্রহণকারী। সব দেশ মিলিয়ে ট্রাম্পের প্রতি এ আস্থাশীলতার হার মাত্র ২৭ শতাংশ, যা এমনকী রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন (৩০ শতাংশ) ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি-র (৩৪ শতাংশ) তুলনায়ও অনেক কম। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার এমন হারের পরও ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় দেখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করার কথা জানিয়েছে, চীনকে এ ভূমিকায় দেখতে চায় মাত্র ১৯ শতাংশ।
×