ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসুন মিনিমাম পয়েন্টে ম্যাক্সিমাম ইউনিটি গড়ে তুলি ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩ অক্টোবর ২০১৮

আসুন মিনিমাম পয়েন্টে ম্যাক্সিমাম ইউনিটি গড়ে তুলি ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী বামপন্থীদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যে বামপন্থীরা ইতোমধ্যে উচ্চারণ করেছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আমরা নাই। আসুন, আমরা মিনিমাম পয়েন্টে ম্যাক্সিমাম ইউনিটি গড়ে তুলি। অসুবিধাটা কোথায়। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোটের অনেকের সঙ্গে আমরা এক সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি করেছি। তাদের আদর্শের প্রতি আমার কোন অশ্রদ্ধা নেই। এখানে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এই প্রশ্নে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এম-এল) ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরাও জাতীয় ঐক্য চাই। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে, আমরা জাতীয় ঐক্য চাই নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে, আমরা জাতীয় ঐক্য চাই দুর্নীতি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আমরা জাতীয় ঐক্য চাই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে, আমরা জাতীয় ঐক্য চাই এদেশের জন্মের চেতনা, এই চেতনা নিয়েই আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে ছক করে নেতাকর্মীদের আটকের মাধ্যমে এগুচ্ছে সরকার’- বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর এমন মন্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাসটা একটু স্মরণ করে দেখুন। ফেরিতে প্লেট চুরির জন্য আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল কারা? কত মামলা নিয়ে আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়ি ছাড়া ছিল। আজ সাধু সাজে কারা? কত মামলায় তারা (বিএনপি) আমাদের জর্জরিত করেছে। তবে অন্যায়ভাবে মামলা হোক তা আমরা চাই না, এখন যে মামলা হয়েছে, পুলিশ বলছে তারা আন্দোলনের নামে নাশকতার ছক আঁকছে। পুলিশের কাছে তথ্য আছে। পুলিশ বলছে তারা ২০১৪ সালের মতো সন্ত্রাসী তৎপরতার পরিকল্পনা তৈরি করছে গোপনভাবে। তিনি বলেন, তথ্য তো আমাদের কাছে না, জানবে পুলিশ, জানবে গোয়েন্দারা। এ ধরনের অভিযোগে পুলিশ যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা করে, এটা কি হয়রানিমূলক মামলা হবে? আর নিরপরাধ হলে আদালতে যান, আদালতে গিয়ে ফয়সালা করুন, স্বাধীনতা আছে। বেগম জিয়ার ৩০ মামলার কি জামিন হয় নি? উপস্থিত বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ বামপন্থীরা কেন এই এক স্লোগানে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন না? এটা আপনাদের দুর্বল করে দিচ্ছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। অহেতুক অকারণেও ভাঙ্গন অনেক সময় লক্ষ্য করি। নেতৃত্বের জন্য ভাঙ্গন এটাও লক্ষ্য করি। এটা তো বামপন্থীদের ত্যাগের যে ইতিহাস, সে ইতিহাসের সঙ্গে কোন মিল নেই। ভুল করতে করতে খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই ভবিষ্যতে ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ১৪ দলের নেতাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করার আহ্বান জানান তিনি। এবিষয়ে সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। কমরেড খালেকুজ্জানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একসঙ্গে পাশাপাশি সিটে থাকতাম। তাঁর সঙ্গেও এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার একটি বিষয়ে ভাল লাগে, একটা জায়গায় এক সুরে কথা বলছেন বামপন্থীরা। সেটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আমরা নাই। এই উচ্চারণ এর মধ্যে অনেকেই করেছে। তাই এই উচ্চারণ যারা করছেন, আসুন না আমরা মিনিমাম পয়েন্টে ম্যাক্সিমাম ইউনিটি গড়ে তুলি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দুদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, শেখ হাসিনা বিশে^র বর্তমান রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের রোল মডেল হতে পারেন। শেখ হাসিনার এই উচ্চতা, বাংলাদেশের উচ্চতা। এই উচ্চতা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়। আর বাংলাদেশে দুই একটা দল আছে, তারা যতটা না আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী, তার চেয়ে বেশি শেখ হাসিনা বিদ্বেষী। তারা আওয়ামী লীগকে নয়, শেখ হাসিনাকে হটাতে চায়। এখন পর্দার অন্তরালে দেশে-বিদেশে যেসব চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্তের মূল টার্গেট হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাঁকে হত্যা করারও পাঁয়তারা আছে। ২০বার তো হামলা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন আবারও তাঁকে ঘিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে এবং বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াইয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অপরিহার্য দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা বাঙালীর আস্থার নির্ভরযোগ্য ঠিকানা। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় বিশ^াসী, বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন, তারা যেন সামান্য রাজনৈতিক ভুল বোঝাবুঝি অথবা অভিমানের বশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দুর্বল না করে। শত্রুরা আঘাত হানে দুর্বলতার পরে। তিনি বলেন, আমরাও একটি অর্থবহ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চাই। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার কোন চিন্তা আমাদের নেই। বিএনপির সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দেয়ার হুমকিকে পরোয়া না করে তিনি বলেন, ১০ বছর পারেননি, আর এক মাস আছে। এই এক মাসে আপনারা কি আন্দোলন করবেন সবাই জানে? সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়ার সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ অসিত বরণ রায়, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ সাম্যবাদী দলের নেতারা।
×