ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিনহাকে আদালতের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ অক্টোবর ২০১৮

সিনহাকে আদালতের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে আদালতের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বিষোদগার করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা যেহেতু হয়ে গেছে, এটা দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব। তারা বিষয়টি দেখবেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন হলে তা আদালতের মাধ্যমে হবে। মামলা যখন চলবে, তখন সেটি দেখা যাবে। তার (এস কে সিনহা) ইচ্ছাগুলো ‘ব্রোকেন ড্রিমের’ মাধ্যমে পূরণ করতে পারেননি বলেই উনি আহাজারি করছেন। সেসব বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তার যে এই দেশের প্রতি কোন আনুগত্যবোধ নেই, সেটাই বোঝা যাচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে, যেসব কথা তিনি বলছেন সেসব কথা আগে দেশে থেকেও বলতে পারতেন। কিন্তু সেগুলো যেহেতু সবই মিথ্যা তাই তিনি সেসব কথা দেশের বাইরে গিয়ে বলছেন। এতে একটা বিষয় পরিষ্কার হলো তিনি এসব কথা বলছেন বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। তাই বিডি লিগ্যাল এইড এ্যাপস সরকারীভাবে আইনী সহায়তা প্রাপ্তির এক ডিজিটাল দরজা হিসেবে কাজ করবে। কারণ এই লিগ্যাল এইড এ্যাপস ব্যবহার করে হাতের কাছেই পাওয়া যাবে সরকারী আইনী সেবাসমূহ। মঙ্গলবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সরকারী আইনী সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান প্রকল্পের অর্থায়নে নির্মিত লিগ্যাল এইড অফিস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং বিডি লিগ্যাল এইড এ্যাপস এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং কমিশনের সদস্য বিচারপতি ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সব ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছে। তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষ এইসব তথ্য কেন্দ্রে গিয়ে চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন ই-সেবা গ্রহণ করছেন। আজ (মঙ্গলবার) থেকে ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্রে তাদের আরও একটি ই-সেবা প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হলো। তিনি বলেন, এখন থেকে বিডি লিগ্যাল এইড এ্যাপস ব্যবহার করে যে কেউ অনলাইনে আইনী পরামর্শ চাইতে পারবেন। এছাড়া অনলাইনে আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। শুধু তাই নয় লিগ্যাল এইড অফিস আবেদন অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর মোবাইলে অনুমোদন সংক্রান্ত মেসেজ চলে যাবে, বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের মামলা সংক্রান্ত তথ্য মোবাইল এ্যাপস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তিনি বলেন, এই ই-সেবার অন্যতম কার্যকরী অংশ হলো মামলার তারিখ নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্লাইন্ট ও প্যানেল আইনজীবীর মোবাইলে মেসেজ চলে যাবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা জানি মামলার তারিখ বা পরবর্তী কার্যক্রম জানার জন্য সাধারণ অসহায় বিচারপ্রার্থী মানুষদের নানাবিধ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই সরকারী আইনী সেবায় এ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্তকরণ এ সেবার আরও গুণগত মান-বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হবে। মন্ত্রী বলেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকার মতো উন্নত দেশসমূহের আদলে লিগ্যাল এইড সার্ভিস আরও যুগোপযোগী ও সহজ করার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার ও এ্যাপস তৈরির কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে সরকারী আইনী সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান প্রকল্পের অর্থায়নে সরকারী আইনী সেবার যাবতীয় তথ্য ও কার্যক্রম ডিজিটাল ডাটাবেজ-এ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘লিগ্যাল এইড অফিস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার’ এবং এ সম্পর্কিত একটি এ্যাপস নির্মাণ করা হয়েছে যা উদ্বোধন করা হলো। তিনি বলেন, এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অধীন সব লিগ্যাল এইড অফিসে সরকারী আইনী সেবা সংক্রান্ত যে সব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে, তার যাবতীয় তথ্য, উপাত্ত, পরিসংখ্যান ও বিবরণ অনলাইন সিস্টেমে সংরক্ষিত হবে এবং সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে সব লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। তাই আমি মনে করি এই ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গুণগত মানসম্পন্ন লিগ্যাল এইড প্রদানের জন্য সহায়ক হবে এবং প্রতিটি অফিসের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, এই সফটওয়্যারটির কার্যকর ব্যবহারের জন্য সব লিগ্যাল এইড অফিসে ইতোমধ্যে Laptop, Printer, Scanner, Multimedia Projector, Smart Phone, Computer Table & Chair সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে ফাইবার অপটিক্যালের মাধ্যমে উবফরপধঃবফ ওহঃবৎহবঃ সংযোগ প্রদানও নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমরা অনলাইনে বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিও চালু করতে চাই। যাতে করে যেকোন আইনী সেবা গ্রহীতা অনলাইনে তার বিরোধটি লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারেন। যেহেতু লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এডিআর কর্নার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত আছে তাই লিগ্যাল এইড অফিসসমূহের মাধ্যমে খুব সহজেই অনলাইনে মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধসমূহ নিষ্পত্তি করা যেতে পারে, বিশেষ করে পারিবারিক বিরোধসমূহ। যুক্তরাজ্যে এ ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তিতে পদ্ধতিটি বেশ সফলভাবে কাজ করছে। মন্ত্রী বলেন, প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। জনগণের এসব সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০০ সালে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদান কল্পে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করে এবং উক্ত আইনের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা গঠন করে। দুর্ভাগ্য যে আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকায় ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত এর কোন কার্যক্রম হয় নাই। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আবার সরকার গঠন করলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রাণ ফিরে পায় এবং তার সরকারের কার্যকর ও সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার ফলে সংস্থাটি বিগত সাড়ে নয় বছরে মহিরুহে পরিণত হয়েছে। দেশের অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থী মানুষদের জন্য এক আলোক বর্তিকায় পরিণত হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা বিভিন্ন উপায়ে প্রায় তিন লাখ ৩৮ হাজার ৬৮২ জনকে বিনামূল্যে আইনী সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৭৯২ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন এ পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, সাধারণ জনগণের কাছে সরকারী আইনী সেবার চাহিদা। এই নাগরিক সেবার গুণগতমান ও পরিধি বৃদ্ধির জন্য আমরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অল্প সময়ে, অল্প খরচে ও সহজে নাগরিক সেবা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল সার্ভিস প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয় সব নাগরিকের জন্য সরকারী আইনী সেবাকে ডিজিটাল ডেলিভারির মাধ্যমে প্রদান করার লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঘরে বসেই বিনা খরচে শুধুমাত্র একটি ফোনকলের মাধ্যমে আইনী পরামর্শ, আইনী জিজ্ঞাসা, লিগ্যাল কাউন্সিলিং, মামলার প্রাথমিক তথ্যসমূহ জানার ডিজিটাল সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি এক সময় ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় হেল্পলাইন ‘১৬৪৩০’ উদ্বোধনের মাধ্যমে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দার উন্মোচন করেন। এরপর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিশু এই হেল্পলাইনে বিনামূল্যে ফোন করে আইনি তথ্য সেবা নিচ্ছেন। এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষকে দেয়া হয়েছে ডিজিটাল আইনী সেবা। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব বিকাশ কুমার সাহা, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মোঃ জাফরোল হাছান বক্তৃতা করেন।
×