ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার করা হবে

একনেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩ অক্টোবর ২০১৮

একনেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীপথের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু নিয়মিত ড্রেজিংয়ের অভাবে নাব্য সঙ্কটে পড়ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো। নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার করে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সারা বছর নৌচলাচল নিশ্চিত করতে চায় সরকার। আর সে লক্ষ্যেই গুরুত্বপূর্ণ চারটি নদী ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবার নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার করতে সরকারী অর্থায়নে ৪৩৭১ কোটি টাকার এক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। প্রকল্পটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ বাস্তবায়ন করবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারসহ ১৫ প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৮ হাজার ৪৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ২৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী বাহাদুরবাদের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র হতে উৎপন্ন হয়ে জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীটির ২২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ১০০ মিটার প্রস্থব্যাপী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৩ মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-২ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ধরলা একটি সীমান্ত নদী যা প্রকৃত পক্ষে ব্রহ্মপুত্রের উপনদী। নদীটি হিমালয়ের দক্ষিণ সিকিম থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং লালমনির হাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। নদীটি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদীতে পতিত হয়েছে। বর্ষাকালে নৌযান চলাচল করলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীটি প্রায় শুকিয়ে যায় এবং এ সময় নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রকল্পটির আওতায় ধরলা নদীর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যইে ৬০ কিলোমিটারে ৩৮ মিটার প্রস্থব্যাপী ড্রেজিং করা হবে। ২ মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-৩ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে। ফলে সারাবছর নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে, একই সঙ্গে বন্যার ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং সেচ কার্যক্রম সহজতর হবে। দিনাজপুর সেতাবগঞ্জের একটি বিল হতে উৎপন্ন তুলাই নদীটি ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাঙ্গন নদীর ভারতীয় অংশে মিলিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার ৩৮ মিটার প্রস্থব্যাপী ড্রেজিং এর মাধ্যমে ১ দশমিক ৫ মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-৪ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে। এছাড়াও সীমান্ত নদী পুনর্ভবা দিনাজপুর জেলার বিরগঞ্জ উপজেলায় শীবরামপুর ইউনিয়নে উৎপন্ন হয়ে বিরল উপজেলা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে পুনরায় নওগাঁ জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দিনাজপুর জেলায় এ নদীর প্রবাহিত অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কি.মি. এবং প্রস্থ ৩০-২৪০ মিটার। নদীটি কাহারোল, ফোকরাবাদ, দিনাজপুর, উলিপুর ইত্যাদি স্থানের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ নদী এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। বর্ষা মৌসুমে নৌযান চলাচল করলেও শুষ্ক মৌসুমে এখানে চাষাবাদ করা হয়। প্রকল্পে এ নদীর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যই ৮০ কি.মি. এ ৩৮ মিটার প্রস্থব্যাপী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ২ মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-৩ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একনেকে বলেছেন প্রকল্পগুলোর সংশোধন প্রহণযোগ্য নয়। প্রকল্পে যা কাজ থাকবে তাই আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। তারপর যদি প্রয়োজন হয় আলাদা প্রকল্প দিতে হবে। নির্বাচনের কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ থেমে থাকতে পারে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, উন্নয়ন চলবে একই মাত্রায়, একই গতিতে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। নির্বাচনের সঙ্গে কাজের কোন সম্পর্ক নেই। শেখ হাসিনার কাছে সব সময়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবারের একনেকের অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত), এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়ক উন্নয়ন (চট্টগ্রাম অংশ), খরচ হবে ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ভূরুঙ্গামারি-সোনাহাট স্থলবন্দর-ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমর নদীর ওপর সোনাহাট সেনাহাট সেতু নির্মাণ, খরচ ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, খরচ ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন, ব্যয় ১০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সাসটেইনেবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প, খরচ ১৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে ভোলা জেলার সদর উপজেলাধীন রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন রক্ষার্থে তীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, খরচ ৩৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরচ ১৫৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (আরওএসসি)- দ্বিতীয় পর্যায় (দ্বিতীয় সংশোধিত), খরচ ১ হাজার ২৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ, খরচ ৩২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, খরচ ১৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে পেশাগতভাবে এটি দরকার। বিভিন্ন পেশায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। কর্মস্থলে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। এর মাধ্যমে মালিক শ্রমিক ও সকল পক্ষের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন, গোপালগঞ্জ (প্রথম সংশোধিত) প্রকরেল্প খরচ হবে ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
×