ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম নারী মেজর জেনারেল

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৩ অক্টোবর ২০১৮

প্রথম নারী মেজর জেনারেল

নারীর ক্ষমতায়ন আজ বাংলাদেশে এক অনন্য উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত দশ বছরের উন্নয়ন কর্মসূচী সার্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনে যে অনবদ্য প্রভাব রেখে যাচ্ছে সেখানে অর্ধাংশ নারী সমাজের অগ্রসরমান ভূমিকা একেবারে সুস্পষ্ট। প্রবৃদ্ধির সমস্ত সূচকে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, নারীরাও সেভাবে যুগান্তকারী অবদানে সর্বক্ষেত্রে নিজের অংশীদারিত্ব জোরদার করেছে। সেটা যেমন শিক্ষার ক্ষেত্রে, তেমনি বিভিন্ন পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বেলায়ই শুধু নয়, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ নানা কর্মক্ষেত্রেও জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় শিক্ষকতাই ছিল যাদের কাছে সর্বোত্তম কর্মযোগ, সেখানে আজ তারা বিমান চালাচ্ছে, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিতেও পিছপা হচ্ছে না। তা ছাড়া সেনাবাহিনীতেও সদর্পে বিচরণ করছে, যদিও সংখ্যায় কম। ডাঃ সুসানে গীতি তেমনই একজন সুদক্ষ সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যিনি নিজেকে শুধু প্রমাণই করেননি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা মেজর জেনারেলের অবস্থানে চলেও আসেন। সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি প্রথম নারী হিসেবে এই পদমর্যাদায় অলঙ্কৃত হওয়ার কারণে। শিক্ষা জীবনের সুবর্ণ সময়ে ১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করা সুসানে পরের বছর (১৯৮৬) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে নিজের কর্মজীবনের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে হেমাটোলজিতে এফসিপিএস ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি তার পেশাকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে নিয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং বিভিন্ন সামরিক হাসপাতালে প্যাথলজি বিশেষজ্ঞের পদ অলঙ্কৃত করেন। মেজর জেনারেল পদে অভিষিক্ত হওয়ার গৌরবোজ্জ্বল সময়ে তিনি আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজে প্যাথলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমন একজন কৃতী ও অভিজ্ঞ চিকিৎসককে আর্তমানবতার সেবায় আপন কর্মদ্যোতনাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। উত্তরোত্তর নিজের যোগ্যতা ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করে সামরিক কাহিনীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞের প্রতিটি ধাপ সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া, সেও এক অনন্য সক্ষমতা। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের জন্য অবারিত কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি দরজা উন্মুক্ত করার যে অসাধারণ যুগপরিকল্পনা তাকেও অভিবাদন শ্রদ্ধার্ঘ্য। চ্যালেঞ্জিং পেশায় একসময় নারীদের অভিগমন ভাবাই যেত না। ঝুঁকিপূর্ণ কর্মজগতও ছিল নারীর প্রায়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সেখানে সাহসী নারীদের সদর্প অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলে চলবে না অনুসারীদেরও নিজের যোগ্যতায় তৈরি হতে হবে।’ সব ধরনের পেশাকে নির্ভীক চিত্তে গ্রহণ করে নারী নয় মানুষ হিসেবে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় জয় ধ্বজা ওড়াতে হবে। সুসানে গীতির মতো আরও অনেক দক্ষ সামরিক কর্মকর্তা তাদের অবস্থান থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে এই স্পর্শকাতর, ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশাত্মবোধের অনির্বাণ শিখার কর্মক্ষেত্রকে জোর কদমে এগিয়ে নিতে হবে। আধুনিকতার বিস্তৃত বলয়, তথ্যপ্রযুক্তির নিরন্তর গতি প্রবাহ এবং বিশ্বপরিসরে সহজ অভিগামিতাকে জোরদার করে নারীরা যেন নিজের দক্ষতা এবং সক্ষমতা প্রমাণ করে সমতাভিত্তিক সামাজিক অবস্থানে যোগ্যতম জায়গায় বসতে পারে। সেটা যে অসম্ভব কিছু নয় সুসানে গীতি তা দেখিয়ে দিলেন। প্রথা উদাহরণ তৈরি করে অন্যদের উদ্দীপ্তও করলেন। সে সুশৃঙ্খল ও পর্যায়ক্রমিক পথ ধরে আরও নতুন নারী মেজর জেনারেলের অপেক্ষায় পুরো জাতি। আবারও সশ্রদ্ধ অভিবাদন এই কৃতী ব্যক্তিত্বকে, যিনি আমাদের সবাইকে নতুন উদ্যমে জাগিয়ে তুললেন।
×