ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ জাভেদ হাকিম

বাজেরিগার পাখি পালনে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২ অক্টোবর ২০১৮

বাজেরিগার পাখি পালনে সাফল্য

তারুণ্য স্বপ্নকে হার মানায়। হ্যাঁ বলছি তেমনি এক তরুণের গল্প। নাম তার সুলতান বাবু। ঢাকার আগারগাঁও তালতলার বাসিন্দা। নামের সঙ্গে তার যাপিতজীবনের কাজ কর্মেরও রয়েছে বেশ মিল। ছোটবেলা থেকেই পাখি পালনে ঝোঁক ছিল। টিয়া, ময়না, শালিকসহ নানান পাখি খাঁচায় পুষতে ভালবাসত। কিন্তু ১৯৯৬ সালের দিকে সে জানতে পারে বন্যপাখি খাঁচায় পালন বৈধ নয়। সুস্থ মানসিকতার কেউ যখন জানতে পারে সে ভুল করে কোন অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত, তখন তার পক্ষে যত শখের বস্তুই হোক না কেন তা সে করতে আগ্রহী হবে না। সুলতান বাবুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সে একদিন বন্যপাখি সব খাঁচা মুক্ত করে দিল। কে জানত তার এই ত্যাগই একদিন তাকে অনেক উঁচু মর্যাদা এনে দেবে। পাখিগুলো ছেড়ে দেয়ার পর কেটে যায় বেশ কিছুদিন। এর মাঝেই এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারে খাঁচার পাখি বাজেরিগার সম্পর্কে। রক্তের সঙ্গেই যার মিশে আছে পাখি পালনের সৌখিন নেশা, তাকে আর থামায় কে। মাত্র তিন জোড়া বাজেরিগার পাখি দিয়ে শুরু করে। এর পর চারটি বাচ্চার সফল ব্রিডিং। এভাবেই বাজেরিগার নিয়ে চলতে থাকে তার দিনলিপি। ২০০৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত হন। যুক্ত হওয়ার পর তিনি বাজেরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ নামে ফেসবুক গ্রুপ ওপেন করেন। ধীরে ধীরে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাজেরিগার প্রেমিকদের বাজেরিগার পালন ও চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু করেন। তার সহযোগিতাপ্রবণ মানসিকতার কারণে এক সময় গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায়। ফেসবুকে বাজেরিগার পালক বিদেশী বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের কাছ থেকে জানতে পারে বাজেরিগারের কালার ও সাইজের ওপর প্রতিযোগিতার কথা। সে তার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০১০ সালে আয়োজনের উদ্যোক্তা হয়ে, বাংলাদেশে প্রথম বাজেরিগারের ওপর প্রতিযোগিতা সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এর পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সারা পৃথিবীতে বাজেরিগার সোসাইটি আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে লাগলেন। মালয়েশিয়া বাজেরিগার সোসাইটি থেকে তাদের প্রতিযোগিতা উৎসবে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন। তিনি গেলেনও মালয়েশিয়া। তাদের সঙ্গে বাজেরিগার পাখি পালন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে এলেন। এতে করে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি সম্বৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি বাড়ল। দেশে আসলেন। আয়োজন করলেন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পেট পালনকারীদের উৎসাহিত করার জন্য, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ্যাওয়ার্ড প্রদানের। উক্ত আয়োজন সারাদেশের পেট পালনকারীদের মাঝে ব্যাপক সারা ফেলল। এবার যেন তারুণ্যের দিশারী সুলতান বাবু মুকুটহীন সুলতান হতে চললেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সৌখিন বাজেরিগার পাখি পালন শুধু শখই পূরণ করে না- মানুষকে বিপথগামী হতেও ফেরাতে সক্ষম। সেই সঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাখি বিক্রি করে পকেট খরচও চালানো যায়। বেসরকারী একটি কোম্পানিতে এডমিন লেভেলে চাকরির পাশাপাশি তার এখন বাজেরিগারের ওপরেই ধ্যান-জ্ঞান। তিনি জানালেন বাংলাদেশ সরকার যদি বাজেরিগার পালনকারীদের সহযোগিতা প্রদান করে, তাহলে প্রতিবছর বাজেরিগার রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। সদ্য সমাপ্ত মিসরের কায়রো নাসির স্টেডিয়ামে বাজেরিগার ক্লাব অব ইজিপ্টের উদ্যোগে বাজেরিগার চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ক্লাবের সভাপতি মহেব নাবিল বুলসের আমন্ত্রণে কায়রো যান। সেই সঙ্গে সুলতান বাবু বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে, সেখানে বাজেরিগার জাজ ট্রেনিং নেন। তিনি সেখানে দেশের হয়ে মিসরের জাতীয় টিভি চ্যানেলেও সাক্ষাতকার দেন। যা বাংলাদেশের জন্য গর্ব। এই দেশের তরুণদের জন্য নব চেতনার বার্তা বয়ে আনার জন্য ভ্রমণ সংগঠন ‘দে-ছুট’-এর পক্ষ থেকেও মুহাম্মদ সুলতানুর রহমান, সুলতান বাবুকে সম্মাননা দেয়া হয়।
×