ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদক পরিষদের বক্তব্যের জবাবে জয়

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২ অক্টোবর ২০১৮

সম্পাদক পরিষদের বক্তব্যের জবাবে জয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আপত্তি তোলায় সম্পাদক পরিষদের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যেসব সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ভয়েরও কিছু নেই। সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে একটি পোস্টে এ কথা জানান সজীব ওয়াজেদ জয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রসঙ্গ যুক্ত করার বিষয়ে যারা আপত্তি করছেন, তাদের নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জয়। তিনি লিখেছেন, আইনটির এই ধারার বিরুদ্ধে যারা বলছেন তারা আসলে বাঙালী নন। তারা গোপনে জামাত সমর্থক রাজাকার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হলোকস্ট ডিনায়াল আইনের ওপর ভিত্তি করেই ওই ধারা প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে জয় লিখেছেন, এ আইনের কিছু অংশ অনলাইনে মিথ্যা বা গুজবের মাধ্যমে সহিংসতা বা ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে। পৃথিবীর ‘সব দেশেই’ এ ধরনের আইন আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়। এমন অবস্থায় ‘বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের কর্মসূচী দেয় সম্পাদক পরিষদ। তবে পরে সরকারের অনুরোধে কর্মসূচী স্থগিত করে রবিবার তারা সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, তাদের আপত্তির বিষয়গুলো মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য তোলা হবে। সম্পাদক পরিষদ আপত্তি জানিয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে । এ আইনের ২৫ ধারায় কাউকে ‘বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করার’ জন্য তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার এবং ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণেœর’ উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা প্রচার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ বলছে, এই ধারা সংবাদমাধ্যমে সব ধরনের অনুসন্ধানী রিপোর্টিংকে সরাসরি বিরূপ প্রভাবিত করবে। দুর্নীতির খবর বা ‘হেফাজতে মৃত্যু’, ‘গুম’ ও ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলেও তা এই আইনে রাষ্ট্রের ‘ভাবমূর্তি ও সুনাম’ ক্ষুণœ করা বলে বিবেচনা করা হতে পারে। সম্পাদক পরিষদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে সোমবার জয় লেখেন, ‘পরিষ্কারভাবেই, তাদের নৈতিকতা বলে কিছু নেই। বস্তুত সম্পাদক পরিষদ বলতে চায়, তাদের সরকারের বিরুদ্ধে নোংরা, মিথ্যা প্রচারণা চালাতে দিতে হবে এবং সত্য অবলম্বন না করেই তাদের অপছন্দের রাজনীতিকদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে দিতে হবে। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, সম্পাদকরা যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘এমন পরিকল্পনা’ করেন, তাহলে দেশের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ‘গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্য যাচাই না করে’ ডেইলি স্টারে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির খবর’ প্রকাশ এবং আট বছর পর এক টেলিভিশন আলোচনায় সে বিষয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভুল স্বীকারের প্রসঙ্গ টেনে সম্পাদক পরিষদের নৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জয়। বলেন, প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের কোন সংগঠনই কিন্তু তাদের নিজেদের নৈতিকতার সনদ বা আচরণবিধি প্রয়োগ করতে পারেননি। সম্পাদক পরিষদের বর্তমান প্রধান মাহফুজ আনাম, যিনি টিভির পর্দায় স্বীকার করেছেন এক-এগারোর সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচারের কথা। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে হলে তাকে বাধ্য করা হতো সাংবাদিকতা পেশা থেকে পদত্যাগ করতে। শুধু তাই নয়, তাকে আর কোনদিন সম্পাদক বা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতো না। বাংলাদেশে কিন্তু সম্পাদক পরিষদ উল্টো তার পক্ষ নিয়েই তাকে তাদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করেছে। বিষয়টি আমাকে অবাক করে।’ জয় লিখেছেন, ‘যেহেতু ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এই আইন নিয়ে তাদের মত তুলে ধরেছে, আমি আশা করব তারা মাহফুজ আনামের স্বীকারোক্তির পরেও একটি প্রথম সারির পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত থাকা নিয়েও তাদের মতামত জানাবেন। তা না হলে, তাদের কার্যকলাপ হবে একপেশে ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল ’ জয় লেখেন, ‘যেহেতু গণমাধ্যমের সম্পাদকরা তাদের নিজেদের তৈরি নৈতিক নির্দেশনাই মানতে রাজি নন, তাহলে আমরা সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের ভার আদালতের হাতেই তুলে দেই। গ্রেপ্তার মানেই জেল নয়। সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে আসামি জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন। প্রমাণের দায় সরকারের। যে সকল সাংবাদিকের মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্য নেই, তাদের ভয়েরও কিছু নেই।’ জনগণের তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে দাবি করে জয় বলছেন, এর মাধ্যমে হয়তো কোন সাংবাদিকের কাজ কঠিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কারো দুর্নীতি ফাঁসে জন্য এক সাংবাদিকের কি ‘সরকারী অফিসের কম্পিউটার হ্যাক করে নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য চুরির’ অধিকার থাকা উচিত? পৃথিবীর কোন দেশই কিন্তু বেআইনীভাবে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে সুযোগ দেয় না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও না। সরকারী অফিসে গোপনে নজরদারি করা সবদেশেই আইনবহির্ভূত, সাংবাদিকদের জন্যও। সাংবাদিকদের তাদের তথ্য অন্যান্য সূত্র থেকে জোগাড় করতে হয়।’ সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেছেন, শুধুমাত্র অপরাধ সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পর যদি গ্রেফতার বা তল্লাশি চালাতে হয়, তখন ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হয়। অপরাধ ঘটাবে সময় ধরা পড়লে এর প্রয়োজন হয় না এবং এ নিয়ম সব দেশেই রয়েছে। তিনি, প্রশ্ন রেখেছেন, পুলিশ যদি অনলাইন হ্যাকিং সম্পর্কে তথ্য পায় ও হ্যাকারের অবস্থান খুঁজে পায়, তাহলে ওয়ারেন্টের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নাকি তাৎক্ষণিক তাকে থামানো উচিত? তিনি লিখেছেন, ‘যে সম্পাদক বা সংবাদকর্মী মিথ্যা সংবাদ ছেপেছেন, তাকে অবশ্যই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর কোনদিন সংবাদ তৈরি বা প্রচারের কাজ করতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
×