ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২ অক্টোবর ২০১৮

আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে আওয়ামী লীগ। সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগের প্রথম দিনই ঢাকা মহানগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভোটারদের হাতে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণসহ নৌকা মার্কার পক্ষে জোয়ার তুলেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। জনসংযোগকালে নেতারা ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করুন’ শিরোনামে লিফলেট ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে বিতরণ করেন। নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বিএনপির দেয়া সাত দফা দাবিকে অবাস্তব, অযৌক্তিক ও সংবিধানবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী রাজধানীর দুটি স্থানে গণসংযোগে অংশ নিয়ে বলেছেন, শয়তানের সঙ্গে জোট করে তারাই, যারা নিজেরাই শয়তান আর বিএনপি ঘোষিত সাত দফা দাবি অযৌক্তিক ও অবাস্তব। অসাংবিধানিক দাবি কেউ মেনে নিতে পারে না। রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে গণসংযোগের উদ্বোধন এবং শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গণসংযোগকালে ওবায়দুল কাদের ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবকিছুর জবাবদিহি নেয়া হবে’ মর্মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতায় গেলে পরে কী হবে? আগে ক্ষমতায় যান। এত সহজ নয়, ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন অনেক দূরে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন অর্জনের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আপনাদের চলার পথে যে কালো ছায়ায় পড়েছে তাতে বিএনপি সঙ্কটে পড়েছে। আসলে হুমকি-ধমকি দিয়ে বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে চাইছে। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যারা আন্দোলনে রাজপথে নামবে তাদের সঙ্গে আমাদের ঐক্য হবে। সেখানে যদি শয়তানও থাকে তাদের সঙ্গেও ঐক্য হবে’Ñ বিএনপির জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শয়তানের সঙ্গে জোট করে তারাই, যারা নিজেরাই শয়তান আর বিএনপির সাত দফা দাবির কোন কোনটি সংবিধানবিরোধী। কাজেই এসব অবাস্তব দাবি এই সময়ে, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আর মাত্র এক মাস বাকি এর মধ্যে মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তারা নিজেরাই ক্ষমতায় থাকলে এই সময়ের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নিতে পারত না। অসংবিধানিক দাবি কেউ মেনে নিতে পারে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দাবিগুলো তারা শুধু বলার জন্য বলছে, তাদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এসব আবোল-তাবোল বকছে। তারাও জানে এই দাবিগুলো মেনে নেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। বিএনপির সঙ্গে কোন পাল্টাপাল্টি নয়, আওয়ামী লীগ নিরীহ কর্মসূচী পালন করবে। আমাদের কর্মসূচী হচ্ছে নিরীহ ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মসূচী। আমরা জনগণের কাছে যাব, কোন ধরনের উত্তেজনা ছড়াব না। তিনি বলেন, আমরা মারামারি, হানাহানি, পাল্টাপাল্টির মধ্যে নেই। তবে বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক শক্তি যদি আবারও সহিংসতা, নাশকতা করে তাহলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করব। এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। অক্টোবর মাসে বিএনপির রাজপথ দখলের কর্মসূচীর বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজপথ কে দখল করতে আসে দেখব। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ও তাদের সাম্প্রদায়িক দোসর জামায়াত আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়ে দেশে ২০১৪ সালের মতো নাশকতা ও সহিংসতা করার ছক কষছে। তারা আবারও সহিংসতা ও নাশকতার পথে পা বাড়াচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে সচেতন থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা দেশে আবারও নাশকতা ও সহিংসতা করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, তেমনি জনগণকে সঙ্গে নিয়েও আমরা তাদের প্রতিহত করব। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণসংযোগ কোন প্রার্থীর পক্ষে নয়, গণসংযোগ হবে নৌকার। সকল ওয়ার্ড মহানগর জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে শুরু হচ্ছে এটাই প্রথম প্রোগ্রাম। ক্যামেরার সামনে লোক দেখানো গণসংযোগ করবেন না। দলীয় প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনে যে কেউই প্রার্থী হতে পারেন। তবে দলের ভেতর কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে সে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। নিজের দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে কেউ জড়িত হলে মনোনয়ন পাবেন না। আমাদের বিরোধী বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা না বলে অনেকে নিজেদের বিরুদ্ধে কথা বলতে থাকে। চায়ের দোকানে বসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বদনাম করে। ঘরের মধ্যে ঘর করে আর যাই হোক তারা মনোনয়ন পাবেন না। উন্নয়ন ও অর্জনের রোল মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি হুমকি-ধমকি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে চাইছে। ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাইছে। আমরা পাল্টাপাল্টি করব না। তবে ঢাকা অচল করতে যদি আসে জনগণ বিএনপি অচল করে দেবে। তাই অচলের হুমকি দেবেন না। এদেশের মালিক আল্লাহপাক, এরপর জনগণ। জনগণ যতদিন ক্ষমতায় রাখবে আমরা ততদিন ক্ষমতায় থাকব। কিন্তু জনগণ না চাইলে একদিনও ক্ষমতায় থাকব না। এ দুটি স্থানে গণসংযোগে আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন, এ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাওছার, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান, কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুল হক রানা, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জসিম উদ্দিন প্রমুখ। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধÑ হানিফ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে গঠিত টিম বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর ওয়ারী থানার ৩টি ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় হানিফ বলেন, সরকারের পক্ষে আপনাদের (বিএনপি) দাবি-দাওয়া মানা সম্ভব নয়। এছাড়া খালেদা জিয়াকেও মুক্তি দেয়াও এ সরকারের পক্ষে অসম্ভব। আপনারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। আপনাদের স্বাগত জানাব আর নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যদি বানচালের চেষ্টা করেন তাহলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। তিন দিনে আওয়ামী লীগের ৯০ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ভরে। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিনসহ ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে বোমা মেরে, অত্যাচার নির্যাতন করে হত্যা করে। তখন গণতন্ত্র কোথায় ছিল? ফখরুল ইসলাম কী এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন? খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে রয়েছেন। এখানে সরকারের কোন হাত নেই। তাকে মুক্তি দেয়াও সরকারের পক্ষে সম্ভব না। হয় আইনী লড়াই অথবা ভুল স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার মাধ্যমে খালেদার মুক্তি সম্ভব। অন্যকোন পথে তার মুক্তি হবে না। গণসংযোগকালে আগামী নির্বাচনে এলাকাবাসীর কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, এস এম কামাল হোসেন, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনু চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া হানিফের নেতৃত্বে কাপ্তান বাজার মার্কেটের দোকানদারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চান। এ সময় নৌকা নৌকা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। নাশকতা কঠোরহস্তে মোকাবেলাÑ নানক ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অপর নির্বাচনী প্রচার টিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন। এখানে অনুষ্ঠিত পথসভায় নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ৭-দফা দাবি-দাওয়ার নামে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্বের ন্যায় অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমাবাজি করে নিরীহ মানুষের জান-মাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। ভবিষ্যতে কোন দফা বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে সহিংস আন্দোলন খেলা করতে চাইলে কঠোর হস্তে মোকাবেলা করা হবে।জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও নাটক করে জনসভা আয়োজন করলেও তা ফ্লপ হয়েছে। এতে আজ পরিষ্কার হয়েছে অতীতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের জন্য বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও পররাষ্ট্র নীতিতে রোল মডেল। তিনি আগামী নির্বাচনে মোহাম্মদপুরবাসীকে শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীর জন্য দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। পরে নানক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণপূর্বক গণসংযোগ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতা আহম্মদ হোসেন, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ফরিদুন্নাহার লাইলী এমপি, সুজিত রায় নন্দী, আব্দুস সাত্তার, ড. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×