ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখেই নির্বাচনের তফসিল

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২ অক্টোবর ২০১৮

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখেই নির্বাচনের তফসিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বিষয়ে কারও সঙ্গে ইসির কোন কথা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সোমবার নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, কমিশনের সভায় তফসিলের বিষয়টি নির্ধারণ হবে। তফসিলের ঘোষণার দায়িত্ব একান্তই নির্বাচন কমিশনের উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে কথা বলতে পারেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি এই মন্তব্য করেন। বলেন, এখনো যেহেতু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি বিধায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে যওয়ার সুযোগ নেই। তফসিল ঘোষণার পরেই আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা তা দেখবে। তার আগে নয়। তিনি এ সময় নির্বাচনের প্রস্তুতি আরপিও সংশোধন, নির্বাচনী আইন এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয় নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে বলেন। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে অর্থমন্ত্রী একাদশ নির্বাচনের দিনক্ষণ উল্লেখ করে বলেছিলেন ২৭ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার দৃষ্টিগোচর করা হলে তিনি বলেন অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে তার সঙ্গে কোন আলোচনাও হয়নি। ওবায়দুল কাদের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তখন বলেছিলেন আওয়ামী লীগের কোন নেতার দায়িত্ব নয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। পরে অবশ্য অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যের ভুল স্বীকার করেন। কবিতা খানম সাংবাদিকদের এই সময় আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে মাথায় রেখেই কিন্তু তফসিলের তারিখ ঘোষণা করবে। তবে এ ধরনের আলোচনা এখনও কমিশনে হয়নি, কমিশন সভায় তারিখ নির্ধারণ করা হবে। সভার পরে ঘোষণা করা হবে। সেটা যেহেতু হয়নি, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করে এই কথা বলা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কমিশনের নির্বাচনী আইন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, কমিশনের বিদ্যমান সবগুলো আইন অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা যদি প্রয়োগ করি, অবশ্যই শক্তিশালীভাবেই প্রয়োগ করা হবে। কারণ আইনের প্রয়োগটাই আসল। অনেক শক্ত আইন করে তার প্রয়োগ না করলে আইন যতই শক্তিশালী হোক, ফল পাওয়া যায় না। আইন যেহেতু আছে, প্রয়োগ অবশ্যই হবে। ইভিএম বিষয়ে তিনি বলেন, আরপিওতে ইভিএমের বিষয়ে একটি প্রস্তাব রয়েছে। তা হচ্ছে ম্যানুয়ালের পাশাপাশি এটি ব্যবহার করা হবে। কমিশন যদি মনে করে অল্প পরিসরে সীমিতভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে তবেই ব্যবহার করা হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কতটুকু দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারছি এবং ভোটারদের সচেতন করতে পারছি তার ওপর নির্ভর করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। বিগত সিটি কর্পোরেশনে ইভিএম ব্যবহারের ফলাফলও খারাপ নয়। সেখানেও তেমন অভিযোগ উঠেনি। আরপিওতে ম্যানুয়াল আইন অপব্যবহারের ফলে যে শাস্তির বিধান ছিল, ইভিএমের আইনের ক্ষেত্রেও তা একই রাখা হয়েছে। একসঙ্গে দেড় লাখ ইভিএম কেনার বিষয়ে বলেন, ইভিএম সব সময় লাগছে। শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, সিটি-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন রয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। আস্থার জায়গাটা তৈরি হলে, এটি ব্যবহার করা হবে। ইভিএম মেশিনটা যত ব্যবহার হবে, তত উন্নত হতে থাকবে। দুর্নীতি-জালিয়াতি কমে আসবে। যেসব ত্রুটি আসবে, সেগুলো ঠিক করে আমরা আরও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হব। তিনি বলেন, আরপিওতে ১০ থেকে ১২টি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে আরপিওতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগ ছিল, গ্রহণযোগ্যতা বিরুদ্ধেও আপীলের সুযোগ ছিল, তবে আইনে ছিল না। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার একটা বিষয় আছে। ঋণখেলাপীদের সাত দিন আগে যেটা ছিল, এখন সেটা মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের দিন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। আরপিওতে এ বিষয়ে একটি বিধি আছে, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে বিশদ বলা আছে। এমপি, মন্ত্রী, স্পীকার সবার কথাই বলা আছে। সরকারী যানবাহন, সরকারী কোন সুবিধা গ্রহণ করে তারা কোন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সুতরাং এখানে নতুন কিছু করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তফসিল ঘোষণার পর এমন কিছু হলে আমরা আইনের আলোকে এ্যাকশনে যাব। দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আরপিওতে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের বিষয়টি ছিল। এখন তার সঙ্গে বদলির বিষয়টি আমরা প্রস্তাব রেখেছি। আমরা মনে করি, প্রত্যাহারের সঙ্গে বদলির ক্ষমতা থাকলে জবাবদিহিতাটা আরও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
×