ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপাতত জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২ অক্টোবর ২০১৮

আপাতত জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল বিএনপির

শরীফুল ইসলাম ॥ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের চাপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আপাতত দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। আর এ কারণে এবারই প্রথম জামায়াতকে ছাড়া রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে দলটি। তাই জামায়াতের নেতাকর্মীরা যোগ না দেয়ায় এবার বিএনপির সমাবেশে লোকসমাগম কম হয়েছে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে বিএনপি যে ৭ দফা আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়নে ধীরে ধীরে আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় দলটি। এ জন্য বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ দাবি আদায়ে ৩ ও ৪ অক্টোবর জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ এবং ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী শেষে আবারও কর্মসূচী ঘোষণা করবে বিএনপি। জানা যায়, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হতে গিয়ে বিএনপি চরম হোঁচট খায়। ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক বি চৌধুরী ছাড়াও বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক বলে পরিচিত কিছু বুদ্ধিজীবী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে চাপ আসে। অবশ্য আগে থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিএনপির ওপর জামায়াত ছাড়ার চাপ আসে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি নতুন কৌশল গ্রহণ করে। আর এ কৌশলের আগেই সম্প্রতি জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেখানে জানান হয় বাস্তবতার কারণে আপাতত জামায়াতের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখা হবে। তবে ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকবে এবং সঙ্কট কাটিয়ে উঠলে আবারও জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী পালন করা হবে। তবে জামায়াত এ বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের সিনিয়র নেতাদের ফাঁসি হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় থাকা জামায়াত বাস্তবতার কারণেই বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। তাই জামায়াতকে আপাতত দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও তারা প্রকাশ্যে কোন ক্ষোভ প্রকাশ করেনি। তবে বিএনপির এ সিদ্ধান্তে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে। জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে দলের কোন নেতাকর্মী না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল। তাই আগের মতো এবার আর ওই দলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে যায়নি। জামায়াতের কিছু উৎসুক কর্মী জনসভাস্থল পর্যবেক্ষণ করতে পাশে রাস্তায় গিয়ে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান করলেও একপর্যায়ে চলে যায়। আর এ কারণেই বিএনপি লাখো জনতার সমাবেশ ঘটানোর কথা বলে হাঁক-ডাক দিলেও বাস্তবে সেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজারের বেশি লোক হয়নি। অথচ আগে বিএনপির ডাকে এ ধরনের সমাবেশে অর্ধলক্ষাধিক লোকের সমাগম হতো। কোন কোন সমাবেশে লাখো জনতার সমাগমও হতে দেখা যায়। তবে এবারেরর সমাবেশে লোক সমাগম কম হওয়ার কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ বেশ ক’জন নেতা তাদের বক্তব্যে বলেছেন আরও আগে সমাবেশের অনুমতি দিলে লোক সমাগম আরও বেশি হতো। সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপির সামনে এখন আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। কারণ, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে থাকায় দলে এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ অবস্থা কাটানোর জন্যই মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ৭ দফা কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, তফসিলের আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহার এবং সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা, নতুন কোন মামলা না দেয়া, পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে কোন ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়াই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। সূত্র জানায়, ৭ দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নেবে বিএনপি। এর মাধ্যমে কিছু দাবি-দাওয়া আদায় করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গেলে ক্ষমতায় না গেলেও রাজনৈতিকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন। জানা যায়, বিএনপির সমাবেশ থেকে ১২ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের কাছে দলের ইমেজ বৃদ্ধি করতে। এসব প্রস্তাবের মাধ্যমে দল ক্ষমতায় গেলে কি করবে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। বিএনপির সমাবেশ মঞ্চ থেকে ঘোষিত ১২ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি ন্যায় ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। ২. রাষ্ট্রীয় প্রতষ্ঠানসমূহের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থয় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ৩. রাষ্ট্র ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। ৪. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। ৫. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা। ৬. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৭. কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও অধিকতর কার্যকর করা। ৮. সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা। ৯. সকলের সাঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়Ñ এই মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক এবং সৎ প্রতিবেশী সুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। ১০. কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া এবং কোন জঙ্গীগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করতে না দেয়া। ১১. ক) নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি নির্ধারণ ও আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা এবং সকলের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার-ভাতা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্যবীমা চালু, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা। খ) স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জীবনমুখী শিক্ষানীতি চালু করা, প্রযুক্তিÑবিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মানব সম্পদের উৎকর্ষ সাধন করা, জাতীয় উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ.) তৈরি পোশাক শিল্পের অব্যাহত উন্নয়ন এবং শিল্প ও রফতানি খাতকে বহুমুখী করা, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নয়নের ধারাকে গ্রামমুখী করা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ ও তাদের আধুনিক চিন্তা চেতনাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষা, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রধিকার দেয়া। ১২. সকল প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐক্যমত গঠন করা। এদিকে প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল গ্রহণ করা হলেও বাস্তব কোন অবস্থাতেই জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবে না বিএনপি। তাই কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ২০ দলীয় জোটে জামায়াত রেখেই বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটি। ২০ দলীয় জোটের সর্বশেষ বৈঠকেও বিএনপির পক্ষ থেকে জোটসঙ্গীদের এ অবস্থানের কথা জানানো হয়। বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে গিয়ে বার বার হোঁচট খাওয়ার পর এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক রহমানের মতামত নেন দলের ক’জন সিনিয়র নেতা। তারা ২০ দলীয় জোট ঠিক রেখেই জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এ পরিস্থিতিতে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর জোট গঠনে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হয়। তবে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী নেতারা জামায়াত সম্পর্কে নেতিবাচব বক্তব্য রাখার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ না করায় বৈঠকে উপস্থিত জামায়াতের প্রতিনিধি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জামায়াত ছাড়ার জন্য বিএনপির ওপর ঘরে-বাইরে চাপ থাকলেও ভোট ব্যাংকের কথা বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কিছুতেই এ দলটির সঙ্গ ত্যাগ না করার পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলার কৌশল নেয় বিএনপি। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাঁকজমক সমাবেশের আয়োজন করেন জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করে বিএনপি যোগ দেয়ায় ওই সমাবেশ বয়কট করে আগে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ। যুক্তফ্রন্ট নেতা ও সমাবেশের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও বয়কট করতে পারেন এমন পূর্বাভাস পেয়ে আগের দিন রাতে তার বাসায় ছুটে যান বিএনপির ৩ সিনিয়র নেতা। অতীত কর্মকা-ের জন্য বি চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে সমাবেশে যোগ দিতে রাজি করান তারা। বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের ডাকে সমাবেশে যোগ দিলেও বাম জোটের নেতা জোনায়েদ সাকী ও যুক্তফ্রন্ট নেতা বি চৌধুরী জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। বি চৌধুরী স্পষ্ট করেই বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোন ঐক্য হবে না। বি চৌধুরীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়েই ‘জাতীয় ঐক্য’ অনিশ্চত হয়ে পড়ে। তারপরও বিএনপি এই ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গোপনে বিভিন্ন মহলের কাছে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকে। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্ত ফ্রন্টের বৈঠকে এখনও জামায়াত ত্যাগের ঘোষণা না দেয়ায় বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে বি চৌধুরী বিদ্রোহ ঘোষণা করার পর বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে নতুন সঙ্কটের মুখোমুখি হয় বিএনপি। আর এ কারণেই তাদের খুশি করতে বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিয়ে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ করে। তবে এ সমাবেশের পর এটা প্রমাণ হয় জামায়াত ছাড়া বড় সমাবেশ করতে অক্ষম বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, দেরি করে অনুমতি দেয়ায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে লোকসমাগম কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিকরা সমাবেশে যোগ দিলে স্বাভাবিকভাবেই লোকসমাগম কিছু বেশি হতো। তবে বিএনপি নিজস্ব ক্ষমতায় কর্মসূচী এগিয়ে নিতে চায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
×