ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ৯ কোম্পানি ॥ বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২ অক্টোবর ২০১৮

দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ৯ কোম্পানি ॥ বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক

ফিরোজ মান্না ॥ গাজীপুর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে দেশী-বিদেশী ৯টি প্রযুক্তি কোম্পানি। মোবাইল, ল্যাপটপ, কমিউনিকেশন ডিভাইস, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, আইওটি, বিপিও, ট্রেনিং সেন্টার, ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন আইটি পণ্য তৈরি করবে তারা। আর এসব পণ্য তৈরির জন্য ২৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর পৃথক চুক্তি সই হয়েছে। আইসিটি খাতে বেসরকারীভাবে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রবি আজিয়াটা, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেকট্রনিক, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাসডাক টেকনোলজি ও জেআর এন্টারপ্রাইজ এই কোম্পানিগুলো পৃথক কারখানা তৈরি করবে। কোম্পানিগুলোকে ইতোমধ্যে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাইটেক পার্কে আগামী ৪০ বছর বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন তারা। কয়েকটি কোম্পানি পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। চুক্তিতে ২০ দশমিক ৫০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয় ৯টি কোম্পানিকে। সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, আইওটি, বিপিও, ট্রেনিং সেন্টার, ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা সহজেই কাজের সুযোগ পাবেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমাদের দেশের তরুণরা বিশ্বের মধ্যে মেধাবী। এই তরুণ সমাজের হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে। আমি একবার একটা সিম্ফোনির কারখানায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি সবাই বাংলাদেশের তরুণ। প্রথমে মনে করেছিলাম, সবাই হয়ত বিদেশী হবে। একটি মেয়ে সেখানে কঠিন ডিভাইস তৈরি করছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোন বিষয়ে পড়েছ। সে বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। এতেই বোঝা যায় বিষয় কোন ফ্যাক্টর নয়। সবাই এখানে কাজ করতে পারবে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস বানিয়ে রফতানি করতে পারব। আমি মনে করি দেশী-বিদেশী এই ৯ কোম্পানিতে দেশের ২৫ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আবার অনেকেই বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হয়ে বের হতে পারবেন। সরকারের ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে দেশ পুরোপুরিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। আমাদের তরুণ-তরুণীরা সরকারের লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকার দেশে আইসিটি সেক্টরকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই সেক্টরে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে নানা ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার তথ্যপ্রযুক্তিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০১৮ সালের নেয়া এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। এখন ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখে বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী বা মানব সম্পদ তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছেন। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশের এমন কোন ইউনিয়ন থাকবে না যে, যেখানে কানেক্টিভিটি যাবে না। এ বছরের মধ্যে সারাদেশ কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। আমরা ইতোমধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। দেশের সকল ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। এর বাইরে বেসরকারী উদ্যোগেও আইসিটি উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। দেশের সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। এ বছরের মধ্যে প্রকল্পটির অর্ধেক কাজ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, হাইটেক পার্কে যে ৯টি কোম্পানি বিনিয়োগ দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে আইসিটি পণ্য তৈরি করবে। এখানে দেশের ২৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে দেশের বেকারত্ব অনেকাংশে কমবে। আরও কিছু কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশী-বিদেশী যত বিনিয়োগ বাড়বে দেশের বেকারত্ব তত দূর হবে। দেশে আইসিটি খাতে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। বিনিয়োগকারীরার নিরাপদে এই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এমন দিন আসবে হাইটেক পার্কের এক খ- জমিও পড়ে থাকবে না। পানি, বিদ্যুত, গ্যাসসহ সব সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। এখানে নতুন করে কোন কিছুই করতে হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে সব কিছু করেই রাখা হয়েছে। এখন শুধু বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থান করবে।
×