ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাশফুল

প্রকৃতির অপরূপ শোভা, সব বয়সী মানুষের মনে দোলা দেয়...

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ অক্টোবর ২০১৮

প্রকৃতির অপরূপ শোভা, সব বয়সী মানুষের মনে দোলা দেয়...

বাবু ইসলাম ॥ প্রকৃতিতে এখন শরতকাল, এরপর হেমন্ত। শরত, হেমন্তে সাদা মেঘপুঞ্জ পেঁজো তুলোর মতো আকাশে ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য ভাবুক মানুষের মনে দোলা দেয়। যমুনা নদীপথে রঙিন কাগজে সাজানো ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে ছৈতোলা নৌকায় নববূধর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার দৃশ্য দেখে চরের কাশফুলগুলোও যেন মৃদু হেসে দোল খেতে থাকে। শরতে কিছু সময় রোদের ঝলকানি, তারপর মেঘের কালো ছায়া। কখনও রোদ আবার কখনও বৃষ্টি, এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ ভালবাসা। আকাশে রঙ ছিটানো মেঘ আর রোদের লুকোচুরি। যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কাশফুল রমণীর খোলা চুলের মতো দখিনা বাতাসে দোল দেয়। এই শরতের ভোর বেলায় সবুজ দূর্বা ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু শৈশবের সেই খেলার সাথী বালিকা প্রিয়তমার কথাটি মনে করিয়ে দেয়। শুধু কি তাই, ভাদ্র মাসের পাকা তালের মন মাতানো ঘ্রাণ নতুন ধানের তৈরি পিঠা, তালের রসের পায়েসের কথা শরত এলেই মনে পড়ে। শিউলি ফোটা ভোরে অন্তর জুড়ে স্নিগ্ধতার ছায়া বিছিয়ে রাখে শরত। প্রকৃতির এক অপূর্ব শোভা কাশফুল। এ সময় কৃষকের ধানক্ষেত ফসলে সবুজ সমারোহে থাকে পূর্ণ। নদীতে জাল বিছিয়ে জেলেরা মাছ ধরার জন্যও প্রস্তুত থাকে। শরতকাল নিয়ে বাংলা সাহিত্যর কবি ও শিল্পীরা অনেক কাব্য ও গান রচনা করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, গেঁথেছি শেফালি মালা, নবীন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা। এসো হে শারদ লক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে, নির্মল নীলপথে, বক শালিকেরাও গিয়েছে এই পথে’। রবি ঠাকুরের কবিতার ‘কাশের গুচ্ছ’ যমুনা, করতোয়া, ফুলজোড়, বড়ালসহ ছোট বড় নদীরপাড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশফুল মৃদু বাতাসে দোল খায়। সিরাজগঞ্জের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা, করতোয়া, ফুলজোড়, বড়ালসহ ছোট বড় নদীরপাড়ে এসব কাশফুলের সৌন্দর্য কাব্য সৃষ্টির খোরাক যোগায়। সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ফুটেছে প্রকৃতির কাশফুল। ষড়ঋতুর ভাদ্র-আশ্বিন মাস শরতকাল। এরপরই শুরু হেমন্ত। এ সময়ের নীল আকাশের নিচে সাদা মেঘের আনাগোনায় ফুটে ওঠা প্রকৃতির এই ফুল সব বয়সী মানুষের মনে দোলা। সিরাজগঞ্জের যমুনা, করতোয়া, ফুলজোরসহ বিভিন্ন উপজেলার নদীর কূল আর চরাঞ্চলের মাঠে ময়দানে এখন এই ফুলের সমারোহ। কবি গুরুর বর্ণনার কাশের গুচ্ছ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে শরতকালের ফুটে উঠা কাশফুলের শুভ্রতায়। বিকেলে যমুনার পাড়ে নৌকায় উঠে দূরে চরের কাশবনে ঘুরে বেড়াতে যেয়ে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে উঠে। চরের নরম বালিয়াড়ির কাদা পানিতে পা রেখে আলতো ছোঁয়ায় কাশ ফুলের পরশ নেয়। মৌমাছিরাও সুর তুলে ঘুরে বেড়ায়। দূরের নীল আকাশে শুভ্র মেঘপুঞ্জ পেঁজো তুলোর মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে অথবা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসো হে শারদ লক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে, নির্মল নীলপথে, বক শালিকেরাও গিয়েছে এই পথে’ রবীন্দ্রনাথের কবিতার এই অংশটুকু মনে করিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের। অনেকের মনে দোলায় দেয় শরতের কাশফুলে বক, শালিকের আনোগোনার কথা। কাজীপুরের মেঘাই ঘাটে বেড়াতে এসে নদীর কূলে প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে ওঠা কাশফুল দেখে পার্শ্ববর্তী গান্ধাইলের কলেজপড়ুয়া আলেয়ার অনুভূতি ‘পরিচ্ছন্ন সাদা মেঘযুক্ত নীল আকাশের নিচে ফুটন্ত কাশফুল যেন অপরূপ মোহময়। আকাশের রঙের সঙ্গে ফলের রং ও বদলাচ্ছে। বাতাসের দোলনায় মানুষের মন ও দোলা দিচ্ছে। প্রকৃতির এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাইতো কবিরা এই শরতকে ঘিরে রচনা করেছেন অনেক অনবদ্য কবিতা।
×