ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ফল শেষ পর্যন্ত বিএনপির ঘরেই যাবে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২ অক্টোবর ২০১৮

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ফল শেষ পর্যন্ত বিএনপির ঘরেই যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে আসা সিপিবি এবার কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর নতুন নির্বাচনকালীন জোট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বাম দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, নানামুখী আদর্শের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ফল শেষ পর্যন্ত বিএনপির ঘরেই যাবে, ফলে জনগণের কোন লাভ এতে হবে না। সোমবার সিপিবি এক সংবাদ সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়, সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তোলে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান সিপিবি সভাপতি সেলিম। তিনি বলেন, তারা যেসব দাবি করেছে, আমরা আশা করি এসব দাবিতে তারা রাজপথে থাকবে। প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনার যাওয়ার কথা বলে দুই ফুট এগিয়ে আবার ফেরত যাবে না। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরুর মধ্যে একজোট হয়েছেন কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গত ২২ সেপ্টেম্বর তাদের এক সমাবেশে বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গী দলের নেতারাও যোগ দেন। সিপিবি নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকিও যোগ দিয়েছিল ওই সমাবেশে। সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, মহানগর নাট্যমঞ্চে যারা উপস্থিত ছিল, তার ভেতরে এমন লোকও ছিল তিনি হেফাজতের ঢাকা সিটির জেনারেল সেক্রেটারি, ঢাকায় যখন হেফাজত তাণ্ডব চালায়, তখন সিপিবি অফিসে আগুন দেয়ার অভিযানকে পরিচালনা করেছিল। তারা এ টু জেড ভাল-মন্দ নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে সেই ফসল বিএনপির ঘরে এনে দেয়া, প্রকারান্তরে এটাই হবে ফল। তারা কেবল অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দাবি উত্থাপন করেনি, তারা বিএনপির সঙ্গে পোলারাইজেশনের প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করতে চায়। নিজেদের এক সময়ের জোট ১১ দলের শরিক গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনের ২০০৭ সালের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন সেলিম। তিনি বলেন, কামাল হোসেন ২০০৬ সালে ‘হাওয়া ভবনের দুঃশাসনের’ বিরুদ্ধে একই কথা বলেছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে, দরকার হলে শয়তানের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে বলেছিলেন তিনি। তখন ২৩ দফা করেছিল, পরে তা আর হয়নি। আমরা এ ভুল করব না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এই দুই দুঃশাসনের কারও ঘরেই আমরা জনগণের সংগ্রামের ফসল দেব না, নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন সিপিবি সভাপতি। তিনি বলেন, মানুষের কাছে দৃশ্যমান হলো লুটপাট-ভাগ বাটোয়া নিয়ে দুইটা গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব। একটা আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে, আরেকটা বিএনপিকে কেন্দ্র করে। ফুটন্ত কড়াই থেকে বাঁচার জন্য জ্বলন্ত চুলায় ঝাঁপ দিলে সমস্যার সমাধান হবে না মন্তব্য করে সেলিম বলেন, এক দুঃশাসনের অবসান হবে, আরেক দুঃশাসনের শুরু হবে। গত তিন দশক ধরে আমরা এই অবস্থায় আছি। তিনি বলেন, যখন যারাই ক্ষমতায় থাকে মানুষ হতাশ হয়। তখন মানুষের ক্ষোভের ফসলটা একবার আওয়ামী লীগ নিয়ে যায়, আরেকবার বিএনপি নিয়ে যায়। এই ‘দুঃশাসনের দুষ্টুচক্র’ ভাঙতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের হতাশা এবং ক্ষোভ-বিক্ষোভ পুঁজি করে এক দুঃশাসক আরেক দুঃশাসককে প্রতিস্থাপন করার খেলা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসেন। এটা ভাঙ্গার জন্য বিকল্প শক্তিকে জোরদার করুন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের দাবি তুলে ধরে সিপিবি সভাপতি বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে ইলেকশন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার দল নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচন কমিশন আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, একে পুনর্গঠন করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং নির্বাচনে টাকার খেলা ও কারসাজি বন্ধ করতে হবে।’ ঢাকার পুরানা পল্টন মুক্তিভবনের সিপিবির কার্যালয়ে ‘দুঃশাসন হঠাও, গণতন্ত্র বঁাঁচাও- দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোল’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বানে আগামী শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম।
×