ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২ অক্টোবর ২০১৮

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন বাংলা ও বাঙালীর চিরায়ত ঐতিহ্যই শুধ নয়, বিশ্বজনীনতার অপার সম্ভাবনার সঙ্গে আধুনিকতার নির্মাল্যÑ সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ গড়ার এক অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। শ্যামল বাংলার নৈসর্গিক আবহে শান্তিনিকেতনের সীমাহীন সুষমা পুরো অঙ্গনটিকে যে মাত্রায় নিয়ে যায় তা কেবল সুশোভিত গ্রামবাংলার সমৃদ্ধ বৈভবই নয় পুরাকালের তপোবন আশ্রমের এক অভাবনীয় রূপশৌর্য। সৌন্দর্যের এমন অনবদ্য মিলনকুঞ্জের সঙ্গে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত হয় কবির পর্বতপ্রমাণ সৃজনী প্রতিভা। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতায় যুগান্তকারী কর্মপরিকল্পনা সবচেয়ে বেশি করে আছে তার আদর্শিক চেতনা এবং সময়কে ধরার এক অনমনীয় বোধ। সব মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের এই শান্তিনিকেতন সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মহাসম্মেলনে এক অভূতপূর্ব জ্ঞান সাধন কেন্দ্র। সেই আলোকিত জগতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৈরি করলেন আরও এক নতুন ঐক্যতান। অবিভক্ত বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতিই শুধু নয় লড়াকু বঙ্গদেশের এক ঐতিহ্যিক পথপরিক্রমা, যেখানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক বাংলার সাড়া জাগানো সমস্ত ঘটনা পরম্পরাকে এক নজর দেখার সুযোগ এসে যায়। ‘বাংলাদেশ ভবন’ শেখ হাসিনার এক মহাপরিকল্পনা, যা বর্তমান দুই বাংলার সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে নতুন সম্ভাবনার দ্বারে পৌঁছে দেয়। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন প্রাকৃতিক সম্ভারের পীঠস্থানই শুধু নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অপূর্ব মিলনযজ্ঞও। সেই মিলনস্রোতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ যেন এক উদ্দীপ্ত সাংস্কৃতিক সরোবর। শুধু শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন বললে সবটা বলাই হয় না। কারণ কবির নিজ হাতে গড়া ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ চত্বরে এই স্থাপনাসৌধ তার মহিমা নিয়ে সর্বসাধারণের দর্শনীয় স্থান হিসেবে শোভা বর্ধন করে যাচ্ছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সেও এক ঐতিহাসিক ঘটনা পরম্পরার অবিস্মরণীয় জ্ঞান সাধনার উন্মুক্ত মিলন কেন্দ্র। যেখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসা আবহমান বাংলার সঙ্গে পরিচয় করানোর পাশাপাশি বিশ্ব দরবারেও এর স্থান অবারিত করার মহৎ উদ্যোগ সন্নিবেশিত হয়। কবির জীবনের শিক্ষা কার্যক্রমে ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণীয় প্রভাবে যতই আধুনিক হোক না কেন নিজের কাছে এই পাঠ্যক্রম কর্মসূচী কখনও সুখকর ছিল না। শিক্ষার্থী জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁকে সব সময়ই তাড়িত করত। তাঁর মনে হতো বিদ্যার্জনের জন্য যে উন্মুক্ত পরিবেশ আর জ্ঞান সাধনার প্রয়োজন এই শিক্ষা ব্যবস্থায় তার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আর যথার্থ জ্ঞানচর্চার মুক্ত পরিবেশ তৈরির আদর্শিক বোধ থেকে এমন এক শিক্ষা কার্যক্রমের নির্দেশনা অনুভব করতে লাগলেন যেখানে শুরু থেকেই কচিকাঁচা শিশু-কিশোররা মনের আনন্দে আর মেধা ও মনন বিকাশে একটি অবাধ ও মুক্ত জ্ঞানচর্চার পরিবেশ লাভ করতে পারে। শুধু বিদ্যাপীঠই নয় জ্ঞান তপস্যার এক পূর্ণ তীর্থস্থানও শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক সাহচর্য দেবে। সেখান থেকেই কবির এক নতুন শিক্ষা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিক্ষা-সংস্কৃতি কর্মযজ্ঞের যে মহৎ আযোজন শুরু করেছেন, শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন তারই এক সম্প্রসারিত কর্মপরিকল্পনা। স্মরণ করা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশ থেকে দেশান্তরে যেভাবে তাঁর মহতি উদ্যোগগুলো বিস্তৃত করেছেন, বাংলাদেশ ভবন সেই সম্ভাবনারই নতুন সংযোজন। আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শেখ হাসিনার যুগান্তকারী এই কীর্তি দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনে যে ঐতিহাসিক অবদান গ্রথিত করল তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখবে বললে অত্যুক্তি হয় না। ভারতীয় রুপীতে প্রায়ই ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনটি অত্যাধুনিক স্থাপনার এক অপূর্ব নিদর্শন। তবে ভবনটির বিশেষ আকর্ষণ মিলনায়তন, জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারের পরিকল্পনায় শুধুমাত্র জাদুঘরটিকেই সাজানো-গোছানো হয়েছে। মিলনায়তন এবং পাঠাগার কক্ষ এখনও সেভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। তবে জাদুঘরটি সত্যিই অভিভূত আর বিস্মিত করার মতো এক অভাবনীয় পর্যায়ক্রমিক বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের হরেক রকম নিদর্শনের সমারোহ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পিত এই নতুন স্থাপনাটির উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য বিশ্বভারতীর সঙ্গে একীভূত। ফলে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্ট এই মহৎ বিদ্যাপীঠের আদলেই তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ভবন। যেভাবে শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞানপিপাসাই মেটাবে না, আপন সংস্কৃতির বেড়াজালকে প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করবে। জ্ঞানচর্চাকে শৈল্পিক সুষমায় অভিষিক্ত করতে গেলে সাংস্কৃতিক বলয়কে নিবিড়ভাবে সন্নিবেশিত করতে হয়। জ্ঞান এবং শৈল্পিক সত্তার বিকাশ একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক। ঐতিহ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সন্নিবেশিত করে রবীন্দ্রনাথ যে শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন করে বোলপুর গ্রামাঞ্চলে বিশ্বভারতীর মতো একটি বিদ্যার সর্বোচ্চ পাদপীঠ তৈরির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেন, তা এখনও তাঁর মহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে। বিশ্বভারতীর জাদুঘর যেমন সমৃদ্ধ, ঐতিহ্যিক এবং আধুনিকতার গুরুত্বপূর্ণ বলয়কে দর্শনীয় করে তোলে, একইভাবে বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘরকেও সে মর্যাদায় যেতে গেলে বিশ্ব পরিসরের আরও বহু নিদর্শন উপস্থাপন করা বিবেচনায় আনা সঙ্গত। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তার সঙ্গে রাবীন্দ্রিক সুবিশাল সৃজন পর্বে সন্নিবেশিত জাদুঘরটি সত্যিই গুণমুগ্ধ দর্শনার্থীদের এক অন্যরকম আনন্দমেলায় অবগাহন করায়, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই কথা বলা আবশ্যিক যে, এই মহৎ কর্মপরিকল্পনা দুই বাংলার সম্প্রীতির বন্ধন মজবুতই করবে না, সাংস্কৃতিক আদান প্রদানেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ ভবনে ঢুকতেই প্রথম দর্শনে যিনি নজর কাড়েন, তিনি আর কেউ নন জাতির জনক, স্থপতিই শুধু নন, আবহমান বাংলার অন্যতম মহানায়কের ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ২৫ মে ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা এই ভবনটিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিার ছবি শোভা বর্ধন করছে। সঙ্গে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ছবিও দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ঐতিহ্য-নিবিড় এই নতুন ভবনটি এখনও সেভাবে দর্শনার্থীর নজরে এসেছে কিনা, সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে। পর্যটন শিল্পের আনুষঙ্গিক পর্যায় অনুধাবন করে ঐতিহ্যিক স্থাপনাকে যেভাবে আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন করা বাঞ্ছনীয় সেখানে আরও কিছু সংযোজন করা যায় কিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে আমলে এনে বিশেষ নজর দিলে ভবনটির আরও শ্রীবৃদ্ধি হবে। রবীন্দ্রনাথের আদর্শ আর সযতেœ গড়া বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ফলে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক জানা-অজানা তথ্য ও নিদর্শন ভবনটির গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘরটির শুরুতেই আছে ওয়ারী বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার নিদর্শন। পুরাকালের সমস্ত ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে অত্যন্ত সুসংবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে। আবহমান বাংলার হরেক শৈল্পিক সুষমাকে দর্শনার্থীর নজরে আনতে গিয়ে মৃৎশিল্প, বয়ন ও তাঁত শিল্পসহ সমকালের অনেক হস্তচালিত কুটিরশিল্পকে তুলে ধরা হয়। বুঝতে কষ্ট হয় না সাংস্কৃতিক বৈভবে আমরা এমন এক সমৃদ্ধ জাতি, যারা কিনা কাল থেকে কালান্তরে ঐতিহ্যম-িত ঐশ্বর্যকে বহন করে চলেছে। প্রাচীন বাংলা আর মধ্যযুগের বাংলা সময়ের আবর্তনে ফারাক বিবেচিত হলেও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে রয়েছে এক অবিমিশ্র মিলনযোগ। আর ঊনবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বলয়কে সেই মিলনযজ্ঞ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে বাংলা ও বাঙালী তার মাহাত্ম্য হারাবে। আর রবীন্দ্রনাথ তো ছিলেন চিরন্তন বাংলার মহাসম্মিলনের মহানায়কই শুধু নন, বিশ্বজনীনতার সম্প্রসারিত সময়েরও বলিষ্ঠ কর্ণধার। প্রসঙ্গক্রমে এসেই যার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কথা। আবহমান বাংলার এই কৃতী প্রাণপুরুষ ছিলেন ঐতিহ্যের বার্তাবাহক, ইতিহাস ও সংস্কৃতির পর্যায়ক্রমিক ধারার একনিষ্ঠ সাধকই, নতুন বাংলাদেশ গড়ার এক কীর্তিমান মহানায়ক। রবীন্দ্রতীর্থ ভূমি শান্তিনিকেতনের এই বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণ যেভাবে যুগ-যুগান্তরের কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে সমুজ্জ্বল করেছে, বাংলাদেশ ভবনও ঠিক সেই ধারায় তার অভিগামিতাকে অবারিত করেছে। সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে দর্শকের সামনে হাজির করতে পর্যায়ক্রমিক ঘটনায় ঐতিহাসিক যোগসাজশকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা হয়েছে। ফলে শুধু প্রাচীনকালই নয়, সুলতানী আমল থেকে ব্রিটিশ ভারতের যুগপরিক্রমায় প্রয়োজনীয় নিদর্শন পর্যটকদের আনন্দের অনুষঙ্গ হয়েছে। শুধু কি আনন্দযোগÑনিজস্ব ঐতিহ্যিক পরিম-ল যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে তাতে চিরায়ত বাঙালীর গৌরব যে মাত্রায় গিয়ে পৌঁছায়Ñ সেখানে ঐশ্বর্য সমৃদ্ধ বাংলার মুখ-দর্শন এক অভাবনীয় অনুভব। যে রূপ যুগে যুগে সৃজনশীল ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে, একইভাবে পর্যটকদের বিস্ময় আর আনন্দের খোরাক যুগিয়েছে। শুধুই কি তাই? সম্পদশালী বাংলা বার বার বিদেশী শাসক দ্বারা আক্রমিতই হয়নি, শাসিতও হয়েছে। ব্রিটিশ ভারতের লড়াকু ব্যক্তিত্বের ছবিও দেয়া আছে যারা ঔপনিবেশিক সরকারের অবিচারের শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি জ্ঞানী-গুণী-বিজ্ঞজন যাঁরা বাংলার ঐতিহ্যিক পরিম-লকে বিশুদ্ধতার আবহে ভরিয়ে দিতে জ্ঞানচর্চায় নিজেদের নিবেদন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপ্লবী সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতাকেও দর্শনার্থীরা দারুণভাবে উপলব্ধি করবেন। একটা বিরাট অংশ জুড়ে এই জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথের সৃজনকর্ম এবং শৈল্পিক সুষমাকে নানামাত্রিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। যাতে পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রনাথ সবার সামনে যথার্থভাবে উন্মোচিত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামালের মতো যুগস্রষ্টা অগ্রনায়করাও স্থাপনা-নিদর্শনে জায়গা করে নিয়েছে। ’৪৭-এর গুরুত্বপূর্ণ দেশ বিভাগ দর্শনার্থীর নজর কাড়বে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সাংস্কৃতিক চেতনায় যে সব নিদর্শন উপস্থাপিত হয়েছে তাতে করে রক্তস্নাত অধ্যায় আবারও সামনে চলে আসে। ’৬০-এর দশকের আন্দোলন-সংগ্রাম ধারাবাহিকভাবে নির্দেশিত হয়েছে। বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে ’৬৬-এর ছয় দফা কর্মসূচী, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন শেষ অবধি ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামও জাদুঘরে পর্যায়ক্রমিক নিদর্শন হিসেবে রক্ষিত আছে। ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সন্নিবেশিত হয়েছে। ’৭৫-এর রক্তপ্লাবন জাদুঘরের শুদ্ধ আবহকে শোকাভিভূত করে তোলে। জাদুঘরটি সত্যিই ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এবং দর্শনীয়। এক নজরে আবহমান বাংলাকে চেনারও এক অকৃত্রিম স্থাপনা নিদর্শন। পাশাপাশি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরটিও এক অনন্য ঐতিহ্যিক আধার, যেখানে শুধু রবীন্দ্রনাথই নন সামগ্রিক বাংলাকে তার আপন পরিম-লে দর্শকদের সামনে হাজির করে। শান্তিনিকেতনের শান্ত, স্নিগ্ধ, নির্মল, নৈসর্গিক পরিবেশের উন্মুক্ত স্থানে ‘বাংলাদেশ ভবন’ জ্ঞানচর্চার যে নতুন দিগন্ত খুলে দিল, তা বিশ্বভারতীর জন্য এক নতুন সংযোজনও বটে। একসময় এক ও অভিন্ন বাংলা মূল শেকড়ের সন্ধানে যেসব সাংস্কৃতিক বৈভবকে সম্প্রসারিত করে, সেখানে আত্মপরিচয় সন্ধানী সব বাঙালীর মধ্যে আসলে কোন ফারাক নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবোদ্যমে সেই একীভূত অনুভবকে আরও জোরদার করলেন। এ শুধু জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার আলো বিতরণই নয়, দেশীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করারও এক অনন্য মিলন সৌধও। অবিভক্ত বাংলার সমৃদ্ধ সময় আমরা অতিক্রান্ত করেছি। শুধু তাই নয়, অনেক ঐতিহাসিক গৌরবও হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। অবিমিশ্র মিলনের এমন দুঃসময়ে শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অবদান সময়ের প্রজন্মের জন্য বিশেষ জরুরি। কারণ সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প থেকে নতুন প্রজন্মকে মুক্ত করতে না পারলে সর্ববাঙালীর ঐক্য আর মিলনের সুর ধ্বনিত হবে না। রাবীন্দ্রিক চেতনাকে সর্বজনীনতায় রূপ দিলেন। বাংলা ও বাঙালীর গৌরবান্বিত ইতিহাসকে শিক্ষা-সংস্কৃতির অনুষদ করলেন। কবি নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা সৌধের পাশাপাশি বাংলাদেশ ভবন বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণকে যে মাত্রায় নিয়ে গেল, সে অভাবনীয় কর্মযজ্ঞ সময়ের দুর্বার মিছিলে সম্ভাবনার শুভযাত্রাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে। সবশেষে বলতে হয় এমন একটি ঐতিহ্যিক স্থাপনা, যা প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছা আর মহৎ কর্মযোগে সম্পন্ন হয়েছে, তা যেন যথার্থ মর্যাদায় টিকে থাকতে পারে। যার জন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিচর্যাই শুধু নয়, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ভবনের বাকি কাজগুলো যাতে নির্বিঘেœ সম্পন্ন হতে পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মিলনায়তন এবং গ্রন্থাগার দুটোর গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ কক্ষ নির্মাণ হলেও সাজানো-গোছানোর কাজ এখন অবধি শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ২০ কোটি ভারতীয় রুপী ব্যাংকে রেখে দেন, যার মুনাফা থেকে ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যার যাবতীয় খরচ ব্যয় করা যায়। কারণ আধুনিক বিশ্বের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসব দর্শনীয় স্থাপনাকে আরও সময়োপযোগী করা বিশেষ দায়িত্ব। লেখক : সাংবাদিক
×