ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২ অক্টোবর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার

(গতকালের চতুরঙ্গ পাতার পর) মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানে দেশের ভেতরে অবস্থান করা লোকেরা কি ভাবছেন কি তাদের মনোভাব স্বাধীনতা অর্জনে তারা একটা আশাবাদী এবং তারা কতটা দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি আশা করে কষ্টার্জিত স্বাধীনতার সুফল পাবে বলে ভাবছেন এসব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য সদ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তখন কয়েক যুবককে ডেকে আনালেন যারা তখনও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার উদ্দেশ্যে। তারা আমাদের সঙ্গে আলাপকালে যেসব সুখবর দিল সেটা ছিল খুবই আশার বাণী। তারা আমাদের জানাল যে হানাদার পাকবাহিনীর সদস্যরা ওই সময়ে তেমন একটা থানা সদর অফিসের বাইরে যেতে সাহস পেত না। কারণ থানায় কর্মরত বাঙালী পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা হানাদার পাকবাহিনীর আগামী কোন অভিযানের খবর জানতে পারলেই যে কোনভাবে ওইসব অঞ্চলে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্বেই খবর দিয়ে দিত। ফলে হানাদার পাকবাহিনীর নির্ধারিত স্থানে অভিযানে পৌঁছানোর পূর্বেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নানাদিক দিয়ে আক্রমণ করে তাদের ভীষণভাবে হতাহত করে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে বিজয় উল্লাস করত ফলে ওইসব অঞ্চলে অবস্থানরত স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা হানাদার বাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে তাদের দেয়া অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যোগ দিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর মাস এবং ওইসব ছেলের বক্তব্য ছিল যে তাদের এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে এটাই তখন ছিল স্বাভাবিক যুদ্ধ পরিস্থিতি। ফলে থানা অঞ্চলে পাকবাহিনীর সদস্যরা তখন ছিলই না বলে তাদের অভিমত। মেজর দত্ত আমাদের বার বার যে কথাটা বলতে চাচ্ছিলেন সেটা হলো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য হানাদার পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের যে শক্ত মনোবল প্রয়োজন সেটা আস্তে আস্তে হ্রাস করে দেয়ার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকার আরও বেশি শক্তিশালী ও কার্যকরীভাবে পরিচালনা করে মুক্তিযুদ্ধের চলমান অগ্রগতি ক্রমাগতভাবে তাদের কিছু করার জন্য হানাদার পাকবাহিনীকে প্রতিহত করার অভিযান আরও বেশি জোরদার ও ব্যাপক করা এ জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও বেশি দৃঢ় ও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাসমূহের খবরাখবর আরও বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার যে প্রচেষ্টা সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার পরিচালনার মাধ্যমে নেয়া হয়েছে। সেটা আরও বেশি কার্যকরী ও ব্যাপকভাবে চালিয়ে যেতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। চিৎকার করে জয়বাংলা বলে আমাদের যখন মেজর দত্ত বিদায় জানান তখন তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন দেখা হবে আগামী বছরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তার সঙ্গে পরের বছর ঢাকায় ঠিকই দেখা হয়েছিল এবং তখন তিনি লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে কর্মরত আর আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইএসপিআর পরিদফতরের প্রথম পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। সময়টা ছিল সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানী, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার এবং কয়েক সেক্টর কমান্ডারের চলমান সাইকোলজিক্যাল সাক্ষাতার নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে আলাপ-আলোচনা করে আলোচনার সারাংশ ও তাদের সুপারিশসমূহ সঙ্কলিত আমার নিজের হাতে লেখা প্রতিবেদনটি তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব মরহুম সামাদ সাহেবের হাতে হস্তান্তর করার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আমাকে জানালেন যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমাকে সঙ্গে করে তিনি কয়েকজন মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে যাবেন। আমাকে আলাপ করার বিষয়বস্তু ও প্রস্তাবলী নিয়ে তৈরি থাকার নির্দেশ ও দিলেন তিনি। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পরের সপ্তাহের প্রথম দিকে আমরা প্রথমে গেলাম তৎকালীন মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর অফিসে। আমাদের সময় দেয়া হয়েছিল আধা ঘণ্টার জন্য। তার কক্ষে ঢুকতেই তিনি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমাকে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের প্রধান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মন্ত্রী মহোদয় প্রতিরক্ষা সচিব মহোদয়ের সঙ্গে যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করলেন তাতে আমার মনে হলো যে তিনি সামাদ সাহেবকে খুব স্নেহ করেন এবং পছন্দও করেন অত্যধিক। মনে হলো তাদের পরিচয় অনেক দিনের। চলবে... লেখক : মুজিবনগর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী
×