ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিদের উড়িয়ে দিল স্বপ্না-মার্জিয়ারা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ১ অক্টোবর ২০১৮

 পাকিদের উড়িয়ে দিল স্বপ্না-মার্জিয়ারা

জাহিদুল আলম জয় ॥ যে কোন পর্যায়ের খেলাধুলায় পাকিস্তানকে হারানো অভ্যাসে পরিণত করেছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। দিনকয়েক আগে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে সরফরাজ আহমেদের পাকিস্তানকে হারায় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। মাস দেড়েক আগে সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানী মেয়েদের ১৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলার কিশোরীরা। এবার সাফ অনুর্ধ-১৮ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে আরেকবার পাকি মেয়েদের বিধ্বস্ত করেছে বাংলাদেশের তরুণীরা। রবিবার রাতে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রæপের ম্যাচে পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৮ মহিলা দল। অপ্রতিরোধ্য জয়ে ডাবল হ্যাটট্রিকসহ একাই ৭ গোল করেছেন সিরাত জাহান স্বপ্না। আর হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছেন আরেক ফরোয়ার্ড মার্জিয়া খাতুন। দুর্দান্ত এই জয়ে গ্রæপে এক নম্বর জায়গা দখলের পাশাপাশি সেমিফাইনাল খেলাও নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে পাকিস্তানকে ১২-০ গোলে হারিয়েছিল নেপাল। ফলে ‘বি’ গ্রæপ থেকে বাংলাদেশ ও নেপালের সেমি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বিদায়ঘণ্টা বেজেছে পাকি মেয়েদের। ম্যাচের শুরু থেকেই পাকি দুর্গে আক্রমণের ঢেউ বইয়ে দিতে থাকেন বাংলার মেয়েরা। সপ্তম মিনিটে ডি বক্সে জটলার মধ্যে পাস পেয়ে আলতো টোকায় ম্যাচের প্রথম গোল করেন মার্জিয়া খাতুন (১-০)। দশম মিনিটে সিরাত জাহান স্বপ্নার দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ১৩ মিনিটে আরেকটা দৃষ্টিনন্দন গোল করেন মার্জিয়া। সতীর্থের পাসে ডি বক্সের মাথা থেকে বাঁ পায়ের বুলেট শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি (৩-০)। ২২ মিনিটে আরও একটি দুরন্ত গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন মার্জিয়া। বামপ্রান্ত থেকে সংঘবদ্ধ আক্রমণে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন প্রতিশ্রæতিশীল এই স্ট্রাইকার। ৩০ মিনিটে পাকিদের জালে পঞ্চমবার বল পাঠায় বাংলার তরুণীরা। ডানপ্রান্ত দিয়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণে সতীর্থের পাসে পা লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন সিরাত জাহান স্বপ্না (৫-০)। এটি সিরাতের দ্বিতীয় গোল। দুই মিনিট পর বাংলাদেশের আক্রমণ রুখতে ডি বক্সের ফাউল করলে পেনাল্টি পায় কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। স্পট কিক থেকে ছয় নম্বর গোলটি করেন শিউলি আজিম। ৩৭ মিনিটে ফেবারিট বাংলাদেশের হয়ে নিজের গোলের খাতা খোলেন অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। বাঁপ্রান্ত দিয়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণে পাকিদের ডি বক্সে বল আসে। এরপর জটলার মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়ে গোল করেন এই মিডফিল্ডার (৭-০)। ৪৪ মিনিটে মার্জিয়ার পর হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সিরাত জাহান স্বপ্নাও। সংঘবদ্ধ আক্রমণে ডি বক্সের মধ্যে আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়ান তিনি (৮-০)। স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলার দামাল মেয়েরা। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ১৩টি প্রচেষ্টা চালিয়ে আটবারই সফল হয়। বিরতির পরও পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতায় আরও ৯ গোল আদায় করে নেয় তারা। তবে বিরতির পর প্রথম গোলের জন্য ১৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় মৌসুমীর দলকে। অবশেষে ৫৮ মিনিটে আঁখি খাতুন গোল করেন (৯-০)। ৬২ মিনিটে আরও এক গোল আদায় করে লাল-সবুজের দেশ। কর্নার থেকে আসা বল দেয়া নেয়া করে ডি বক্সে আসে। এরপর প্লেসিং শটে জালে জড়ান আগেই হ্যাটট্রিক পূরণ করা সিরাত জাহান স্বপ্না (১০-০)। এটি সিরাতের চার নম্বর গোল। ৬৮ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। এবারও স্পট কিক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন শিউলি আজিম (১১-০)। ৭১ মিনিটে সংঘবদ্ধ আক্রমণে পায়ের ছোঁয়া লাগিয়ে দুর্দান্ত গোল করেন মার্জিয়া (১২-০)। এটি তার চতুর্থ গোল। বাকি সময়েও মুড়ি মুড়কির মতো গোল করতে থাকেন বাংলার তরুণীরা। ৭৩ মিনিটে সিরাত জাহান স্বপ্না নিজের পঞ্চম ও দলের ১৩ নম্বর গোল করেন। পরের মিনিটে কৃষ্ণা রানী সরকার ১৪ নম্বর গোল করেন। ৭৬ মিনিটে সিরাত স্বপ্না আবারও পাকিদের জাল কাঁপান। এটি বাংলাদেশের ১৫ নম্বর আর সিরাতের ষষ্ঠ গোল। ৮৭ মিনিটে বদলি হিসেবে নেমে স্কোরশিটে নাম লেখান তহুরা খাতুন (১৬-০)। ম্যাচের শেষ মিনিটে আবারও পাকিস্তান গোলরক্ষককে কাঁদিয়ে ছাড়েন সিরাত জাহান স্বপ্না। নিজের সপ্তম গোল করে দলের ১৭তম গোলে অবদান রাখেন তিনি।
×