ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘একটা টুর্নামেন্ট জেতা জরুরী’

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১ অক্টোবর ২০১৮

‘একটা টুর্নামেন্ট জেতা জরুরী’

মিথুন আশরাফ ॥ হৃদয় জয় করে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। মাথা উঁচু করেই দেশে এসেছেন। এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি। তবে ভারতকে যেভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে গৌরব নিয়েই দেশে ফিরেছে মাশরাফিবাহিনী। সম্মান অনেকগুণ বেড়েও গেছে। কিন্তু একের পর এক ফাইনাল যে জেতা হচ্ছে না। ফাইনালে গিয়ে শেষ ওভারে বারবার হারতে হচ্ছে। এই হার থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় হিসেবে অধিনায়ক মাশরাফি মনে করছেন, একটা টুর্নামেন্ট জেতা খুব জরুরী। তা হলেই এমন বেড়াজাল থেকে বের হওয়া যাবে। শনিবার রাতে দেশে ফিরে মাশরাফি বলেছেন, ‘হচ্ছে না কোন্ কারণে। আমার কাছে মনে হয়, একবার পারলে জিনিসটা সহজ হতো। এখানে মানসিক ব্যাপারগুলো কাজ করে। এই বাধা পার করার জন্য একটা টুর্নামেন্ট জেতা খুব জরুরী। তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে বড় বড় টুর্নামেন্ট জেতা সম্ভব হবে।’ তামিম ইকবাল ছিলেন না। সাকিব আল হাসানও ছিলেন না। এরপর দলের ক্রিকেটাররা যেভাবে মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা অসাধারণ। পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে ভারতকেও চাপে রাখে বাংলাদেশ। জিততে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করতে হয়েছে ভারতকে। এই মানসিকতা মাশরাফিকে অনেক আশাবাদী করছে। তবে তা ধরে রাখতে হবে সামনেও। তাও জানিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। বলেছেন, ‘অন্যবারের তুলনায় এবার তাদের (খেলোয়াড়দের) শক্ত দেখেছি। এটা ভাল দিক। সবাই শেষ পর্যন্ত লড়েছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জেতার ইচ্ছেটা ছিল। আমি কেন ওদের নিজেদেরও এটা নিয়ে গর্ববোধ করা উচিত। সবাই উপলব্ধি করেছে কে কোথায় কি করতে পারত। এটা গুরুত্বপূর্ণ। (আমাদের) ক্রিকেট এগিয়ে যাবে, সামনে বড় বড় টুর্নামেন্ট আছে। সামনে বিশ্বকাপ আছে। বড় দুই-তিনটা সিরিজ আছে। চেষ্টা করব, এই ভুল সামনে যেন না হয়।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এর আগে (সাকিব-তামিম) ওরা থাকার পরও জিততে পারিনি (এশিয়া কাপ)। ওরা না থাকার পরও এবার যেভাবে লড়েছি এটা অনেক বড় ব্যাপার। সামনে ওরা যোগ হলে চিত্রটা অন্য রকম হতে পারে। একেবারে হতাশ নই। হতাশ হব সামনে যদি দলের ভেতর এই স্পিরিট না দেখতে পাই। যে মানসিকতা নিয়ে ছেলেরা খেলেছে, সামনে যদি এটা না দেখতে পাই ভীষণ হতাশ হব।’ সামনে বিশ্বকাপকে হিসেবে রেখেই দল গোছানো হচ্ছে। সেই দল গোছানোর কাজটা এশিয়া কাপের মাধ্যমে অনেকটা সহজ হয়েছে। ওপেনিংয়ে লিটন কুমার দাস ও মাঝখানের সারিতে মোহাম্মদ মিঠুনের মতো ব্যাটসম্যানকে যে পাওয়া গেছে। মাশরাফি সেটি মনেও করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘মিঠুন ও লিটনের কথা বলতে হয়। আমাদের দুটি জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই দুই জায়গায় প্লেয়ার পারফর্ম করেছে, এটা খুবই ইতিবাচক। এখন ওরা কতটুকু ওপরে নিয়ে যেতে পারবে সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এক দুই ইনিংসে বলা যায় না সে ফর্মে আছে কি না। তবে আশাকরি ওরা বুঝতে পারছে তাদের সামর্থ্য আছে এই ধরনের মঞ্চে পারফর্ম করার।’ মুস্তাফিজুর রহমান ফর্মে ফিরেছেন। এটিও মাশরাফিকে আনন্দ দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘মুস্তাফিজ আবার আগের মতো ফিরে আসছে ধীরে ধীরে, এটা খুবই পজেটিভ। দল যেভাবে চেষ্টা করেছে, আশাকরি ওরা বুঝতে পারবে যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে শতভাগ চেষ্টা করলে যে কোন কিছুই সম্ভব। এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারলে খুব ভাল হবে।’ ফাইনালে লিটন দাসের আউটটি নিয়ে সবার মধ্যেই আলোচনা হচ্ছে। দলের ১৮৮ রানের সময় ১২১ রান করে স্ট্যাম্পিং হন লিটন। তবে সেই আউটটি নিয়ে আছে বিতর্ক। মাশরাফি সেই বিতর্কে যেতে চান না। যা যাওয়ার তা যে চলে গেছে। মাশরাফি তাই বলেছেন, ‘দেখেন, এমনিতেই ওভাররেটের কারণে ম্যাচ ফির ৪০ শতাংশ জরিমানা দিয়েছি, আর জরিমানা দেয়ার ইচ্ছে নেই।’ মাশরাফি না বললেও এ নিয়ে প্রধান কোচ স্টিভ রোডস ঠিকই মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘খুবই ক্লোজ ডিসিশন ছিল। আমি বলতে পারছি না, এটা আউট, নাকি নটআউট ছিল। এটা খুবই কঠিন ছিল। ম্যাচ শেষে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা বলেছি আমি। তিনি বলেছেন, চারজন আম্পায়ারই নিশ্চিত ছিল, দাগের ভেতরে কিছু ছিল না। যদি পা দাগে থাকে তাহলে তুমি আউট। ক্রিকেটে এসব মেনে নিতেই হবে এবং সামনে এগোতে হবে।’ সঙ্গে রোডস যোগ করেন, ‘ক্রিকেটে আপনি মেনে নিতে শিখেন, একদিন আপনার পক্ষে যাবে, আরেকদিন আপনার বিপক্ষে। সেদিন ফাইনাল ম্যাচে আমাদের হয়ে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে, বলতেই হয় সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গেছে।’ শিরোপা জিততে না পারায় রোডসের মধ্যে হতাশা থাকলেও ক্রিকেটারদের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট তিনি। বলেছেন, ‘আমাদের জয়ের সুযোগ ছিল। আমরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছি। আমরা ভাল পারফর্ম করেছি। ভারতীয় দল খুবই ভাল আমরা সবাই জানি। তাদের একদম শেষ বল পর্যন্ত ঠেলে নেয়া খুবই ভাল পারফর্মেন্স ছিল। শুধু একটু হতাশ, আমরা শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয় করতে পারিনি। আমরা আমাদের সেরা দল নিয়ে খেলতে পারিনি। সাকিব-তামিমের কেউই ছিল না। কিন্তু ছেলেরা যাদের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়েছে। টুর্নামেন্টে আরও ৪টি দল ছিল, যারা ফাইনালে জায়গা করে নিতে পারেনি। এদের মধ্যে দুটি দল খুবই ভাল ছিল।’ এখন এশিয়া কাপ নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন। তাতে একটি টুর্নামেন্ট জেতার দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন মাশরাফি।
×