ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিপ্রেশনকে দূরে সরান

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১ অক্টোবর ২০১৮

ডিপ্রেশনকে দূরে সরান

বেশির ভাগই দেখা যায় কোন বিশেষ কারণে ডিপ্রেশনে ভুগলে সেটা কোন ধরনের ট্রিটমেন্ট ছাড়াই আবার কেটেও যায়। তাতে হয়ত ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগে। কিন্তু এর উল্টোটাও হয় কারও কারও ক্ষেত্রে, তাদের হয়ত বছর ঘুরে যায় কিন্তু বিষণ্ণতা আর কাটে না। ডিপ্রেশনের কারণ খুঁজলে দেখা যাবে, এর মূলে রয়েছে অনেক ধরনের জটিলতা যেগুলো একদিনে তৈরি হয়নি। বিবাহিত জীবনে সমস্যা (এই সমস্যা অনেক ধরনের হতে পারে), প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা, পারিবারিক ঝামেলা, ডিভোর্স, সেপারেশন, ভালবাসার মানুষের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া, চাকরি হারানো বা কাজ করা সত্তেও প্রমোশন না হওয়া, কাছের মানুষের মৃত্যু। কিংবা পড়াশোনার জন্য ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকা বা বিয়ের পর হঠাৎ করেই বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। এমনকি এটাও দেখা যায় বহু দিনের স্বপ্ন মা হবেন, কিন্তু মা হওয়ার পরে শারীরিক ও মানসিক চাপে ডিপ্রেশন-এ পড়ে যান। এভাবে কারণ বলে শেষ করা যাবে না। এখন কথা হচ্ছে এ থেকে বের হবেন কিভাবে? ১) সম্ভবত ডিপ্রেশনের কারণ বা অনেক ক্ষেত্রে মূল লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় কোন বিষয়ে আগ্রহ না থাকা বা কোন ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে না যুক্ত করতে পারা। নিজের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা বা কোন একটা কাজের সঙ্গে নিজেকে নিয়মিতভাবে যুক্ত রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি পরোক্ষভাবে আপনার ভেতরে আত্মসম্মান তৈরি করতে সাহায্য করে। এগুলো আপনাকে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেবে, মনকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে এবং নেগেটিভ চিন্তা এবং ইমোশন থেকে দূরে রাখবে। বিশেষত ঠিক যখন আপনার খারাপ লাগা শুরু হবে অর্থাৎ রাগ, দুশ্চিন্তা, অস্থির লাগা, কান্না পাওয়া ইত্যাদি তৎক্ষণাৎ নিজেকে কোন একটা কাজে লাগিয়ে ফেলুন। একবার ভাবুন তো বাচ্চাদের মধ্যে ডিপ্রেশন দেখা যায় না কেন? কারণ তাদের মধ্যে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে, যে কারণে নেগেটিভ চিন্তা তাদের মনে জায়গা করতে পারে না। একই কাজ আপনাকে করতে হবে। আনন্দ দেয় এমন কোন কাজ : আনন্দ দেয় এমন কাজগুলো আমাদের মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। যেমন মুভি দেখা, গল্পের বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু সমস্যা হলো যারা ডিপ্রেশন-এ ভোগেন, তাদের বেলায় হয় এই কাজগুলো করার কোন আগ্রহই থাকে না অথবা এগুলো থেকে যে ভাল লাগা তৈরি হয় তার স্থায়িত্ব হয় খুব কম। তাই প্রথমটায় জোর করে হলেও এই কাজগুলো শুরু করতে হবে এবং এগুলো চালিয়ে যেতে হবে। যেমন, আপনি ঠিক সপ্তাহে একটা দিন সময় করে মুভি দেখবেন। সেই দিনটা আপনি নিজের মতো করে উপভোগ করবেন। সবার বাড়িতেই এখন কম্পিউটার আর নেট কানেকশন থাকে, তাই মুভি দেখা কোন কঠিন কাজ নয়। তবে আমি বলব চেষ্টা করবেন একটু ভাল মুভি দেখতে। সেই একই নাচ-গানওয়ালা হিন্দী মুভি না দেখে দেখুন ‘কাস্ট এওয়ে’ বা ‘ফরেস্ট গাম্প’- এর মতো মুভি দেখুন। এই বেলা অনেকেই বলবেন, আমার মুভি দেখার সুযোগ নেই। ভাল কথা, তাহলে বই পড়েন। এখন প্রচুর ভাল ভাল থ্রিলার-এর অনুবাদ পাওয়া যায়, তাছাড়া আমাদের বাঙালী সাহিত্যেও নিহায়ত কম বই নেই কিন্তু। আমি যদি নিজের কথা বলি, আমি তো এক টানে হুমায়ূন আহমেদের সব বই পড়ে ফেলেছিলাম। আমি এও স্বীকার করছি, সুলতান সুলেমানের পুরো চার সিজন আমি একসঙ্গে শেষ করেছিলাম এক মাসে। হাস্যকর মনে হতে পারে! কিন্তু আমি করেছিলাম আমার নিজের ভাল লাগবে বলে। ঐ একটা বছরে আমি প্রচুর ভাল ভাল সিনেমা দেখেছি। এরকম আপনিও ভাল লাগে এমন কিছু একটা করার চেষ্টা করুন। যারা বলবেন, আমাদের সময় নেই, সুযোগ নেই। তাদের বলি, নিজেকে প্রায়োরিটি দিতে শিখুন আগে, অন্যরাও তখন আপনাকে প্রায়োরিটি দেবে। দিনের পর দিন একা একা গুমরে পড়ে থাকা কোন সুস্থতার লক্ষণ না। আর মনে রাখবেন বাড়ির সবাইকে একসঙ্গে আপনি খুশি করতে পারবেন না, সে চেষ্টা করারও কোন মানে নেই। সপ্তাহে একটা দিন, একটা বিকেল নিজের জন্যে রাখতে চাওয়া দোষের কিছু নয়। তাতে কেউ আপত্তি জানালে গায়ে মাখবেন না। মনে রাখবেন নিজের ভাল থাকাটা সবচেয়ে জরুরী। গঠনমূলক কোন কাজ : ডিপ্রেশনে পড়লে নিজের প্রতি বিশ্বাস কমে যায়। মনে হয় আর কোন কিছুই হবে না আমাকে দিয়ে। এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে অল্প অল্প করে কাজ হাতে নিন। আর শেষ করতে পারলে দেখবেন নিজেরই আনন্দ হচ্ছে। এখন কথা হলো করবেনটা কী? সেটাও আপনাকেই ঠিক করতে হবে। মোটা হয়ে গেছেন? টার্গেট ঠিক করুন ঠিক এক মাসে এক কেজি ওজন কমাবেন। রান্না করতে ভালবাসেন? ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামে নিজের একটা পেজ খুলুন। ভাল ছবি আঁকতে পারেন? আবার ছবি আঁকা শুরু“ করুন। বা চাইলে শেখাতে শুরু করুন। ছোট ছোট অনেক কাজের একটা লিস্ট আজই তৈরি করুন, যেগুলো আপনি এই বছর শেষ হবার আগেই করতে চান। তবে আগেই বলে রাখি এক্ষেত্রে রিয়েলিস্টিক গোল সেট করবেন। যে মেদ জমতে সময় লেগেছে এক বছর সেটা এক মাসে যাবে না। যেসব কাজের লিস্ট করেছেন, তার প্রতিটা কমপ্লিট হলে নিজেকে একটা গিফট দিন। অন্য কারও কাছ থেকেই গিফট পেতে হবে এমন কথা কে বলেছে? আমি তো আমার জন্মদিনে নিজেকে একটা গোল্ড লকেট উপহার দেব ঠিক করেছি, সেজন্য কাজও করে যাচ্ছি। অন্য কেউ এসে আপনার মন ভাল করে দিয়ে যাবে না, আপু। পথ হয়ত বাতলে দেবে, কিন্তু সেই পথে হাঁটতে হবে নিজেকেই। কল্যাণমূলক বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ : স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, এই কাজগুলো মানুষের আত্ম-উন্নয়নে সাহায্য করে। বেশি দূরে যেতে হবে না। নিজের বাসায় যে কাজের মানুষটি রেখেছেন, তাদের বাচ্চাদের বিনে পয়সায় কিছুদিন পড়িয়ে দেখুন, ভাল লাগবে। রক্তদান কর্মসূচীতে যোগ দিন। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা আপনার চেয়েও কম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তাদের জন্য কিছু একটা করুন, দেখবেন তখন নিজের সমস্যাগুলোকে আর সমস্যা মনে হবে না।
×