ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাহা ইসলাম

ত্বকের যত্নে মাস্ক ও প্যাক

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১ অক্টোবর ২০১৮

ত্বকের যত্নে মাস্ক ও প্যাক

সৌন্দর্য চর্চার জন্য রয়েছে প্রসাধনী সামগ্রী। অনেক সময় ত্বক উপযোগী সঠিক পণ্য বাছাই করা কঠিন হয়ে যায়। তাই ঘরে থাকা উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নেয়াই ভাল। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য প্ল্যাযামএনগ্লোরি.কম অবলম্বনে সৌন্দর্যচর্চার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এখানে দেওয়া হলো। দুধের সর : চোখের নিচে কালি দূর করতে অতুলনীয়। মুখের যেসব জায়গায় কালো ছোপ ছোপ দাগ আছে এবং চোখের আশেপাশে দুধের সর দিয়ে ১০ মিনিট মালিশ করুন। তারপর লেবু ঘষে তৈলাক্ত ত্বক থেকে রেহাই পেতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লেবুতে আছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা ত্বক উজ্জ্বল করে। বড় হয়ে যাওয়া লোমক‚প আঁটসাঁট করতে কাঁচাদুধের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। শুষ্ক ত্বক চর্চার জন্য লেবুর রসের সঙ্গে মধু, বেসন ও দুধের সর দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দুধের সরের পরিবর্তে শসা ব্যবহার করুন। বাকি উপাদান একই থাকবে। লেবু : ত্বক উজ্জ্বল করতে লেবু দারুণ কাজ করে। কালিমা দূর করার পাশাপাশি ত্বকের ওপর জমে থাকা মড়া চামড়া, ব্ল্যাযাকহেডস, হোয়াইটহেডস এবং ব্রণের সমস্যা সমাধান করে। একটি লেবুর অর্ধেক কেটে প্রতিদিন ১০ মিনিট মুখে মালিশ করুন। এতে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। আরও ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য লেবুর সঙ্গে অল্প পরিমাণে গায়ে মাখা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। লেবু ও চিনি : ত্বকের যত্নের জন্য লেবু-চিনি মেশানো ফেসিয়াল মাস্ক খুবই প্রচলিত পদ্ধতি। পরিষ্কার ও মসৃণ ত্বকের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। মুখ থেকে গলা পর্যন্ত এই মিশ্রণ লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের কালোভাব দূর হবে। মুখে আর্দ্রভাব বজায় রাখতে এই মিশ্রণে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল দিতে পারেন। হাত ও পায়ের রোদে পোড়াভাব দূর করতেও এই মিশ্রণ কার্যকর। বাটারমিল্ক : দুধ-ছানার পানি বা ঘোল-এ রয়েছে ল্যাকটিক এ্যাসিড, যা বিভিন্ন দামী প্রসাধনী সামগ্রীতে থাকে। ফেসিয়াল-এর উপদান হিসেবে এটা খুবই কার্যকর। ত্বক চকচকে ও নরম রাখতে সাহায্য করে। এর কিছু প্রাকৃতিক উপাদান শুধু চামড়ার বয়সের দাগ বা ছুলি নিরাময় করে না, পাশাপাশি ত্বকে নিয়ে আসে টানটানভাব। ত্বকের আক্রান্ত এলাকায় তুলা দিয়ে বাটারমিল্ক লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতোভাবে ধুয়ে ফেলুন। উজ্জ্বল ত্বক পেতে এটা জাদুর মতো কাজ করবে। বলিরেখা ও চামড়ার খসখসেভাব দূর করতে এক চামচ বাটারমিল্কের সঙ্গে এক চামচ মূলার রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। রোদেপোড়াভাব দূর করতে পাঁচ টেবিল-চামচ বাটারমিল্কের সঙ্গে দুই টেবিল-চামচ টমেটোর রস মিশিয়ে মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন। মুখের কালো দাগ দূর করতে শুকনা কমলার খোসাগুঁড়ার সঙ্গে বাটারমিল্ক মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। কলার মাস্ক : এই মাস্ক তৈরি করতে কলার সঙ্গে মধু ও লেবু অথবা কমলার রস মেশাতে হবে। আগে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর কলার সঙ্গে মধু ও কয়েক ফোঁটা কমলা বা লেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে মুখে মাখুন। ১৫ মিনিট পর আলতোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ডিমের সাদা অংশ ও মধু : ১ টি ডিমের সাদা অংশ নিন। এতে ১ টেবিল চামচ মধু খুব ভালো করে মেশান। এই মিশ্রণটি আঙুলের ডগায় নিয়ে মুখে ভাল করে ম্যাসেজ করে লাগান। ১০ মিনিট ত্বকে রেখে দিন। কুসুম গরম পানি দিয়ে ১০ মিনিট পর ত্বক ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। লেবু ও শসার রস : ১ টি তাজা লেবুর রস চিপে নিন। শসা ব্লেন্ডার-এ বেøন্ড করে একটি পাতলা কারণে ছেঁকে চিপে নিয়ে শসার রস বের করে নিন। এবার লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, শসার রস ২ টেবিল চামচ, ১ চা চামচ মধু ও ১ চা চামচ দুধ ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণটি রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে লাগাবেন। ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নেবেন। মসুর ডাল : কাঁচা দুধে মসুর ডাল ৪০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এই ডাল ছেঁকে নিয়ে মিহি করে বেটে নিন। মধুর সঙ্গে মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মুখের ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো ঘষে তুলে নিন। প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকে আসবে গোলাপি আভা। ওটমিল ও দারুচিনি : ওটমিল আমাদের ত্বকের মৃত কোষগুলোকে খুব সহজেই পরিষ্কার করে এবং ত্বককে মসৃণ করে। দারুচিনি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমদের ত্বকের রুক্ষতা বা যে কোন ইনফেকশন, ফাইন-লাইন বা বলিরেখা এগুলো দূর করে ত্বককে আরও মসৃণ করে তোলে। ২ বড় চামচ ওটমিল, ১/২ চামচ দারুচিনি পাউডার ও ১ বড় চামচ দুধ ভাল করে মিশিয়ে নিন। আপনার আঙুলের সাহায্যে মুখে ৪-৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে ১ সপ্তাহের মধ্যেই আপনি পার্থক্য লক্ষ্য করবেন। আপনার শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর ত্বক মসৃণ করার জন্যও এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন, শুধু উপাদানগুলোর পরিমাণ সমান রেশিও অনুযায়ী বাড়িয়ে নিতে হবে। বেসন, দুধ ও হলুদ : প্রাচীন শাস্ত্রে মসৃণ ও নরম ত্বকের রহস্য কিন্তু এই তিনটি উপাদানই। এর নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূর করে। আপনার মুখের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রুক্ষতা দূর করতে এই মিশ্রণ সমানভাবে উপকারী। কাঁচা হলুদবাটা ১ চামচ ও বেসন ২ চামচ নিয়ে সঠিক পরিমাপ অনুযায়ী দুধের সঙ্গে মেশান যাতে পেস্ট তৈরি হয়। এবার এই পেস্টটি মুখে বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট পরে হালকা গরম জল হাতে নিয়ে ভাল করে ম্যাসাজ করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের মসৃণতা আপনি নিজেই ছুঁয়েই বুঝতে পারবেন। পেঁপে : আমাদের ত্বকের মসৃণতা বাড়িয়ে তুলতে পাকা পেঁপে অত্যন্ত বেশি মাত্রায় কার্যকরী। পেঁপেতে পেক্টিন থাকে যা আমাদের আমাদের রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বককে খুব তাড়াতাড়ি হিল করে। হাত বা পায়ের রুক্ষতা দূর করে মসৃণ করে তুলতে পেঁপে ব্যবহার করুন। ৩ বা ৪ টুকরো পেঁপে ভাল করে মিক্সিতে বেঁটে নিন। এবার তার সঙ্গে ২ চামচ মধু মিশিয়ে মুখে ভাল করে ম্যাসাজ করুন ১৫ মিনিট ধরে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। ভাল ফল পেতে প্রতি সপ্তাহে ২দিন এই ভাবে ম্যাসাজ করুন। পুদিনা পাতা : পুদিনা পাতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু ত্বকের ক্ষেত্রেও এর উপকার গুণে শেষ করা যায় না। আমাদের ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ, ছোপ, ব্রণ বা যে কোন রকম সমস্যা দূর করে ও ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে মসৃণ ও নমনীয় করে তোলে। ১০-১২টি পুদিনা পাতা ভাল করে বেটে ২-৩ চামচ দইয়ের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন। মুখে মেখে ১৫ মিনিট পর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। মধু : আমাদের আজকের সব শেষ উপাদানটি হলো মধু। মধু সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ত্বক মসৃণ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো মধু। ২-৩ চামচ মধু, ১ টি ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে ভাল করে মেশান। ভাল করে মুখে মেখে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে তারপর ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ বার করে দেখুন, ১ মাসের মধ্যেই আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এই ঘরোয়া উপাদানগুলো ছাড়াও মসৃণ ত্বক পেতে বা মসৃণতা বজায় রাখতে কতগুলো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বেশি করে জল খেতে হবে, রাতে শোবার আগে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করে মুখে ক্রিম ও বডি লোশন মাখতে হবে, ফল খেতে হবে বেশি করে। জাঙ্ক ফুড ও বেশি মাত্রায় অ্যালকোহল ইনটেক বর্জন করতে হবে। ঘরোয়া উপায়গুলো কিন্তু কাজের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ত্বকের কোনরকম ক্ষতি করে না। তাই আজকের বলা যে কোন একটি বা দুটি উপায় আপনি আপনার মুখ ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মসৃণতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে দেখতেই পারেন। ফলাফল আপনি নিজেই পাবেন।
×