ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ায় একাধিক প্রার্থী মাঠে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১ অক্টোবর ২০১৮

পটিয়ায় একাধিক প্রার্থী মাঠে

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া ॥ দলীয় কোন্দলের কারণেই চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে ইতোমধ্যে লবিং প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে পটিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল থাকায় এবার সংসদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করছেন। তৃণমূলে দলীয় কোন্দলের কারণেই বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন। তবে তিনি (এমপি) আশাবাদী তৃতীয় বারের মতো পটিয়া থেকে মনোনয়ন পাবেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের নির্যাতিত ও অবহেলিত নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে এমপির মনোনয়ন ঠেকাতে ও মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাছির, সাবেক মহিলা এমপি ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বদিঊল আলম। একইভাবে উপজেলা বিএনপি তিন গ্রæপে বিভক্ত। সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহজাহান জুয়েলের পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া। গত ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রোড শোতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়কের পটিয়া ভেল্লাপাড়া থেকে শুরু করে মুজাফরাবাদ এলাকা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তিন গ্রুপ বিভিন্ন স্পটে পৃথকভাবে অবস্থান নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানান। তিন গ্রুপই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে স্লোগান দিয়ে মনোনয়ন চেয়েছেন। তার মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা সামশুল হক চৌধুরীকে তৃতীয় বারের মতো মনোনয়ন দিতে স্লোগান দেন। অন্যদিকে, পটিয়ার নৌকার মাঝি পরিবর্তন করে সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব অথবা বিজিএমইএ নেতা মোহাম্মদ নাছিরের মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলেন। একইভাবে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম মনোনয়ন পাওয়ার আশায় উপজেলা ও পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল মেঠাতে ব্যর্থ হলে পটিয়ার আসনটি এবার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সকল বির্তক এড়িয়ে দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন পটিয়া পৌরসভার দুই বারের মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ। দলীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ও বড়লিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূলত বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রথম বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে পটিয়ার সংসদ সদস্য পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি লায়ন এম, সামশুল হক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম,এ জাফর, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মহিলা এমপি চেমন আরা তৈয়ব, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাছির, যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ মনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক একেএম আবদুল মতিন চৌধুরী, সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কাজী আবু তৈয়ব, বর্তমান কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, সদস্য সেলিম নবী, মোজাহেরুল হক চৌধুরী, সাবেক সদস্য মাস্টার সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে বিশাল একটি গ্রæপ বর্তমান সংসদ সদস্যের মনোনয়ন ঠেকাতে মাঠে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির ও সাবেক মহিলা এমপি চেমন আরা তৈয়বের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত রাখেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। বর্তমান সংসদ সদস্যকে ঠেকাতে নাছির অথবা চেমন আরা তৈয়বের মধ্যে যে কোন একজন মনোনয়ন চান। সম্ভাব্যপ্রার্থীরা মহা সড়কের দুই পাশে বড় বড় বিলবোর্ডও তুলেছেন। একইভাবে বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থীরা বিভিন্নভাবে তাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পটিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, যারা বিরোধিতা করছেন তারা তৃণমূল নয়, তারা ছিন্নমূল। তিনি (এমপি) দুইবার সংসদ সদস্য থাকাকালীন উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পটিয়াতে দুই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। যা অতীতে কেউ করতে পারেনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি তার (এমপি) সঙ্গে রয়েছেন। ছিন্নমূলের কিছু নেতাকর্মী তার (এমপি) বিরোধিতা রছেন। মনোনয়ন পেলে দলীয় ও সাধারণ মানুষ তাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন। বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাছির বলেন, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বর্তমান সংসদ সদস্য মূল্যায়ন করেন নি। বরঞ্চ বিভিন্নভাবে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করায় অতিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এবার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। তিনি (নাছির) এলাকার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন এবং দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে (নাছির) মনোনয়ন দিলে পটিয়ার আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তার কর্মী রয়েছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হলে পটিয়ার আসনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হবে।
×