ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রামগঞ্জে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যস্ততা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১ অক্টোবর ২০১৮

রামগঞ্জে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যস্ততা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্শীপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের ব্যাপক তৎপরতা ও দৌড়ঝাঁপ আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মানুষের মন জয়ে গণসংযোগ, সভা সমাবেশ, সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, দান অনুদান এবং উপহার সামগ্রী দেওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি ও আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন খান। নৌকার পক্ষে তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কর্মকান্ড তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। ড. আনোয়ার হোসেন খান সংসদীয় আসন উক্ত উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে উঠান বৈঠক, পথসভা ও জনসংযোগ করছেন। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সভা সমাবেশ করে ভোটারদের কাছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষে নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চাইছেন। যুবলীগ আহবায়ক সৈকত মাহমুদ সামছু ও মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়া সংগঠন থেকে প্রকাশ্যে সমাবেশে তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। সবক’টি ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার নৌকা তথা তার পক্ষে ভোট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। সুখে দুঃখে সর্বদা তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ লোকদের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিদিন চলছে তার পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশ। এর মধ্যে রামগঞ্জ পাইলট হাইস্কুল ময়দানে ছাত্রলীগ আয়োজিত সমাবেশে নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে শপথ করান জেলা নেতৃব"ন্দ। লক্ষ্মীপুর-১ আসন রামগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ব্যাংকার ড. আনোয়ার হোসেন খানের সভাপতিত্বে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান আ ক ম রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নূর উদ্দীন চৌধুরী নয়ন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শরীফ, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সল মাল, রামগঞ্জ যুবলীগ আহবায়ক সৈকত মাহমুদ সামছু, যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়াসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ড. আনোয়ার খান বলেন, অসহায় মানুষের পাশে থেকে আমি রামগঞ্জের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তথা তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার রূপকল্প ভিশন বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত বলে তার দাবি। সমাবেশে উপস্থিত কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে সারাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার শপথ করান অতিথিবৃন্দ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবে বলে শতভাগ আমরা আশাবাদী। অপরদিকে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আ ক ম রুহুল আমিন বলেন, রামগঞ্জে ড. আনোয়ার খানের বিকল্প নেই। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব। এলাকাবাসী তাঁকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। উক্ত আসনে আ’লীগ থেকে আরও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপাতি মোঃ শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু, বিশিষ্ট কলামিস্ট আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন, রামগঞ্জ পৌর মেয়র ও রামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এমএ মমিন পাটওয়ারী। অপরদিকে এ আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য লায়ন এম এ আউয়াল। ২০১৪ সালে মহাজোট তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে তাঁকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি দশম সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও বর্তমানে তিনি ১৫টি ইসলামী দল নিয়ে গঠিত ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক এলায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান। উক্ত আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট থেকে আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় সভা সমাবেশ করছেন। লায়ন এম এ আউয়াল বলেন, গত ৫ বছরে আমি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়েছি। বর্তমানেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের সঙ্গে শরিক দল উন্নয়নের ভাগিদার হিসেবে রয়েছি। সারাদেশের ন্যায় এলাকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য এবারও মহাজোট তাকে মনোনয়ন দেবে এ প্রত্যাশা তার। মনোনয়ন পেলে তার দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ের ব্যাপারে তিনি আবারও শতভাগ আশাবাদী। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে সহযোগিতা করবে বলে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তবে উক্ত আসনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রয়েছেন, বিএনপি শরিক দল এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, জোটগত কারণে বিএনপি এ আসনে আমাকে মনোনয়ন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি এলাকায় বিভিন্নভাবে দলের প্রচার চালাচ্ছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখনও পুরোদমে মাঠে নামেনি। তবে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বেশি জোর দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন, বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি ও রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আমরা অংশ নিতে আগ্রহী আছি। এখানের ৮০ ভাগ লোক আমাদের দল বিএনপিকে সমর্থন করে। বর্তমান সরকারের মামলা হামলা অত্যাচার অবিচারে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি আবার মনোনয়ন পেলে ধানের শীষ জয়ী বলে তিনি শতভাগ নিশ্চিত। বিএনপি থেকে নাজিম উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেন ও ঢাকা মহানগর দণি বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ পাঁচজন মনোনয়ন চাইবেন। তবে উক্ত আসনে জামায়াত নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এর বাইরেও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাবেক সাংসদ এম এ গোফরান, জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ মনির হোসেন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তরিকত ফেডারেশন ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সাংগঠনিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্য নয় বলে ভোটাররা জানান।
×