ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বীজতলায় লাখপতি

সবজির চারা উৎপাদন করে সফল দুই শতাধিক কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১ অক্টোবর ২০১৮

সবজির চারা উৎপাদন করে সফল দুই শতাধিক কৃষক

সাজেদ রহমান ॥ সবজি উৎপাদনে যশোর জেলার খ্যাতি রয়েছে। বছরে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়ে থাকে। তবে শীতকালীন সবজি উৎপাদন না করে শুধু বীজতলাতে নিবিড় পরিচর্যায় বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে লাখপতি হয়েছেন দুই শতাধিক কৃষক। এ কাজে জড়িত পুরাতনদের কেউ কেউ তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। চলতি মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু হওয়া অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি চলবে কার্তিক মাসজুড়ে। এ পাঁচ মাস সময়কালে কৃষক একই জমিতে তিনবার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারবেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবজির রাজধানীখ্যাত যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ও চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নে রাস্তার দু’পাশ দিয়ে শত শত পলিথিনে মোড়া বীজতলা। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াতেই বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে কৃষক। এরপর ঝাঝরি দিয়ে পানি ছিটিয়ে এবং আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত কিষান-কিষানি। চুড়ামনকাঠি- চৌগাছা সড়কের আব্দুলপুর মাঠে দেখা গেছে, গোটা মাঠজুড়ে হাজারো বীজতলা। এসব বীজতলায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে অন্তত শতাধিক শ্রমিক বীজতলা পরিচর্যা করছেন। এদের কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ নিড়ানি দিয়ে ধীরে আগাছা পরিচর্যা করছেন, কেউবা নতুন করে বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন কিংবা পলিথিনে মোড়ানো ঘর তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, চুড়ামনকাঠি ও হৈবতপুর ইউনিয়নে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়, এসব এলাকার বিল (জলাবদ্ধ কিংবা তুলনামূলক নিচু জমি) ব্যতীত ধানের আবাদ নেই বললেই চলে। অধিকাংশ জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে মাচায় সবজি চাষ করে। তবে সবজি চাষের পাশাপাশি দুই ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক ঝুঁকেছেন সবজির বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদনে। চুড়ামনকাঠি ও হৈবতপুর এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করা হয়। ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে বাজারে ভাল মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা ১ টাকা ৮০ পয়সা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৬০ পয়সা থেকে ৭৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। যশোরের ঝিকরগাছা, গদখালী, নাভারন, চৌগাছা, মনিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, নড়াইল, লোহাগড়া, সাতক্ষীরা, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ এলাকার কৃষক ও সবজি চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত তিন বছর ধরে স্থানীয় শতাধিক কৃষক মৌসুমের পাঁচ মাস বীজ থেকে চারা তৈরির কাজই করেন। এদের মধ্যে অর্ধশত কৃষক ৫ থেকে ১০ বিঘা জমি নিয়ে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে উপার্জন করছেন। তবে বিদেশী বীজের তুলনামূলক বেশি দাম হওয়ায় চারা উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবদুল হাকিম বলেন, গত বছর ৫ বিঘা জমিতে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন এবং বিক্রি করে অন্তত তিন লাখ টাকা লাভ করেছিলেন। তবে চলতি বছর সবেমাত্র এক চালান ফুলকপি এবং বাঁধাকপির চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেছেন। আরেক ধাপ বিক্রির মতো হয়েছে। তবে মৌসুম শেষে হিসাব-নিকাশ না করে লাভের অঙ্কটা বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, বছর তিনেক আগে চারা উপাদন করে বিক্রির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ জন কৃষক জড়িত থাকলেও, এখন ছোট-বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক কৃষক এ কাজে জড়িত হয়েছেন। চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে ফুলকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন পর্যন্ত (এক মাস) অন্তত দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে এতে তিন লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করে আনুষঙ্গিক খরচ বাদেও কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হয়। পরবর্তীতে ওই চারা অন্য কৃষকরা কিনে অন্তত তিন মাস পরিচর্যা করে বিক্রি উপযোগী করে তোলে। এছাড়াও প্রতি বিঘা জমিতে বাঁধাকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন পর্যন্ত (এক মাস) অন্তত ১ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে এতে উৎপাদিত চারা ২ লাখ টাকার উর্ধে বিক্রি হয়। যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, সারাদেশের মধ্যে যশোরের আব্দুলপুর এলাকাতেই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে।
×