ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবে শেষ হবে যুদ্ধাপরাধী পক্ষ সমর্থন?

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১ অক্টোবর ২০১৮

কবে শেষ হবে যুদ্ধাপরাধী পক্ষ সমর্থন?

হায়! কখনও কি ভেবেছিলাম ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী-মিত্র জিয়া নিহত হওয়ার পরও বড় বেশি মূল্য দিয়ে কেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সেই শকুনেরা আন্ডা-বাচ্চা দিয়ে সমাজে অবস্থান এখনও করতেই থাকবে! জিয়ার মৃত্যুর পরও তার স্ত্রী, পুত্র সেই ধারায় ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের পরম আশ্রয় হয়ে, তাদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে জঙ্গী উৎপাদনের ও জঙ্গীদের হাতে মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের হত্যার কাজটিও শুরু করে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ সমর্থকরা সেই ’৭১ থেকে প্রাণের ঝুঁকিতে বাস করছে। ’৭৫-এর পরে সে প্রাণঝুঁকি জীবিকার, নিরাপত্তার, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধার অভাবের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের বাস করতে হয় সেই দেশে যে দেশ তাদের লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত হাজার হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ; সংসদ সদস্য, সাংবাদিক হত্যা, শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা ও এর নিরপেক্ষতা ধ্বংস করা, চরম দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হওয়া খালেদা। শুধু তাই নয়, ২০১৪-১৫ সালে খালেদা জিয়ার নির্দেশে ও নেতৃত্বে নির্বাচন বন্ধের নামে যে পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে প্রায় দু’শ’ চালক, বাসযাত্রী, সিএনজিযাত্রী, লঞ্চ, বাস, ট্রাক, ট্রেন স্কুলঘর আগুনে দগ্ধ করে এক বর্বর নির্যাতনের উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল, সেসব ঘৃণ্য হত্যার বিচার হলে যুদ্ধাপরাধী মিত্র খালেদাÑতারেক যে শুধু দুর্নীতি নয়, বর্বর হত্যাকান্ডেও সমান পারদর্শী, তা প্রমাণ হবে। বর্তমানে আকস্মিকভাবে আগে যারা কখনও রাজনীতিতে দল গঠন করেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা হঠাৎ বৃদ্ধ বয়সে সক্রিয় হয়ে ওঠার এবং বিএনপির নিন্দিত, দন্ডিত নেতৃত্বের ও দলটির প্রাণ টিকিয়ে রাখার জন্য কৌশল হিসেবে ওই বয়স্ক নেতাদের নেতৃত্বের অধীনে বিএনপি জোট গঠন করে নির্বাচনে যাওয়ার এবং জেতার একটি সম্ভাবনার দীর্ঘস্থায়ী সুফল আনবে- এই হিসাবটি করেছে বলে সচেতন মানুষ মনে করছে। এই কৌশলটি তিন মাসের জন্য প্রণীত হয়েছে অর্থাৎ নির্বাচনে কোনভাবে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে তিন মাসের জন্য এই জোটটি করা হয়েছে। বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা অবশ্যই চাইবেন সাময়িকভাবে নিন্দিত, দন্ডিত ও দুর্নীতি, হত্যা মামলার আসামি নন এমন প্রখ্যাত ব্যক্তিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলে তাদের নেতৃত্ব মেনে নেয়া দন্ডিত-দুর্নীতিবাজ নেতা-নেত্রীর জন্য হবে সবুরে মেওয়া ফল লাভ। কারণ, যদি দুই যুদ্ধাপরাধী-মিত্রের সমর্থক দুই জোট নির্বাচনে বিজয়ী হয়, তাহলে তো দন্ডিতদের ন্যায়-অন্যায় উপায়ে মুক্তি দেয়া হবে, হয়ত এটাই প্রধান শর্ত যা শেষে জামায়াতের জন্য বড় লাভ নিয়ে আসবে। যারা মাহাথিরের মতো প্রখ্যাত ভাবছেন তারা হয়ত বছর দুয়েক রাষ্ট্রের বড় পদে আসীন থাকবেন। তারপর পদত্যাগের ইচ্ছা না থাকলে তারেক-খালেদা যে তাদের অর্ধচন্দ্র দান করে ছুড়ে ফেলে দিতে পারে তা তো অতীতে জনগণ দেখেছে। বাংলায় অসাধারণ শত শত খনার বচন, লোকজ প্রবচনের প্রচলন আছে যার মধ্যে একটি হচ্ছে- ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি ঘটে।’ এটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অবশ্য আছে। বয়স বাড়লে ব্রেনের নিউরন মারা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা বয়সের কারণেই হয়। সুতরাং আমরা দেখতে পাই ব্যক্তির মেজাজ, রুচি, খাদ্যাভ্যাস হঠাৎ পরিবর্তিত হয়ে যায়। দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত যাকে যুক্তিপূর্ণ আচরণ করতে দেখা গেছে অথচ হঠাৎ একদিন তাকেই অযৌক্তিক আচরণ করতে দেখা যায়। ওইসব ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত এসব করে না, তার ব্রেনে নিরনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াই এর প্রধান কারণ। এখন হঠাৎ যে দুটি জোট গঠিত হয়েছে তার নেতৃত্বের মানসিক ভারসাম্য ঠিক থাকলে মনে হয় না তারা এই বয়সে দন্ডিত, দুর্নীতিবাজ, যুদ্ধাপরাধী মিত্র- খালেদা-তারেককে মুক্ত করার যথেষ্ট কঠিন এক নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতেন। তাদের স্বজন, মঙ্গলকামী ব্যক্তিরা তাদের এই বয়সে এমন ভ্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধা দিল না কেন, জানি না। জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িক দলগুলো এই অনিন্দিত, অদন্ডিত নেতৃত্ব লাভ করে একটি অকলঙ্কিত ছাতার আশ্রয়ের ছায়ায় তাদের প্রকৃত স্বজন-মিত্র, মা ও ভাই খালেদা-তারেক রক্ষা পেলেই তারা আখেরে হারানো সব ক্ষমতা-সুযোগ অধিকার একদিন ফিরে পাবেÑ এতে কোন সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের বিস্ময়ের সঙ্গে দুঃখিত হতে হচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীদের পরম স্বজন খালেদা-তারেককে নখদন্তহীন করা সম্ভব হয়েছিল। প্রথমত. বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনীদের বিচার করে। দ্বিতীয়ত. সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদাকে অন্যায়ভাবে বাস করার সুযোগ প্রত্যাহার করে এবং তাকে ওই বাড়ি থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। তৃতীয়ত. তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগই আন্দোলন করেছিল, সেটিকে খালেদার বিএনপির দ্বারা বারবার দলীয়করণ হতে দেখে সে ব্যবস্থা বাতিল করে সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিতে সংবিধানসম্মত সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন। চতুর্থত. ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের অসম্পন্ন কাজ খালেদা-তারেকের স্বজন ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দন্ড প্রদান। পঞ্চমত. খালেদা জিয়া ও তারেকের দুর্নীতি মামলা, পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় প্রথমটিতে দন্ডিত হওয়া এবং খালেদার অন্তরীণ হওয়া। ষষ্ঠত. ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার খালেদা-তারেকের আইনজীবীদের অসংখ্যবার সময় নেয়া, নানা টালবাহানার মধ্যে অবশেষে সমাপ্ত হওয়া। বলাবাহুল্য, উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো শেখ হাসিনার মতো সততা, নৈতিকতার বলে বলীয়ান, জনগণের কল্যাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নেত্রী আছেন বলেই সম্ভবপর হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রখ্যাত আইনজীবী কি সুযোগ পেলে উপরোক্ত অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপগুলো নিতেন? নিতেন না। কারণ, এখন তো দেখা যাচ্ছে তিনি দুর্নীতিবাজ ও খুনীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন এবং এতে লজ্জাবোধ করছেন না! সেলুকাস! বড়ই আশ্চর্য বাঙালী সুধীজন! লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×