ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিকল্পহীন তিনিই উজ্জ্বল উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ অক্টোবর ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিকল্পহীন তিনিই উজ্জ্বল উদ্ধার

দুনিয়া বলে এক আর আমরা বলি আরেক। তিনি এখন যখন যেখানে যান পৃথিবী তাঁর কথা শোনে। শুনতে বাধ্য হয়। কারণ, তাঁর দেশকে তিনি তলাবিহীন থেকে উপচেপড়ায় নিয়ে যেতে পেরেছেন। একটা দীর্ঘ সময় আমরা নিন্দুক ও বিশ্বাসঘাতকদের শাসনে ছিলাম। আমাদের বোঝানো হয়েছিল দেশ স্বাধীন করাটাই আসল না। প্রশাসন আর নিয়মনীতি নাকি আসল বিষয়। তলে তলে নতুন দেশটিকে অকার্যকর করার জন্য মরিয়া তারা জাতিকে এও বুঝিয়েছিল বঙ্গবন্ধু ঠিক হলেও তাঁর দল ঠিক না। ক্রমে তাঁরা বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ দেশ সবকিছু বিতর্কিত করে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল যাতে মানুষ মনে করে পাকিস্তান আমলই ছিল সুবর্ণকাল। সুকৌশলে এই কাজটি তারা করার সময় আমাদের জনগণ বা মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেনি। তাদের ছায়া রাষ্ট্র সত্য হলে আজ আমরা আমিরাতের মাটিতে পাকিস্তানকে হারানোর পরিবর্তে তাদের দেখেই রণে ভঙ্গ দিতাম। ভারতকে মোকাবেলা করার সাহস হতো না আমাদের। হঠাৎই বলতে গেলে সময় তার প্রতিশোধ নিতে নেমে এলো। যে মাটিতে রক্ত আর লজ্জা হারানোর বীজ সে কি ছেড়ে কথা বলবে? সে কারণেই আসলেন তিনি। আর এই আসাটাই হলো ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। তাঁকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনার দিকে পা বাড়াল বাংলাদেশ। কত যুক্তি কত বুদ্ধিজীবী কত পÐিত। সবার ধারণা তিনি নাকি কেবল প্রতিশোধ নিতে এসেছেন। তাই ফাঁসি আর মৃত্যু। দুনিয়ার ইতিহাস কি তাই বলে? যা নিয়ে ফরাসীরা গর্ব করে জার্মানরা লজ্জায় মুখ লুকায় আমেরিকানরা শক্তি পায় বা রাশিয়ানরা বীর বলে মনে করে তার পেছনে কি আছে? আছে এমন সব কীর্তি। এমন যত ঘটনা। তিনিও তাই করেছেন। আগে আগাছা সাফ তারপর দেশ উন্নয়ন। আমরা সবাই জানি, পাকিস্তানীদের এক বিশাল অংশ আমাদের মানতে পারে না। তাদের বুকের জ্বালা এখনও নেভেনি। এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী সেই ইমরান খান একাত্তরের পরাজিত সেনাপতি নিয়াজীর ভাইয়ের ছেলে। তার আচরণ আগাগোড়া বাংলাদেশবিরোধী। এই লোক যখন ক্রিকেট হিরো তখন চট্টগ্রামে এসে দম্ভ করে বলেছিল টসের দরকার নেই। ওদের ব্যাটিং বোলিং যা চায় দিয়ে দাও। ওদের গুঁড়িয়ে দিতে সময় লাগবে না। আজ সে পাকিস্তান আমাদের কাছে নাস্তানাবুদ। যে কারণে আমরা পারি আর ওরা হারে তার নাম দেশ ও সমাজের অগ্রগতি। সেটা যিনি করে দিচ্ছেন তাকে আমরা কেন এভাবে নিন্দা আর সমালোচনায় রাখি জানেন? জানতে হলে খেলার পরের দিন একটি পত্রিকা দেখুন! বহুল প্রচারিত মগজধোলাই করা মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে প্রিয় কাগজের হেডিং ছিল ‘অল্পের জন্য পারেনি পাকিস্তান’। বুঝুন এবার। মনে মনে তারা চায় পাকিস্তান জিতুক। এই মানুষেরাই আমাদের নেত্রীকে দিন-রাত গালাগাল করে। একদা বাম এখন বদলে যাওয়া এরা জাতিকে এমনভাবে বদলে দিতে চায় যাতে আমরা সমস্যা আর সমস্যার চাপে পাকি হয়ে উঠি। জানি না কেন? তবে এটাই তাদের গোপন এজেন্ডা। এদের চোখের বিষ যিনি তিনি আকাশে মাটিতে বার বার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেও আজ অপরাজেয়। পিতার আশীর্বাদ আর জনগণের ভালবাসায় টিকে আছেন। দেশের কল্যাণ সহজ বিষয় নয়। বিশেষত এইটুকু জমিতে সতেরো কোটির কাছাকাছি মানুষের বসবাস। কোন আইন করে আপনি তাদের সামলাবেন? তার ওপর আছে ধর্ম-অধর্ম আর নানা বিষয়ে দুর্নীতি। এটা সবাই জানে। সবাই ঘুষ খায়। সবাই অনিয়ম করে। আর দোষ দেয় তাঁকে। এ এক ফ্যাশন। ভাগ্যিস তিনি এসব কেয়ার করেন না। আমি বিদেশে প্রায় প্রতি বাড়িতে তর্কের সম্মুখীন হই। বেশিরভাগ মানুষের কাছে আধুনিকতা হলো উনার বিরোধিতা করা। যেন এটাই ধার্মিকতা। প্রশ্ন করেও উত্তর পাই না। কারণ, তাদের মনের ভেতর যে অন্ধকার সেটাই বিষয়। মূলত আলোকিত মানুষজন ছাড়া ভন্ড বুদ্ধিবৃত্তি আর সমালোচকরাই তার দুশমন। তাদের একটাই এজেন্ডা তাঁকে হটানো। খেয়াল করবেন এরা আওয়ামী লীগের ওপর যতটা বিতৃষ্ণা তারচেয়ে বেশি তাঁর ওপর। তারা খুব ভালভাকেই জানে অন্যদের বশীভ‚ত করা সহজ। বঙ্গবন্ধু কন্যকে তা করা যায় না। আমি বলি না তাঁর সবকাজ ঠিক। কিছু ভাল কিছু মন্দ এই তো মানুষ। কিন্তু পাল্লা যেদিকে ভারি সেদিকেই তো রায় দিতে হবে। সে কাজটা এরা করে না। আজ বিদেশে বিশেষত যেসব দেশ আয়-উন্নতি আধুনিকতায় এগিয়ে তারা তাঁকে মূল্যায়ন করা শুরু করেছে। যতদিন কোন নতুন রক্ত বা নেতৃত্ব তৈরি না হচ্ছে ততদিন তাঁর বিকল্প কোথায়? আপনি কি দলছুট স্বার্থপর বয়োবৃদ্ধ কিছু নেতরা কথায় কান দিয়ে দেশকে আবার পেছনে নিতে চান? তাহলে ফ্রন্টে যোগ দিন। সেসব বয়স্ক মানুষ যারা এককালে কিছু কাজ করে আমাদের নেতা হয়েছিলেন আজ তারা ক্লান্ত। তার চেয়েও বড় কথা তারা নিজেদের ভাল নিজেদের শেষ ইচ্ছা পূরণে বেপরোয়া। এদের কথা শুনলে দেশের বারোটা বাজতে বিলম্ব হবে না। আমরা নিশ্চয়ই তা চাই না। তারুণ্যের কাছে একটাই আবদার বিভ্রান্ত হয়ে দেশের যেন কোন লোকসান না করে তারা। আমাদের বয়স ও অভিজ্ঞতা বলে এবার সুযোগ পেলে যারা দেশ ও জনগণের জন্য হুমকি হবে তারাই তাদের নিয়ে খেলছে। এই খেলা আমাদের জাতিকে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট। তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন ধ্বংস করতে একদিনও সময় লাগে না। কিন্তু এখন যেটা মজার তিনি এগুলো পরিহার করতে জানেন। এখন এগুলো তাঁকে আর স্পর্শ করে বলে মনে হয় না। সিডনি সফরকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি তেল দেয়া তরুণ নেতাকে তিনি দল ভেঙে দোকান খোলার মতো অভিযোগ দিয়ে তিরস্কার করতেও কসুর করেননি। তাঁকে আবারও সামনে এনে জাতির স্বপ্ন পূরণের বিকল্প নেই। তারপর চলুক সমালোচনা চলুক নিন্দা। দোষ তাঁর, যা বিশ্বাস করেন তাই বলে ফেলেন। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা দূরে থাক, শূলে চড়ান। খোদ আমেরিকার চোখ রাঙানোর ধার ধারেন না। টুটা ফাটা জাতিসংঘের মুন মিয়ার অন্যায় আবদার রাখেন না। শহীদ মিনার বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি উদাসীন নোবেল ম্যানের মুখের ওপর সুদের কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়েন না। কেউ মনে করে প্রগলভতা তাঁর বড় দোষ। কারও মতে তিনি ভারতের কাছে দেশ বেঁচে দিতে চান। কেউ বলেন তিনি অতি ধার্মিক। আবার অসাম্প্রদায়িকতা আর পাকিস্তানের প্রতি কঠোরতার কারণে মধ্যবিত্তের সুবিধাবাদী অংশ তাঁকে পছন্দ করে না। কিন্তু এক বিষয়ে সবাই একমত। উনি তলাবিহীন ঝুড়িকে উপচেপড়া করবেন, উনি আকাশে মাটিতে জলে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দেশকে সবল করবেন, উন্নয়নের জন্য রাতদিন কাজ করবেন, আর তারা মহাআনন্দে তার নিন্দা করতে করতে দেশ ও সমাজ উপভোগ করবে। তিনি সবসময় ভাললাগার এমন বলি না। তবে শেখ হাসিনা হীন বাংলাদেশ অনিরাপদ, অনিশ্চিত ও অরক্ষিত।
×