ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমানে সমান

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১ অক্টোবর ২০১৮

 সমানে সমান

প্রধান প্রধান যোদ্ধাকে আহতাবস্থায় আরোগ্যশালায় রেখে চূড়ান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার কথা ভাবেন না কোন সেনাপতি। এশিয়া কাপ ক্রিকেটে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের দুই প্রধান ক্রিকেটার ইনজুরির কারণে বাদ পড়লেন। একজন পাঁজরের ব্যথা উপেক্ষা করেই দুটি দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন, যার একটিতে শতক এলেও অন্যটি মাত্র এক রানের জন্য শতক থেকে বঞ্চিত হয়। অপরদিকে অধিনায়কের হাঁটু একের পর এক ছুরি চিকিৎসায় কিছুটা ফিটনেসের ঝুঁকিতে বরাবরই। দুই প্রধান যোদ্ধাকে মাঠের বাইরে রেখে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে বাংলাদেশ দল ধাপে ধাপে শেষ পর্যন্ত উঠে আসে ফাইনালে। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতো দুটি শক্তিধর প্রতিবন্ধক ছিল তাদের সামনে। ছিল এই টুর্নামেন্টেই আফগানিস্তানের কাছে বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের জখম। কিন্তু টাইগার বলে খ্যাত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শেষ পর্যন্ত সব বাধা ডিঙ্গিয়ে শক্তিমান প্রতিপক্ষ টিমগুলোকে হারিয়ে উঠে আসে ফাইনালে। এই লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রা থেকেই টাইগারদের আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে দলে অন্তর্ভুক্ত তরুণ একাধিক ক্রিকেটারের যথাযোগ্য আত্মনিয়োগ এবং অধিনায়ক মাশরাফির ক্রিকেটবুদ্ধি তথা সুপরিকল্পিত ক্যাপটেন্সির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যদিও শেষ পর্যন্ত ট্রফি জয়ের স্বপ্নটি এবারও অধরা থেকে গেছে, তারপরও বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে সদ্যসমাপ্ত এই এশিয়া কাপ। অভিনন্দন অধিনায়ক। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সীমিত ওভারের ম্যাচে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে যদি শেষ বলটি পর্যন্ত খেলতে হয় তাহলে এটা সহজেই অনুমানযোগ্য যে, খেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছে। এখানে দুদলই সমানে সমান। শুধু ফল পেতে শেষ বলটির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল ম্যাচে এমন বাস্তবতা আনকোরা নয়। চলতি বছরেই অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের উদাহরণটি তাই বারবার সামনে চলে এসেছে এশিয়া কাপের ফাইনালের শেষ ওভারের নাটকীয়তায়। বলাবাহুল্য, সেই ম্যাচেও বিজয়ী হয়েছিল ভারত। এবারও হলো। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ দল তাদের জন্য এখন কম্পমান অস্বস্তিরই নাম। এশিয়া কাপে তিনবার এবং অন্য টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সর্বমোট ছয়বার ফাইনালে খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ার ধারাবাহিকতা থেকে বাংলাদেশ কেন বেরুতে পারছে না সেটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চাই। তবু স্বীকারে কুণ্ঠিত নই যে, শেষ পর্যন্ত টাইগাররা হার না মানা এক লড়াকু চরিত্র বজায় রেখে প্রতিপক্ষের ঘাম ঝরিয়ে তাদের স্নায়ুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে মানসম্পন্ন ক্রিকেটই উপহার দিয়েছে। তাই ফাইনালের হারটিকে আমরা জয়তুল্যই আখ্যা দিতে চাই। ফাইনালে তরুণ খেলোয়াড় লিটন দাসের হার না মানা সেঞ্চুরি এবং মাশরাফি-মুস্তাফিজ-রুবেলসহ প্রত্যেক বোলারের নিয়ন্ত্রিত ও আক্রমণাত্মক বোলিং (ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের একটিও অর্ধশতক হলো না!) ছিল ফাইনালের মাঠে টাইগারদের চোখ জুড়ানো নান্দনিক দিক। তবে অভিজ্ঞ পরমনির্ভর দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল বেশি। সেক্ষেত্রে আশাভঙ্গ হয়েছে বৈকি। তা না হলে বাংলাদেশের স্কোর আড়াই শ’ বা তার ওপরে না যাওয়ার কোন কারণ ছিল না। এ ছাড়াও আম্পায়ারের একটি অন্যায্য সিদ্ধান্তের কথা ভোলার নয়। এই টুর্নামেন্ট থেকে যেমন আমাদের বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জন ঘটেছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে দলের দুর্বলতাগুলোও সামনে চলে এসেছে। এ দিকগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করতে হবে বেশি করে এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য খেলোয়াড়দের উদ্যোগী ও কঠোরভাবে চেষ্টাশীল হতে হবে। ভারতসহ এশিয়ার প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশই এখন বাংলাদেশকে সমীহের দৃষ্টিতে দেখছে। শাবাশ বাংলাদেশ দল। আমরা চাই এশিয়া কাপের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরও পরিণত ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠুক।
×