ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অমল আচার্য

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন

মহিষের দুধ দেশে দুগ্ধজাত পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে এবার উন্নত জাতের মুররাহ মহিষ ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে আনা হয়েছে। এতে প্রান্তিক চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। মহিষ লালন-পালন করে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আন্তর্জাতিক গবেষণায় এবং আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে যেখানে পুষ্টিকর খাদ্য দুধের ক্ষেত্রে মহিষের দুধ ভারতে শতকরা ৫৮ ভাগ, পাকিস্তানে শতকরা ৬৩ ভাগ এবং নেপালে শতকরা ৭৪ ভাগ অবদান রাখছে সেখানে বাংলাদেশে এর অবদান মাত্র শতকরা ৪ ভাগ। অথচ আমাদের এখানে প্রাকৃতিকভাবেই মহিষের দুধ ও মহিষ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দরকারী সকল সুযোগ বিদ্যমান। তাই দেশে দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে মাদারীপুরের টেকেরহাট ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে গড়ে তোলা হয়েছে মহিষের খামার। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে উৎসাহী কৃষকদের ভিড় লক্ষ্য করার মতো। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, ‘উন্নত জাতের মহিষ প্রজননের মাধ্যমে মহিষ উৎপাদন বাড়বে এবং তৃণমূলে কর্মসংস্থান বাড়াবে। প্রান্তিক চাষীদের জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পাবে। ’জানা গেছে, আড়াই লিটার গরুর দুধ থেকে যে পরিমাণ ক্ষির-মাখনসহ দুগ্ধ জাতীয় পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায় সেই সমপরিমাণ দুগ্ধ উপাদান মাত্র ১ লিটার মহিষের দুধে পাওয়া যায়। এজন্য সরকার গরুর পাশাপাশি মহিষের আধুনিক খামার গড়ে তুলবার প্রয়োজন বোধ করছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বৈধভাবে ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে দুই শ’ মহিষ আমদানি করা হয়েছে। দুই হাজার পাঁচ শ’ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার কার্নাল জেলা থেকে আমাদের এখানে আসা এসব মহিষের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে মিল্কভিটা। গ্রামীণ এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠী ও সমবায় কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার এ প্রকল্প হাতে নেয়। ১৮ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে মাদারীপুরের টেকেরহাটে একটি উপকেন্দ্র (শুধু খামার), অপরটি রায়পুরে রয়েছে। এই বিনিয়োগের মধ্যে সরকার দিয়েছে ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং মিল্কভিটা অনুদান দিয়েছে ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা । ভারত থেকে বৈধভাবে আমদানি করা মহিষের মধ্যে রায়পুর কেন্দ্রে গত ৩১ ডিসেম্বর ও ১০ মে মুররাহ জাতের ৮৭টি মহিষ ও ৫০টি বাছুর আমদানি করা হয়, এর মধ্যে ২৭টি মহিষ গর্ভবতী। এই কেন্দ্রে আরও ১০০ মহিষ আমদানি করা হবে। জানা গেছে, মাদারীপুরের টেকেরহাট মুররাহ মহিষ প্রকল্পে ৮৭টি মহিষ আনা হয়েছে। এটাতে দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে পাবনা থেকে দক্ষ কর্মী আনা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রেই গিয়ে দেখো গেছে, মহিষগুলোকে ঘাসের পাশাপাশি দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, ভুট্টা, সয়াবিন খৈল, তিলের খৈল, খেসারির ভূষি, ক্যালসিয়াম পাউডার ও ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স রয়েছে। জানা গেছে, মেঘনা উপকূলীয় চরাঞ্চল মহিষ চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা মুররাহ জাতের মহিষ দিনে ৭ লিটার দুধ দেয়। বাচ্চাগুলো দিনে প্রায় আড়াই থেকে তিন লিটার দুধ পান করে। ঘাস খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা দুধের ওপরই নির্ভর থাকে। ফার্মের সঙ্গে সংযুক্তরা জানান, উন্নত মানের খাদ্য সরবরাহ করায় অন্যান্য দেশে এসব মহিষ ১৫ থেকে ২০ লিটার দুধ দেয়। দেশীয় জাতের মহিষ দৈনিক দুধ দেয় ২ লিটার। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, মহিষ প্রজননে সাফল্য পেতে কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ করতে হবে। এতে রায়পুর কেন্দ্রের মহিষের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কৃষকরা লাভবান হবেন। লক্ষ্মীপুরের উপকূলে অনেক ঘাস জমি রয়েছে। রায়পুরে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের তত্ত্ববধায়ক ডাঃ মোঃ ফরহাদুল আলম বলেন, ‘আমাদের সমবায়ীদের পালনের জন্য উন্নত জাতের এসব মহিষ দেয়া হবে। এতে দুধ ও মাংসের উৎপাদনে নতুন বিপ্লব ঘটবে। এতে সমবায়ীরা চরে মহিষ পালন করেও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু বলেন, ‘দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এসব প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণবান্ধব সরকার সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য তৃণমূলের দিকেও সুনজর রাখছেন। প্রাণবন্ত ও দেশপ্রেমিক মানুষ চেয়ারম্যান লিপু আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে দিনবদল করতে হলে, মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনতে হলে এবং এদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল সেক্টরকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
×