ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ছাত্রলীগের অনন্য উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ছাত্রলীগের অনন্য উদ্যোগ

রাকিব আর রাসেল যমজ ভাই। ঢাকায় এসেছে মাগুরা জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নেয়া। কিন্তু পরীক্ষার দিনই তাদের পড়তে হয় ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র খুঁজে না পাওয়ার বিড়ম্বনায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা কেন্দ্রের নাম খুঁজে পায়। কিন্তু ততক্ষণে ঘড়িতে সকাল ৯টা ৫৫। আর পাঁচ মিনিট পরই শুরু হবে পরীক্ষা। ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ পড়তেই হতভম্ব হয়ে পড়ে দু’ভাই। এমন সময় দুই মোটর বাইক আরোহী তাদেরকে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রথমে তারা ইতস্তত বোধ করলেও উপায়ন্তর না দেখে সেই মোটরসাইকেলেই চড়ে বসে। তারা নির্দিষ্ট সময়েই কেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষায় অংশ নেয়। শুধু এই ঘটনাই নয়, এভাবে ভর্তি পরীক্ষার সময় নীলক্ষেত মোড়, পলাশী মোড়, শাহবাগ মোড়, দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের নিদিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছাতে সাহায্য করছে বেশ কিছু মোটরবাইক আরোহী। তাদের পরিচয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’। শুধু ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’ই নয়, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ‘তথ্যপ্রদান ও শিক্ষার্থী সহায়তা কেন্দ্র’, ‘সুপেয় পানির ব্যবস্থা’ ‘ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম’ ও ‘অভিভাবকদের জন্য বিশ্রামাগার’-এর মত্যে প্রশংসনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবারÑ যা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। এই প্রশংসনীয় উদ্যোগের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ক্যাম্পাসের ৫০টি স্থানে বসানো হয়েছে ছাত্রলীগের তথ্যপ্রদান ও শিক্ষার্থী সহায়তা কেন্দ্র, যেখান থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা নিজেদের আসন ব্যবস্থা, কেন্দ্রের অবস্থান ও অন্যান্য তথ্য জানতে পারছেন; পাশাপাশি সঙ্গে আনা ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও হাতঘড়ি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নিরাপদে জমাও রাখতে পারছেন। প্রয়োজনে কলমও সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের এসব সহায়তায় দায়িত্ব পালন করেছে বিভিন্ন হল ও অনুষদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির দীক্ষায় দীক্ষিত। তাই আমরা মূলত নিজেদের দায়িত্বের জায়গা থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা নিজেরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই বর্তমান শিক্ষার্থীরা যেন কোন বিড়ম্বনার সম্মুখীন না হন সে জন্যই আমাদের এই পদক্ষেপ। সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষাবান্ধব করতে আমরা সব সময় আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবো। বিগত সময়ের কিছু অনিয়মকেও আমরা নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর যে কোন বিপদে পাশে দাঁড়াবে ঢাবি ছাত্রলীগ। আফসানা চৌধুরী নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘ভাইয়ারা ডেকে ডেকে সবাইকে পানি খাওয়াচ্ছেন, বিষয়টি দেখতেই ভালো লাগছে। উনারা রাজনীতি করেন, নানা কারণে রাজনীতিকে আমরা অনেকেই নেতিবাচকভাবে দেখি। তবে পরীক্ষা দিতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইয়া-আপুদের যে আন্তরিকতা দেখলাম তা এক কথায় অসাধারণ। আমরা চাই সবাই এমন রাজনীতিই করুক।’ আফসানার বাবাও ছাত্রলীগের এ ধরনের সেবামূলক কর্মকাণ্ডে খুশি। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের অনেক কার্যক্রমে ছাত্ররাজনীতির প্রতি একটা বিরক্তি কাজ করছিল। তবে ছাত্রদের এরকম মানবিক কাজ করতে দেখলে খুব ভাল লাগে। এই ধরনের ইতিবাচক মানসিকতার সংগঠনই আমরা চাই।’ ছাত্রলীগের এরকম সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করতে শোনা যায় অপরাপর অভিভাবকদেরও। কলা ভবনের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন অভিভাবক। তাদের বলতে শোনা যায়, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এরকম কাজ করে গেলে দেশ পরিবর্তন হওয়াটা সময়ের ব্যাপার। আর এটাই তো ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, তারা এসেছেন খুলনা থেকে।’ বহু অভিভাবক জানালেন, আমাদের পরীক্ষার হল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছিল। কয়েকজন ছেলে এসে আমাদের সহায়তা করল। পরে জানলাম এরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা আমাদের পানী ও কলম দিল। ভর্তি পরীক্ষার্থী আফ্রিনের পিতা সাজ্জাদ হাওলাদার বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আমার মেয়ে কলম নিয়েই বের হয়। তাই মেয়েকে একটু কর্কশ সুরে কথা বলায় ছাত্রলীগ কর্মীরা দূর থেকে বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। তারপর তারা আমাদের হাতে কলম তুলে দেয়। যা আমার আজীবন মনে থাকবে। সাজ্জাদ বলেন, এরকম ছাত্র নেতৃত্বই তো আমাদের প্রত্যাশাÑ যারা সাধারণদের জন্য কাজ করবে। জানা গেছে, পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
×