ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাম্পাস আড্ডা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্যাম্পাস আড্ডা

‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই/কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই/আজ আর নেই...’ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন কিংবা করছেন অথচ মান্না দের গাওয়া এই গান শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর আড্ডা দিতে ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া এক কথায় অসম্ভবই বলা যায়। আর যদি সে হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী তবে তো কোন কথাই নেই। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আড্ডাবাজি চলবে যে কোন সময়। তবে জাবিতে এই আড্ডাবাজি কিন্তু মান্না দের মধুর ক্যান্টিনের মতো শুধু এক জায়গাতেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকবে না। ৬৯৭.৫৬ একরের যে কোন স্থানই হয়ে উঠতে পারে একটি জম্পেশ আড্ডার উপলক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, টারজান পয়েন্ট, অমর একুশে, কাফেটারিয়া, মুক্তমঞ্চ, সপ্তম ছায়ামঞ্চ, টিএসসি, জহির রায়হান অডিটরিয়াম, ছবি চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, লাইব্রেরি, বটতলা, সুইজারল্যান্ড, ট্রান্সপোর্ট এলাকা, মুন্নী চত্বর, মুরাদ চত্বর, ডেইরি গেট থেকে প্রান্তিকের চায়ের দোকান, হলরুম থেকে ক্লাসরুমÑ কোথায় হয় না আড্ডা? অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। যার রয়েছে একটি চির সবুজ ক্যাম্পাস। রয়েছে কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন। যেগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠে বন্ধুত্বের এক অকৃত্রিম মেলবন্ধন। আর এই বন্ধুত্বের গল্পগুলো জমে ওঠে আড্ডায় আড্ডায়। ফলে শত সমস্যা থাকলেও মুখ ভার করে থাকার অধিকারটুকু হারিয়ে ফেলে জাবির শিক্ষার্থীরা! সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ কথাটিকে টেক্কা দিতে জাবিতে বারো মাসে কি পরিমাণ পার্বণের হাট যে বসে তার সংখ্যা করাটাও কিন্তু বেশ কঠিন কাজ। আর সে সব অনুষ্ঠান ঘিরে আড্ডায় আড্ডায় মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। প্রেম-ভালবাসা, ক্লাস-পরীক্ষা, রাজনীতি-অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা, নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা সবই উঠে আসে এসব আড্ডাবাজিতে। তথ্যের আদান-প্রদানের পাশাপাশি যা হয়ে ওঠে নির্মল বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম। জাবির সাংবাদিকতা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু ইসলাম বলেন, আড্ডাবাজি আসলে জাবি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাকৃতিকভাবেই বিদ্যমান। পরিবার-পরিজন থেকে শত শত মাইল দূরে থাকলেও বন্ধুদের সঙ্গে ক্ষণিকের আড্ডাবাজি সে সব দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে দেয় এক নিমিষেই, যা পড়াশোনার ক্ষেত্রে তৈরি করে গতিময়তা। শুধু বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই নয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও কিন্তু একইভাবে মিস করেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসকে। সবুজ শ্যামল ক্যাম্পাসে কাটানো টুকরো টুকরো মধুর স্মৃতি তাদের মনে দোলা দিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। প্রতি বছরই অশ্রুজলে নিজেদের ভাসিয়ে ক্যাম্পাসকে বিদায় জানান হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের হৃদয়জুড়ে থাকে ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি আর বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো হাজারো আনন্দময় মুহূর্ত। আবার একইভাবে ক্যাম্পাসে আগমন ঘটে হাজারো নবীনের। নতুনভাবে আড্ডায় আড্ডায় মুখরিত হয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তর। বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে মান্না দের কালজয়ী কণ্ঠ... ‘সেই সাতজন নেই তবু টেবিলটা আজো আছে/সাতটা পেয়ালা আজ খালি নেই/ একই সে বাগানে আজ এসেছে নতুন কুড়ি /শুধু সেই সেদিনের মালি নেই।’ শরিফুল ইসলাম সীমান্ত
×