ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রফি না পেলেও বিশ্বের হৃদয় জয় করেছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ট্রফি না পেলেও বিশ্বের হৃদয় জয় করেছে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ গর্ব করার মতো নৈপুণ্যই হয়েছে। ফাইনালের মতো ম্যাচে ভারতের সামনে ২২৩ রানের টার্গেট দিয়েও শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচ উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত শিরোপা জেতা আর হয়নি। তবে এশিয়া কাপে বিশ্ব ক্রিকেটের হৃদয় জিতেছে বাংলাদেশ। হৃদয় দিয়ে যে খেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাইতো বলেছেন, ‘হৃদয় দিয়ে খেলেছি।’ সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমরা ব্যাট আর বলে কিছু ভুল করেছি। আপনি যদি আমাদের বোলিংয়ের দিকে দেখেন, আমরা যখনই ২৪০-এর বেশি রান করেছি সেই ম্যাচই জিতেছি। ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোলাররা দারুণ করেছে।’ ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটেরই জয় হয়েছে। সেটি হয়েছে বাংলাদেশ এত সুন্দর ক্রিকেট খেলায়। তামিম, সাকিব ছাড়াও ভারতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। মাশরাফির কাছে এখনও শেখার হিসেব আছে। তবে যা খেলা হয়েছে তাতে গর্ব করছেন মাশরাফি, ‘হ্যাঁ, ছেলেরা যেভাবে খেলেছে গর্ব করাই যাই। তবে আমাদের আরও অনেক কিছু শিখতে হবে। এই ধরনের টুর্নামেন্টে আমাদের এখনও লড়াই করতে হচ্ছে। টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাটিং ততটা ভাল হয়নি। ফাইনালে এত ভাল শুরুর পর আরও বড় স্কোর গড়া উচিত ছিল। বোলাররা প্রায় সব ম্যাচেই ভাল করেছে। ফাইনালেও চেষ্টা করেছে। অবশ্যই গর্ব আছে। তবে এখান থেকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সাকিব ও তামিমকে না পাওয়া ছিল অবশ্যই বড় ধাক্কা। ওদের ছাড়াও দল যেভাবে খেলেছে তাতে ছেলেদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। তবে যেটা বললাম, আরেকটু ভাল খেললে আরও ভাল হতে পারত।’ এশিয়া কাপের সর্বশেষ চার আসরের তিনটিতেই ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তিনটিতেই রানার্সআপ হয়েছে। এ বছরই আবার এ নিয়ে তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে, নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে এবং শুক্রবার এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার কারণও আছে। ফাইনালের আগে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ওপেনাররা কিছুই করতে পারছিলেন না। ফাইনালে এসে ১২০ রানের জুটি গড়লেন। কিন্তু এদিন ব্যর্থ হলেন বাকিরা। বিশেষ করে মাঝখানের সারির ব্যাটসম্যানরা তো ব্যর্থতা দেখিয়েছেন। মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল, মিঠুন তো দুই অঙ্কের ঘরেই পৌঁছাতে পারেননি। আর তাই বাংলাদেশও ২২২ রানের বেশি করতে পারেনি। এরমধ্যে লিটন একাই ১২১ রান করেন। মাশরাফি তাই বলেছেন, ‘একটা পর্যায়ে ২১ ওভারে ১২০ রানের মতো হয়ে গিয়েছিল। ওই জায়গা থেকে সহজেই আমরা এমনকি তিন ’শ প্লাস করতে পারতাম। কিন্তু মিডলঅর্ডারে ওইরকম ইন্টেন্ড দেখা যায়নি। মুশফিকের হয়তো শটের এক্সিকিউশন ঠিকমতো হয়নি। অন্যরা যারা, বিগ শটে খেলে আউট হয়েছে। ইতিবাচক মনোভাব দেখানো মানে এই না যে বড় শট খেলতে হবে। এছাড়া রানআউট যেগুলো হলো। এইগুলো প্রভাব ফেলেছে। আমরা চেয়েছিলাম ঝুঁকিহীন খেলে রান বাড়াতে, সেটা হয়নি।’ বাংলাদেশ আবার পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি। ৪৮.৩ ওভার খেলতে পেরেছে। অলআউট হয়েছে। হাতে ছিল ৯ বল। সেই ৯ বলে ১০ রান হলে ২৩২ রান আসত। ভারতকে যেভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। শেষ বলে গিয়ে জিততে হয়েছে ভারতকে। তাতে করে এই রান হলে শিরোপার জেতার স্বাদও প্রথমবারের মতো মিটতে পারত। আর স্পিনারদের ব্যর্থতা আছেই। দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার থাকেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল ইসলাম অপু। কিন্তু দুইজন ব্যর্থ হন। মিরাজ চার ওভারে ২৭ রান দেয়ায় তাকে আর বল দেয়ার সাহস করেননি অধিনায়ক। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু পুরো ১০ ওভারই করেছেন। কিন্তু লো স্কোরিং ম্যাচে দিয়ে ফেলেন ৫৬ রান। ভারতের স্পিনারদের সাফল্য দেখে আশাবাদী হওয়া মাশরাফি বোকা বনেছেন নিজেদের বেলায়, ‘প্রথম ইনিংসে স্পিন হচ্ছে উইকেটে। তখন তো স্পিনারদের ভরসা করবেন। পুরো টুর্নামেন্টে মিরাজ সেরা বোলার, মাহমুদুল্লাহ লাস্ট ম্যাচে বেস্ট বল করেছে। আমাদের শুধু দরকার ছিল ১০টা ওভার বের করা ওইখানে। যেটা আমরা করতে পারছিলাম না ওইসময়। আমার মনে হয় অপু আরেকটু বেটার বল করতে পারত। যে কোন স্পিনার যদি সাপোর্ট দিত ম্যাচটা হয়তো কঠিন হতো না। তবু ২২২ রান করে বোলারদের দোষ দিতে পারেন না।’ মাশরাফি বিন মর্তুজা দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেও মুগ্ধ বিশ্ব ক্রিকেট। তিনি যে ভঙ্গুর একটি দলকে নিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছেন। মাশরাফিকে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা তো ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য এশিয়া কাপ’ বলেই দিয়েছেন। টুইটারে রমিজ জানিয়েছেন, ‘এশিয়া কাপ ২০১৮ একটি অসাধারণ ফাইনাল। রোহিত একজন দারুণ নেতা কিন্তু আমার কাছে ক্যাপ্টেন অব দ্য টুর্নামেন্ট মাশরাফি মর্তুজা। সে সাকিব-তামিমের অভাব বুঝতে দেননি দলে। তারা প্রায় সফল হয়ে গেছিল।’ বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। তিনি টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন, ‘এশিয়া কাপে সপ্তম শিরোপা আমাদের। গত রাতে কঠিন ম্যাচ জেতার জন্য দুর্দান্ত কাজ করেছে ছেলেরা। বাংলাদেশকেও অভিনন্দন কঠিন লড়াইয়ের জন্য।’ ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সেবাগ ও ভিভিএস লক্ষণও বাংলাদেশকে টুপি খোলা অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেবাগ টুইটারে লিখেছেন, ‘এত কাছে তবু কত দূরে, বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের চাম্পিয়ন হওয়ায় ভারত দলকে অভিনন্দন। সাকিব এবং তামিমের অনুপস্থিতিতেও যেভাবে হার না মানা মানসিকতা ও উজ্জীবিত লড়াই উপহার দিয়েছে, সে জন্য বাংলাদেশকে টুপি খোলা অভিনন্দন। এই জয় সত্ত্বেও ভারতের আরও উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আশা করি ওরা আরও করবে।’ ভিভিএস লক্ষণ লিখেছেন, ‘এশিয়া কাপ জেতায় ভারতকে অভিনন্দন। সাকিব এবং তামিম না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখিয়ে দুর্দান্ত লড়াই উপহার দিয়েছে এবং নিজেদের শেষ শক্তি দিয়ে লড়েছে এ জন্য তাদের টুপি খোলা অভিনন্দন।’ বাংলাদেশ শিরোপা জিততে না পারলেও হৃদয় ঠিকই জিতে নিয়েছে।
×