ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙ্গনে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক পরিবার

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙ্গনে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনে এবার লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের ৫৩টি ভিটা বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নটির খড়িয়া গ্রামের ১ ও ২ নং ওয়ার্ড দুটির ৫৩টি পরিবার পদ্মার ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। মাস ধরে থেমে থেমে এই ভাঙ্গনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভাঙ্গনের মুখে থাকা পরিবারগুলোর। ভাঙ্গন রোধে এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনও সরকারীভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। গত কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হলেও ভাঙ্গনরোধে কার্যকরী তেমন কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। তাই এলাকাবসীর দাবি ভাঙ্গনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে তাদের রক্ষা করবে সরকার। খড়িয়া গ্রামের ভাঙ্গন কবলিত মোঃ রফিক মোল্লা বলেন, আমরা কোন ত্রাণ চাই না। চাই না আর্থিক সহযোগিতা। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি নদী শাসন করে আমাদের পৈত্রিক ভিটা বাড়ি রক্ষা করা হউক। আমাদের পৈত্রিক ভিটামাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে এর থেকে কষ্ট, দুঃখ আর কি হতে পারে। সরকারের কাছে অনুরোধ নদী ভাঙ্গনরোধ করে আমাদের যেন রক্ষা করা হয়। একই গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম শেখ বলেন, কিছুদিন যাবত পদ্মার ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে আমার আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরবাড়ি সর্বনাশা পদ্মায় বিলীন করে নিয়েছে। গত শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে আমার পাশের ঘরবাড়িগুলো নদীতে ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি এবং আমাদের এলাকার অনেক লোক সে ঘরবাড়ি সরানোর আগেই সর্বনাশা পদ্মায় রাহুল গ্রাসে বিলীন হয়ে যায় বাড়িঘর। আমরা আজ অসহায়, আতঙ্কের মাঝে থাকি সব সময়। কখন বুঝি আমার ঘরবাড়িগুলো নিয়ে যায়। আমাদের আত্মীয়-স্বজন একেক জন একেক দিকে চলে গেছে। তাদের সঙ্গে আর কখনও দেখা হবে কি না জানি না। আগের মতো আবার এক সঙ্গে থাকতে পারব কি না সে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানে। কষ্ট তো আমাদের একটাই, আমরা অসহায়, আমাদের দেখার কেউ নেই। মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ চলছে। সেতুর হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সঙ্গে সামান্য কিছু টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে নদী শাসনের কাজটা একটি নিচের দিকে বাড়িয়ে দিলে আমাদের এ এলাকা পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রক্ষ পেত। বেঁচে যেত আমাদের বাপ-দাদার ভিটে বাড়িসহ হাজারো এলাকাবাসী। এ বিষয়ে কুমারভোগ ইউনিয়নের ২ নং খড়িয়া ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেন জানান, ঈদের পর থেকেই ভাঙ্গছে খড়িয়া গ্রামটি। খড়িয়া গ্রামের দুটো ওয়ার্ডে এ বছর অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন। কুমারভোগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান তালুকদার জানান, এ বছর নদী ভাঙ্গনে খড়িয়া গ্রামের দুটি ওয়ার্ডের ৫৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ২শ’ ৪০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ একটি পাকা দ্বিতল বাড়ি, একটি পাকা মসজিদ ও নয়টি নলকূপ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। আমার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সামান্য সাহায্য সহযোগিতা করেছি। তবে সরকারী অনুদান ও খাস জমি পেলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারগুলোকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া সম্ভব হতো। ইতোমধ্যে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
×