ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শাহদীন মালিক উদ্বিগ্ন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শাহদীন মালিক উদ্বিগ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন হলে দেশে বাক স্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকবে না। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ : আশঙ্কায় মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক এ মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার’র সঞ্চালনায় সভায় আলোচনায় অংশ নেন ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা সভায় শাহদীন মালিক বলেন, আমার কাছে সব থেকে কষ্ট লেগেছে, মিডিয়া শুধু ৩২ ধারায় সাংবাদিকতায় গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে গিয়ে আইনের ভয়াবহ দিকগুলো থেকে আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে দিয়েছে। এই আইনের পরে হয়ত বাক স্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকবে না। আইনের ১৪ টি ধারায় কোন জামিনের বিধান রাখা হয়নি। মাইকের সামনে কথা বললে হয়ত বাক স্বাধীনতা থাকবে। তবে সমস্যা হবে মিডিয়া যদি কম্পিউটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা প্রকাশ করে তখন আবার কি কনসিকুয়েন্স হবে? হয়ত মাইকে বললে আইনী কিছুটা তর্ক করতে পারব যে কম্পিউটারে আমি কিছু প্রকাশ করিনি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার ১৭৯১ সালে অর্থাৎ সোয়া দু’শ বছর আগে আমেরিকার গণতন্ত্রে যেতে আমাদের আরও কয়েক শ’ বছর লাগবে সেটা আমি চিন্তা করছি। কারণ ১৭৯১ সালে আমেরিকার সংবিধানে বলা হলো- বাক স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে এমন কোন আইন কংগ্রেস করতে পারবে না। এখন আমরা চিন্তা করি আমেরিকার ১৭৯১ সাল থেকে আমরা কত পিছিয়ে আছি। আমেরিকার সোয়া দুই শ’ বছর আগের গণতন্ত্রে হয়ত আমি যেতে পারব না। কিন্তু দুই-একটা বিষয়ে কথা বলতে পারব, সে অধিকারটাও আমার থাকবে না’ যোগ করেন শাহদীন মালিক। হ্যাকিংয়ের বিষয়ে একটা আইন করার দরকার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কম্পিউটার হ্যাকিং-সংক্রান্ত একটা আইনের দরকার ছিল। এ আইনে ওই সংক্রান্ত কিছু ধারা আছে। যেটার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এর সঙ্গে সব ধরনের কথা বলাটা কেমন করে চলে আসল? কম্পিউটারের বিষয়ে শাস্তির পাশাপাশি আমার মনে হয় এর পেছনে বড় উদ্দেশ্য ছিল কথা বলা বন্ধ করা। শাহদীন মালিক বলেন, অনেক কিছু আইনে হয়ে যায়, আমরা খেয়াল করি না। বিশাল ভূমিকম্প হয়ে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও কিন্তু ভূমিকম্প হয়ে গেছে। বাক স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে। আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার অধিকাংশ পাইরেটেড কপি। আপনি যাই লিখেন, চাইলে পাইরেটেড সফটওয়্যার দিয়ে আপনি লিখেছেন বলে এই আইনে একটি অপরাধ করে দিতে পারে। সুতরাং এটা সাংঘাতিক ভয়াবহ অবস্থা হয়ে গেছে। অনেকে দেখলাম রাষ্ট্রপতির কাছে সই না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি যতদূর জানি আবদুর রহমান থেকে আবদুল হামিদ পর্যন্ত ৩০ বছরে শুধু একজন রাষ্ট্রপতি একটা বা দুইটা আইনের ধারাতে আপত্তি দিয়েছিলেন। এখন আমরা এই রাষ্ট্রপতির কাছে অনুনয় বিনয় করছি। সম্পাদক পরিষদের এই ছেলেমানুষি দেখে আমি অবাক হচ্ছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলন, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম সব থেকে বেশি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে শাস্তি অন্যদের তুলনায় ভয়াবহ। যেখানে ভারত বা পাকিস্তানে শাস্তি দুই বছর। একই অপরাধে বাংলাদেশে শাস্তি যাবজ্জীবন। এটা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।
×