ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে, ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বিএনপি ॥ ঢাকা মহানগর উত্তর

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে, ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বিএনপি ॥ ঢাকা মহানগর উত্তর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্দোলন-সংগ্রাম ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বলে খ্যাত ঢাকা মহানগরের প্রতিটি আসনই বড় রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী যে দলটির দখলে থাকবে, সারাদেশই বলতে গেলে তাদের দখল থাকবে। এদিক বিবেচনায় সারাদেশের মতো ঢাকা মহানগরীতেও নির্বাচনী দমকা হাওয়া বইছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতায় সংসদীয় আসনের সংখ্যা মোট ৮টি। এগুলো হচ্ছেÑ ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭ এবং ঢাকা-১৮। এই ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। অপরটিতে সংসদ সদস্য রয়েছেন বিএনএফের। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগরের ৮টি আসনই নিজেদের বিজয় ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। শরিক দল জাতীয় পার্টি ও বিএনএফ চাইছে একটি আসনে ভাগ বসাতে। রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ ৮টি আসনেই সাংগঠনিকভাবে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হলেও একাধিক প্রার্থিতার কারণে অনেক আসনেই আওয়ামী লীগের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ। টানা সাড়ে ৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এই ৮টি আসনেই সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হলেও দলটি চাইছে আওয়ামী লীগের বিভেদ ও কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলও বলছে, নির্বাচনের আগেই যে দলটি দলের বিভেদ ও দ্বন্দ্ব নিরসন করে একক প্রার্থী নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে পারবে নির্বাচনী ফলে তারাই এগিয়ে থাকবে। তবে প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকায় ঐক্য সৃষ্টিতে সামান্য উদ্যোগ নিলেই সব আসনেই নির্বাচনী ফলাফলে এগিয়ে থাকবে তারা। ঢাকা-১১ (বাড্ডা-রামপুরা-ভাটারা) ॥ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি অনেকটাই আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে খ্যাত। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি কেন্দ্রীয় নেতা একেএম রহমতুল্লাহ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রহমতুল্লাহ পঞ্চমবারের মতো এ আসনের এমপি হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ আসনে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওসমান গণি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিলেও সম্প্রতি তিনি মারা যান। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান এমপি রহমতুল্লাহ। অন্যদিকে মহাজোট থেকে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এই আসন (তৎকালীন ঢাকা-৫) প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রহমতুল্লাহ। আওয়ামী লীগে যোগদানের পর তিনি ১৯৯৬ সালে বিএনপির মেজর (অব.) কামরুল ইসলামকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার, ২০০৮ সালে বিএনপির এমএ কাইয়ুমকে পরাজিত করে তৃতীয়বার এবং সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পঞ্চমবারের মতো নৌকার প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম। এখন পর্যন্ত তিনিই এ আসনে দলটির একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে বিদেশী নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যাসহ একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে কাইয়ুম দীর্ঘদিন ধরেই মালয়েশিয়ায় পালিয়ে রয়েছেন। আইনী জটিলতায় তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তাঁর স্ত্রী শামীম আরা বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। ঢাকা-১২ (তেজগাঁও-শিল্পাঞ্চল-শেরেবাংলা নগর-রমনা আংশিক) ॥ আগামী নির্বাচনেও এ আসনে মনোনয়ন পাবেন বর্তমান এমপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও প্রভাবশালী এ নেতার পক্ষে একাট্টা। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেক্কা দিয়ে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি এইচবিএম ইকবাল ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী। ২০০৮ সালে বিএনপির শাহাবউদ্দিনকে পরাজিত করে প্রথমবার এমপি হন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বছরখানেক পর গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। গুরুত্বপূর্ণ এ আসন হওয়ায় প্রার্থীদের দিকে বিশেষ মনোযোগ সবার। এ আসনে স্থানীয় অধিবাসীদের চেয়ে অস্থানীয়রা (বৃহত্তর নোয়াখালী-কুমিল্লা-বরিশাল) জয়-পরাজয় নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গত দুই নির্বাচনের মতো এবারও বর্তমান এমপি আসাদুজ্জামান কামালের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সৎ, সজ্জন ও ভাল মানুষ হিসেবে সুপরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় স্থানীয় ভোটারদের মধ্যেও আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, কিন্তু ন্যূনতম সমালোচনা শোনা যায়নি তাঁর বিরুদ্ধে। দলীয় রাজনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সবদিক বিবেচনায় এই আসনে আসাদুজ্জামান খান কামালের বিকল্প নেই বললেই চলে। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির রয়েছে একাধিক প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় যোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতার নাম থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিপাকে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এ আসনটি বিকল্পধারা বাংলাদেশকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির শাহাবউদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে পরাজিত হন। এই আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির এমপি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান দল ছেড়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন। এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালুর কোন তৎপরতা নেই। তাঁর ঘনিষ্টজনরা বলছেন, আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন না মোসাদ্দেক আলী ফালু। এমন প্রেক্ষাপটে গতবারের প্রার্থী শাহাবউদ্দিন আগামী নির্বাচনেও মমোনয়ন পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নিরব এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও তেজগাঁও থানার সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর-শেরেবাংলা নগর আংশিক) ॥ এ আসনের বর্তমান এমপি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন এই আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজী মকবুল হোসেন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। জোটশরিক জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নাদের চৌধুরীও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। গত দুই নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে পরাজিত করে নির্বাচিত হওয়ার পর এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান নানক। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরেশোরেই শুরু করেছেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। দুবারের এমপি হয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ও সংস্কার হয়েছে। এক সময় এই এলাকা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত থাকলেও এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দিনদুপুরে ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রবাজি বা রমরমা মাদক ব্যবস্য এখন নেই বললেই চলে। তাঁর সমর্থকদের দাবি, এমপি নানকের সঙ্গে এলাকার মানুষের সুসম্পর্ক রয়েছে, সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকেন এবং নেতাকর্মীদের সময় দেন। এ আসনে তাঁর কোন বিকল্প নেই। তবে এবার দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এবং অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী মকবুল ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর কিছুটা দূরে থাকলেও এবার দলের মনোনয়ন পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে দলীয় কর্মকা-ে সরব হয়েছেন তিনি। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদেক খান মোহাম্মদপুর এলাকার দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও এলাকায় সুপরিচিত তিনি। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাই সাদেক খানকে আগামী নির্বাচনে দল মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছেন তাঁর সমর্থকরা। অন্যদিকে স্থানীয় নেতার সঙ্কটে রয়েছে বিএনপি। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় কোন নেতা বিএনপির মমোনয়ন পাননি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার জোরালো দাবি উঠেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে পরাজিত হন তিনি। আলাল ছাড়াও এবার এই আসনে বিএনপির মূল সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগও শুরু করেছেন তিনি। আরও তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর আতিকুল ইসলাম মতিনও। ঢাকা-১৪ (মিরপুর-শাহ আলী-দারুস সালাম-রূপনগর-সাভার আংশিক) ॥ এ আসন থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী এস এ খালেককে পরাজিত করে প্রথমবার এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এমপি আসলাম। টানা দুইবার এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও সব সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই সহ-সভাপতি। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপি আসলাম ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন। এছাড়াও নৌকার দাবিদার হয়ে মাঠে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান বাচ্চু, দারুস সালা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মাজহারুল আনাম ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী। মহাজোটের প্রার্থী হতে চান জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নুুরুল আকতার। তবে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এ আসনে সাবিনা আক্তার তুহিনের সমর্থকদের সঙ্গে এমপি আসলাম অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল দেখা দিয়েছে। এমপি আসলাম সমর্থকদের দাবি, দুই মেয়াদে এমপি থাকাকালে এলাকায় কয়েকশ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন মোকাবেলা করার পাশাপাশি নিজ আসনে জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এমপি আসলাম। এসব কারণে আগামী নির্বাচনেও আসলামুল হকই পুনরায় মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস। অন্যদিকে এমপি তুহিনের সমর্থকদের মতে, ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা সাবিনা আক্তার তুহিন বিএনপির আমলে বারবার হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, অসংখ্যবার কারাগারও বরণ করেছেন। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য করেছেন। আগামী নির্বাচনে সাবিনা আক্তার তুহিনই মনোনয়ন পাবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। অন্যদিকে এ আসনে যোগ্য প্রার্থীর সঙ্কটে ভুগছে বিএনপি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা এস এ খালেক আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এ কারণে বিএনপির দুই নেতা মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে রয়েছেন। তাঁরা হলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু ও সাবেক এমপি এস এ খালেকের ছেলে ঢাকা উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি এসএ সিদ্দিক সাজু। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, খালেক এ আসনের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিত্ব করায় স্থানীয় পর্যায়ে খালেক পরিবারের একটা প্রভাবও রয়েছে। ৮৮ বছর বয়সী সাবেক এমপি খালেক আগামী নির্বাচনের জন্য তাঁর ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজুকে দলের প্রধানের কাছে উপস্থাপনও করেছেন। তাঁদের প্রত্যাশা এমপি খালেকের ছেলে সাজুই পাবেন দলের মনোনয়ন। ঢাকা-১৫ (মিরপুর-কাফরুল) ॥ এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী তাঁর সমর্থক ও অনুসারিরা। তবে এবার কামাল মজুমদারকে টপকিয়ে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মাহমুদা বেগম কৃক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ আরও কয়েকজন। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হক ও জাসদের সামছুল ইসলাম সুমন। ১৯৯৬ সালে বিএনপির প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন কামাল আহমেদ মজুমদার। পর এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ আওয়ামী লীগের যোগদান করে। এরপর ২০০৮ নির্বাচনেও বিজয়ী হন কামাল মজুমদার। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এখলাছ উদ্দিন মোল্লাকে পরাজিত করে তিনি ফের এমপি নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া মুক্তিযোদ্ধা এই নেতা দীর্ঘদিন ঢাকার রাজনীতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দলের রাজনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর সমর্থকদের দাবি- টানা দুই মেয়াদে এমপি হিসেবে এলাকার রাস্তাঘাট, গ্যাস-পানি-বিদ্যুত, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। এলাকার নেতাকর্মী ও মানুষের সঙ্গেও রয়েছে সুসম্পর্ক। আগামী নির্বাচনেও এ আসনে কামাল মজুমদারের কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে ফের ভাড়াটে নাকি স্থানীয় কেউ মনোনয়ন পাবেন এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন সংশয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বিএনপির মনোনয়ন পান। তাঁর মৃত্যুর পর স্থানীয়ভাবে অভিজ্ঞ কোন প্রার্থী না থাকায় বাইরের কাউকে এ আসনে আগামীবার মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেক দিন ধরেই মাঠে রয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ঢাকা-১৬ (পল্লবী-রূপনগর) ॥ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের এ আসনে মনোনয়ন লড়াই জমে উঠেছে। এ আসনের টানা দু’বারের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন তাঁরই বড় ভাই বিএনপি থেকে আসা এখলাস উদ্দিন মোল্লা। দুই সহদোরকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ইলিয়ান-এখলাসের পাশাপাশি এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিদা তারেক দীপ্তি। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন আমানত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মান্নান কচিকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মোল্লা পরিবারের সুনাম ও প্রভাব রয়েছে। তাঁর সমর্থকদের দাবি, টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে এলাকার মানুষের সব দাবিই তিনি পূরণ করেছেন। এমপি হিসেবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আগামী নির্বাচনেও ইলিয়াস মোল্লা মনোনয়ন পাবেন বলেও তাঁরা দৃঢ় আশাবাদী। তবে দলের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী মান্নান কচির অবস্থানও বেশ শক্তিশালী। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতিতে আসা এই নেতার নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। শাহেদা তারেক দীপ্তিও এ এলাকা থেকে একাধিকবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনটিতে একাধিক প্রার্থিতা থাকায় বেকায়দায় রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, সহ-সভাপতি একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার কাছে পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। দলটি থেকে কয়েক দফায় মরহুম হারুনুর রশিদ মোল্লা ও এস এ খালেকসহ বিএনপির কয়েকজন নেতাই এখানে এমপি হয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং মামলা-হামলায় পর্যুদস্ত হওয়ার কারণে সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই বিপর্যস্ত দলটি। তবে আগামী নির্বাচনে চমক সৃষ্টির লক্ষ্যে এ আসনে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট-ভাসানটেক) ॥ রাজধানীর অভিজাত এলাকা বলে খ্যাত এ আসনটিতে মহাজোট নিয়ে মহাসঙ্কটে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আসনটি থেকে আগেই নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাবেক এ রাষ্ট্রপতিকে ছাড় দিতে নারাজ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সহযোগী বাংলাদেশ ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স (বিএনএ) তথা জাতীয় জোট ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। এদিকে কোন ছাড় বা ভাড়াটে প্রার্থী নয়, টানা কয়েকবার দলীয় এমপি বঞ্চিত আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালাচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খান এবং কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন। জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ডাঃ আবদুল লতিফ মল্লিক ও জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। মহাজোট ও দলের প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় আগামী নির্বাচনে একক প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মহাসঙ্কটে পড়তে হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। তেমন বিশেষ পরিস্থিতি হলে আসনটিতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সবশেষ নির্বাচনে জেপির প্রার্থী ডা. আবদুল লতিফ মল্লিককে পরাজিত করে এমপি হন আবুল কালাম আজাদ। অন্যদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এখন পর্যন্ত চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। আলোচনায় থাকা সম্ভাব্য এই প্রার্থীরা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, তাঁর ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং গুলশানা থানা বিএনপির নেতা কামাল জামান মোল্লা। দলটির নীতিনির্ধারক নেতাদের মতে, এ আসনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেনানিবাস ও কূটনৈতিক এলাকার ভোটারদের কথা মাথায় রাখতে হবে। সেই বিবেচনায় হয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা রুহুল আলম চৌধুরী অথবা হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টু বা তাঁর ছেলে প্রধান্য পাবেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে। ঢাকা-১৮ (উত্তরা-খিলক্ষেত) ॥ বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে থাকায় মনোনয়ন নিয়ে এবার অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন রাজপথের এই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেত্রী। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন- যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, দক্ষিণ খান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম তোফাজ্জল হোসেন, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিনসহ আর কয়েকজন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির আজিজুল বারী হেলালকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিএনএফ প্রার্থী আতিকুর রহমান নাজিমকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাহারা খাতুন আগামীবার প্রার্থী হতে না পারলে সেক্ষেত্রে উত্তরার স্থায়ী বাসিন্দা চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনিকে এই আসনে প্রার্থী করা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে এটি এখনও স্পষ্ট নয়। বর্তমান এমপি সাহারা খাতুনের সমর্থকদের দাবি, দুই মেয়াদে এমপি ও মন্ত্রী থেকে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী সাহারা খাতুন। কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে নেতাকর্মীদেরও পাশে থেকেছেন সবসময়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁকেই টানা তৃতীয়বারের মতো দলীয় প্রার্থী করা হবে বলে তাঁরা নিশ্চিত। অন্যদিকে এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন তিনজন। এই আসনের সাবেক এমপি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর এবং তরুণ ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদীও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই আসনে (তৎকালীন ঢাকা-৫) প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি আসনটি ছেড়ে দেওয়ার পর উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনেও মেজর কামরুল নির্বাচিত হন। ওই বছরেই অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রহমতুল্লাহর কাছে পরাজিত হন মেজর কামরুল। ২০০১ সালে নির্বাচনে পুনরায় জিতে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মেজর কামরুল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবম জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন না। তিনি নিজ এলাকা খুলনা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ কারণে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মেজর কামরুল ইসলাম। তবে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে দলের মধ্যেই অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। এই সুযোগে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এস এম জাহাঙ্গীর এবং বিএনপি ঘনিষ্ট তরুণ ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী এলাকা বেশ তৎপর রয়েছেন।
×