ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণার সম্ভাবনা নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণার সম্ভাবনা নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ। ২২ শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আজকের সমাবেশ কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউন করা হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির নেতারা ১ অক্টোবর থেকে কঠোর আন্দোলনের হাকডাক দিলেও আজকের সমাবেশ থেকে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। তবে এ সমাবেশ থেকে অধ্যাপক বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ৭ দফা দাবি ও দেশ পরিচালনার জন্য ১২ দফা প্রস্তাব পেশ করা হবে। ৭ দফা দাবি আদায়ের বিষয়ে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হবে। জানা যায়, মহানগর নাট্যমঞ্চে আওয়ামী লীগের সমাবেশের একদিন পর আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক সমাগম ঘটাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ জন্য রাজধানীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটিকে নিজ নিজ এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের প্রতিটি জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি রাজধানীতে শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয় বেশ ক’দিন আগে থেকেই। এ জন্য প্রথমে ২৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। এর পর ২ দিন পিছিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সমাবেশ থাকায় বিএনপিকে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ডিএমপি। আজকের সমাবেশ থেকে বিএনপি সরকারের কাছে যে ৭ দফা দাবি দেবে তার মধ্যে রয়েছে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের মুক্তি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা ও নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন। এ ছাড়া আজকের সমাবেশ থেকে আগামীতে দেশ পরিচালনার জন্য বিএনপি যে ১২ দফা প্রস্তাব পেশ করবে তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসন দলীয়করণ না করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা, সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা, দেশের সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এ মূল নীতি অনুসরণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা ইত্যাদি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি নিতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির দুই নেতা। তারা হলেন প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। এ সময় তাদের ২২ শর্তে অনুমতি দেয়ার কথা জানানো হয়। এ খবর পেয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমাদেরকে বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত জনসভার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ সমাবেশে বিপুল জনসমাগম হবে জানিয়ে রিজভী বলেন, যথাসময়ে সমাবেশে যোগদানের জন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ ঢাকাবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। রিজভী অভিযোগ করেন শুক্রবার সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৫৮টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ জনকে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৫ হাজার ৭০০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নামে। এসব মামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ। বিএনপির আজকের সমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্য জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কি হবে তার একটি দিক নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। কারণ, বিএনপির এ ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়া নিয়ে দল ও জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর ১২ নবেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবার খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা সমাবেশ কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। তবে এ সমাবেশে ২০ দলীয় জোটসহ অন্য সমমনা দলের নেতাকর্মীরাও যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। এদিকে ডিএমপি থেকে অনুমতি পাওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান সারোয়ার, এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে দেয়া ডিএমপির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন কাজ করা যাবে না, রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তা পরিপন্থী কোন কার্যকলাপ পরিচালনা করা যাবে না, উস্কানিমূলক কোন বক্তব্য এবং প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বা বক্তব্য প্রদান বা অনুরূপ কিছু প্রচার করা যাবে না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আইডি কার্ডসহ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়োগ করতে হবে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনসভাস্থলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনসভাস্থলে আসা প্রতিটি যানবাহন তল্লাশি করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনসভাস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সড়ক ও ফুটপাথে প্রজেকশন ব্যবহার করা যাবে না, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সড়কে অথবা ফুটপাথে সমবেত হওয়া যাবে না, আজান, নামাজ এবং ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক চালু রাখা যাবে না, জনসভার মঞ্চ অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না, জনসভার ২ ঘণ্টা আগে মানুষ জনসভাস্থলে আসতে পারবে, বিকেল ৫টার মধ্যে জনসভা শেষ করতে হবে, মিছিল সহকারে জনসভায় আসা যাবে না, ব্যানার-ফেস্টুনের আড়ালে কোন ধরনের লাঠি-সোটা বা রড আনা যাবে না। এসব শর্ত না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি বাতিল বলে গণ্য হবে। জনস্বার্থে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এ অনুমতি বাতিল করতে পারবে। সমাবেশে সুস্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব - গয়েশ্বর ॥ দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সমাবেশে আমরা সুস্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। তিনি বলেন, আমরা যতই সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ করি না কেন তারপরও সরকারের যে চিরাচরিত স্বভাব আছে সেই স্বভাব থেকে তারা বিরত থাকবে না। সমাবেশের অনুমতি দিতে যেহেতু এত টালবাহানা করেছে। শুনেছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা বলছে রাজপথ দখল করবে, দেশ দখল করবে। তিনি বলেন, সরকার কোন ঘটনা ঘটাতে আগাম সহিংসতার কথা বলছে। গয়েশ্বর বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে দাবিগুলো আছে সেগুলোকে একত্র করে সমাবেশে আমরা উপস্থাপন করব। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট যেমন গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও বাম জোট আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি তো দিতেই হবে।
×