ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহার বইয়ের পেছনে সাংবাদিক আইনজীবী ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 সিনহার বইয়ের পেছনে সাংবাদিক আইনজীবী ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ নিউইয়র্ক থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচারপতি এস কে সিনহার বই প্রকাশে দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী ও পত্রিকার মালিকদের মদদ দেয়ার তথ্য তার কাছে রয়েছে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলন একথা বলেন তিনি। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যাওয়া তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নানা ঘটনাবলীর মধ্যে পদত্যাগের পর এক বছরের মাথায় বিদেশে বসে বই লিখে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। বইতে সিনহা লিখেছেন, ‘২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।’ ‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার আত্মজীবনীমূলক ৬১০ পৃষ্ঠার এই বইটি এ্যামাজনের কিন্ডেল সংস্করণে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এই বইটি প্রকাশ করা হবে। শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা একটু খুঁজে বের করেন না, বইটা লেখার পেছনে কার হাত আছে? এই বইটার পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে গেছে? কার কাছে গেছে বা তিনি যে লঞ্চটা করবেন, এই লঞ্চিংয়ের টাকা-পয়সা খরচটা কে দিচ্ছে? বাংলাদেশ থেকে কেউ দিচ্ছে কি না বা আপনাদের মতো কোন সাংবাদিকরা এর পেছনে আছে কি না? কোন সংবাদপত্র আছে কি না বা তারা কতটুকুু সাহায্যপত্র দিচ্ছে? আমাদের কোন আইনজীবী এর স্ক্রিপ্ট দেখে দিচ্ছে কি না? কোন পত্রিকা বা পত্রিকার মালিকরা তাকে এই মদদটা দিচ্ছে? স্ক্রিপ্টটা লেখার ব্যাপারে কোন সাংবাদিক, কোন পত্রিকার, কে এটা সাহায্য করছে? এই প্রশ্নগুলো করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুঁজে একটু বের করেন। আমি জানি, আমি তো বলব না আপনাদের। আপনারা খুঁজে বের করেন, সেটা চাই। সিলেটের নিম্ন আদালতের একজন আইনজীবী হিসেবে শুরু করে বাংলাদেশের বিচারালয়ের শীর্ষ অবস্থানে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য হয়েছে এস কে সিনহার। ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে তিনি ছুটিতে যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টোবর বিদেশে চলে যাওয়ার সময় বিচারপতি সিনহা বলে যান, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’। তার ছুটির মেয়াদ শেষে ১১ নবেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, ওইসব অভিযোগের কারণে আপীল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘একজন বিচারপতির মাধ্যমে দেশে জুডিসিয়াল ক্যু করার চেষ্টা হয়েছিল’ এবং ‘বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, শৃঙ্খলাবিধির নামে তা কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা’। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশী এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, সাবেক এই প্রধান বিচারপতির নিউজার্সিতে বাড়ি রয়েছে। সে বিষয়ে সরকার কোন ব্যবস্থা নেবে কি না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকায় বাড়ি কেনা তো খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। বরং বাংলাদেশেই এখন কঠিন। বাংলাদেশেই দাম বেশি। এখানে তো একটা ডিপোজিট দিলেই বাড়ির মালিক হওয়া যায়। কে কিভাবে কিনল, সেটা খুঁজে বের করে তথ্য দেন, সেটার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোন ডেফিনেশন নেই’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি তারা চান, তারা আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। নির্বাচনকালীন সময়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সরকারী দল বিরোধী দল যাই হোক, সবাইকে নিয়ে যদি তারা চান, আমরা হয়ত একটি সরকার গঠন করে নির্বাচনটা পরিচালনা করতে পারি। কিন্তু এখানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোন ডেফিনেশন নেই।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এই বিলটি পাস হওয়ার পরই সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল আইনে আপনারা একটা দিকই দেখছেন, সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ। এখানে সাংবাদিকের তো কণ্ঠরোধ নয়। ‘এখানে যে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়া, সামাজিক যে নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে বা আমাদের ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুব শ্রেণী... তারা যে বিপথে চলে যাচ্ছে, মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে, এরকম বহু ঘটনা হচ্ছে। তো সেগুলো কী রোধ করার প্রয়োজন নাই। আর সাংবাদিকরা শুধু স্বার্থপরের মতো নিজেদেরটাই দেখবে কেন? কেউ যদি অপরাধ না করে, মিথ্যা প্রচার না করে বা ইয়েলো জার্নালিজম না করে তবে তার কোন চিন্তা হওয়ার কথা না। তার তো কোন ভয় হওয়ার কথা না’। সাইবার অপরাধকে এখন পুরো বিশ্বে একটা সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম- এটা এখন বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা হিসেবে মানে, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের পরেই সাইবার ক্রাইমটা এসে গেছে। আমাদের তো সমাজটাকে রক্ষা করতে হবে। এই দায়িত্ব সাংবাদিকদেরও আছে। কাজেই এটা কোন কণ্ঠরোধ করা না। অপরাধ শুধু রাজনীতিবিদরাই করে, সাংবাদিকরা করে না?’ অন্যান্য দেশে এই ধরনের আইনে কি আছে- তা দেখে সাংবাদিকদের ক্ষোভ প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে উত্থাপিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ৩২ ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহলের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল। ওই ধারার ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সংসদীয় কমিটিতেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় সাংবাদিকরা। রোহিঙ্গা নিয়ে ভারত ও চীনের অবস্থানে সন্দেহ প্রকাশ করে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নেতিবাচকভাবে না দেখার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রত্যেকটা দেশই কিন্তু এগিয়ে। ভারত এগিয়ে এসেছে। ভারত তো ওখানে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। চীনও তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। মিয়ানমরাকে তারাও চাপ দিচ্ছে, যেন এদের ফেরত নিয়ে যায়। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব কাজ করার একটা নীতি থাকে বা ভঙ্গি থাকে। এটা নেগেটিভলি দেখলে চলবে না।’ রাশিয়াও তাদের নিজেদের মতো করে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
×