ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারত চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারত চ্যাম্পিয়ন

জাহিদুল আলম জয় ॥ আরও একবার তীরে এসে ডুবে গেল তরী। এবারও স্বপ্নের ফাইনাল জেতা হলো না বাংলাদেশের। সেই কলঙ্কিত ভারতের কাছে ফাইনালে হেরে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে টানা দ্বিতীয়বার রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো টাইগারদের। শুক্রবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঘটনাবহুল ফাইনালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরুর পরও ৪৮.৩ ওভারে মাত্র ২২২ রান করে করে অলআউট হয় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। মামুলী লক্ষ্য তাড়া করতে যেয়েও হারতে বসেছিল রোহিত শর্মার দল। জয় পেতে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ভারতীয়দের। অর্থাৎ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২২৩ রান করে ভারত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য এনে দিয়েছে মহিলা দল। মাস দুয়েক আগে প্রমিলা এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলার মেয়েরা। এবার ভারতের পুরুষ দলকে হারিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্যের হাতছানি ছিল মাশরাফি, লিটন, মুশফিকদের। কিন্তু না, এবারও পারলেন না পুরুষ ক্রিকেটাররা। আরেকবার ভক্ত-সমর্থকদের কাঁদালেন মাশরাফিবাহিনী। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপের ফাইনালে হারল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে টি২০ ফরমেটের আসরে এই ভারতের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। এর আগে ২০১২ সালের আসরে পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হার এখনও কাঁদায় ভক্ত-সমর্থকদের। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ছয়টি আসরের ফাইনালে খেলে প্রতিটিতেই হারের স্বাদ তেতো পেয়েছে। এর মধ্যে তিনবারই এশিয়া কাপে। আর তিনবার এই ২০১৮ সালেই! চলতি বছরের মার্চে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে এই ভারতের কাছেই ৪ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। তারও আগে এই বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে কেঁদেছিলেন মাশরাফি, সাকিবরা। আর গতকাল আরেকবার ইতিহাস গড়ার হাতছানি বিসর্জন দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ প্রথমবার ফাইনালে হারে ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজে। সেবার লঙ্কানদের কাছে ২ উইকেটে হেরে প্রথমবার বেদনায় সিক্ত হয়েছিল টাইগাররা। তবে এবারের হারকে ছাপিয়ে গেছে আম্পায়ারের বিতর্ক সিদ্ধান্ত। শতক হাঁকানো লিটন দাসকে যেভাবে আম্পায়ার আউট দিয়েছেন সেটা প্রশ্নাতীতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাই তো গোটা দেশ ফুসছে ক্ষোভের অনলে। সবার যুক্তি, বেনিফিট অব ডাউট সব সময় ব্যাটসম্যানের পক্ষে যায়। স্বপ্নের ফাইনালে টস হারলেও প্রত্যাশিত ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে নামিয়ে ভারতকে চমকে দেয় লাল-সবুজের দেশ। জীবনে কখনও ওপেন করেননি মিরাজ। সেই তিনিই কি না লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে এসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। লিটন-মিরাজ উদ্বোধনী জুটি স্কোরবোর্ডে জমা করেন ১২০ রান। ২১ ওভারের মধ্যেই স্কোরবোর্ডে এই রান জমা হয়। তখনও একটি উইকেটও হারায়নি বাংলাদেশ। এ যেন স্বপ্নের শুরু। কিন্তু দ্রæতই সেই স্বপ্ন পরিণত হতে থাকে দুঃস্বপ্নে। সেই সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে গত কয়েকটি বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং বিতর্কটাও উঠে জোরেসোরে। ১২০/০ থেকে বাংলাদেশের স্কোর পরিণত হয় ১৫১/৫! সতীর্থদের আসা যাওয়ার মধ্যে অবিচল ছিলেন শুধু লিটন দাস। ১১৭ বলে ১২১ রানের ইনিংসটি খেলে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন এই ডানহাতি ওপেনার। সেই লিটনের আউট নিয়েই আবার আইসিসির রেফারিং নিয়ে নতুন করে তৈরি হলো বিতর্ক। ৪১তম ওভারে ভারতীয় লেগস্পিনার কুলদীপ যাদবের বল ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন লিটন। ব্যাটে-বলে না হওয়ায় উইকেট ভেঙ্গে স্টাম্পিংয়ের আবেদন করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। থার্ড আম্পায়ার অনেকটা সময় ধরে পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত আউটের সিদ্ধান্ত দেন। টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা যায়, লিটনের পা কোনভাবেই দাগের বাইরে ছিল না। এসব ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানকে আউট দেয়ার নজির ক্রিকেট বিশ্বে খুব বেশি নেই। থাকলে অতি অল্পই পাওয়া যাবে। এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো একটা বড় ম্যাচে তো কোনভাবেই নেই। কেন বারবার এই ভারতের বিপক্ষেই বলির পাঠা হতে হয় বাংলাদেশকে? এই প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা। লিটনের আউটের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভারত ও আইসিসির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ক্ষত এখনও শুকায়নি। সেই বিতর্কিত নো বল। রুবেল হোসেনের বলে রোহিত শর্মা যেভাবে আউট হয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কারণে। ৪০তম ওভারে সেই জীবন পাওয়ার পর তিনি যোগ করেছিলেন আরও ৪৭ রান। যে কারণে বাংলাদেশকে সেমির আগে বিদায় নিতে হয়েছিল। এবার লিটনকে এভাবে আউট না দিলে কে জানত বাংলাদেশ হয়ত আরও ৫০/৬০ রান পেয়ে যেত। সেক্ষেত্রে ফলাফলও হয়ত অন্যরকম হতে পারত। আম্পায়ারের ওপর ক্ষোভ উগরে দিলেও ভক্তরা বাজে এই হারের দায় দিচ্ছেন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদেরও। উদ্বোধনী জুটিতে বিনা উইকেটে শতাধিক রান করার পরও কিভাবে এভাবে ব্যাটিংয়ে ধস নামে! এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সমর্থকরা। এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকেই দায়ী করেন তারা। দলের ইনিংস খুব একটা বড় না হলেও লিটন দাসের সঙ্গে উদ্বোধনীতে দারুণ পার্টনারশিপ গড়েন মিরাজ। দুজনে মিলে করেন ১২০ রানের জুটি। এর পর মিরাজ ৩২ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন। এর পরই মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে, দ্রæত সাজঘরে ফিরেন ইমরুল কায়েস (২), মুশফিকুর রহিম (৫) ও মোহাম্মদ মিঠুন (২)। তবে এক পাশ আগলে রেখেছিলেন লিটন, পরে তিনি ১২১ রান করে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আউট হন। ইনিংসটি তিনি সাজান ১২টি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে। পরে মাহমুদউল্লাহ (৪) ও মাশরাফি (৭) দ্রæত সাজঘরে ফিরে যান। শেষ দিকে নেমে সৌম্য সরকার ৪৫ বলে ৩৩ রান কিছুটা চেষ্টা করলেও দলের সংগ্রহটা খুব একটা বড় করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত নয় বল আগেই ২২২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ভারতের পক্ষে কুলদীপ যাদব ৪৫ রানে তিনটি ও কেদার যাদব ৪১ রানে দুই উইকেট নেন। বাংলাদেশের তিনজন ব্যাটসম্যান রানআউট হয়ে দলের সর্বনাশ ডেকে আনেন। ২২৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা সাবলীল করেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। তবে দলীয় ৩৫ রানে ধাওয়ানকে (১৫) সাজঘরে পাঠিয়ে আশা জাগান বাংলাদেশ স্পিনার নাজমুল ইসলাম। স্বপ্নের পরিধি আরও বেগবান হয় ১৬০ রানের মধ্যে ভারতের পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলে। এ সময় রোহিত শর্মা ও মহেন্দ্র সিং ধোনিও আউট হয়ে যান। যে কারণে স্বল্প পুঁজি নিয়েও জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে টাইগাররা। স্বপ্ন আরও জাগ্রত হয় কেদার যাদব আহত হয়ে ড্রেসিংরুমে গেলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতকে আটকাতে পারেননি মুস্তাফিজ, মিরাজ, মাশরাফিরা। রবীন্দ্র জাদেজা ও কেদার যাদব দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। শেষ বলে এক রান করে ৭ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে ভারত। ভারতের পক্ষ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন রোহিত। এছাড়া ধোনি ৩৬ ও জাদেজা করেন ২৩ রান। পরে আবার ব্যাটিংয়ে নামা কেদার যাদব ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান ২টি করে এবং নাজমুল, মাশরাফি ও মাহমুদউল্লাহ প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
×