ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেয়া নন্দী

গল্প ॥ ফুলের আগমনে

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গল্প ॥ ফুলের আগমনে

গাছপালাগুলো ধুয়ে মুছে কে যেন সুন্দর করে তুলেছে। ধুলাবালি নেই। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। আকাশে সোনালি ঝকঝকে রোদ। সেই রোদের সঙ্গে খেলতে খেলতে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। গাছে গাছে কত রঙের ফুল। পাশে একটা সরু খাল। কল কল করে পানি বয়ে চলেছে। কত বাতাস! বাতাসে তুলার মতো সাদা কি যেন একটা উড়ে এসে পড়ল ওই বড় বটগাছটায়। বটগাছ মাথা চুলকাতে চুলকাতে লম্বা একটা শাখা দিয়ে সেটাকে তার মুখের সামনে আনল। বটগাছটা বুড়ো হয়ে গেছে। চোখে সে রকম ভাল দেখতে পায় না। নেড়েচেড়ে ভাল করে দেখে অবাক হয়ে বলল- একি কাশফুল যে! শরতকাল এসে গেল। দেখ, তোরা সবাই দেখ। বাকি গাছেরা ভাবছে বুড়ো বট আজকাল কি বলতে কি বলে ফেলে। কিছুদিন আগেও তো বৃষ্টি হলো। পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুপারি গাছ। সেই সুপারি গাছ ছেয়ে আছে নীল শিমের গাছ। আশপাশের ছোট গাছগুলো বলল- দেখ না ভাই শিম গাছ শরত বুঝি চলে এলো! মেঘকে জিজ্ঞাসা করে দেখ তো। শিম গাছ মেঘকে ডেকে বলল- মেঘ ভায়া, শরতকাল কি চলে এসেছে? -হ্যাঁ, তো। দেখছো না আকাশে সোনালি রোদ আর আমরা মানে সাদা মেঘের দল খেলা করছি। মেঘেদের কথা শুনে সবাই আনন্দে ডালপালা নাড়াতে থাকল। খালের ওপারে যে মাঠ আছে তাতে কত শত কাশফুল ফুটে আছে। বাতাসে ওরা দুলছে আর গান গাইছে- শিউলি নিয়ে শরত এলো সাদা মেঘে ভেসে, তাই দেখে আজ সুয্যি মামা উঠল বুঝি হেসে। ওদের গান শুনে হঠাৎ করে টগর গাছটা বলল- দেখো, আমরা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, শরতকালে যে শিউলি ফুল ফোটার কথা। এই বনে আগে কোন শিউলি গাছ ছিল না। তা নিয়ে সবার খুব মন খারাপ হতো। একবার তাদের আরেক বন্ধু টুনটুনি পাখিকে তারা এই কথা বলল। তখন টুনটুনি পাখি আরেক বন থেকে তার ঠোঁটে করে কয়েকটা বীজ এনে পুঁতে দিয়েছিল মাটিতে। সেখান থেকে একটা গাছ উঠেছিল। সবাই সেই গাছটাকে খুব ভালবাসত। এখন এই গাছটা অনেক বড় হয়েছে। বনের বাকি গাছগুলো উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতে লাগল শিউলি ফুল ফুটেছে কি-না। শিউলি ফুলের পাতায় পাতায় শিশির জমে আছে। সূর্যের আলোয় ঝিকিমিকি করছে। শিউলি গাছ চোখ মুছতে মুছতে সবার দিকে তাকাল। তার চোখেও শিশির পড়েছে। - ওই তো দেখো দুটো কচি পাতার মধ্যে ছোট ছোট কলি ধরেছে। এবার ফুল ফুটবে। - জবা গাছ বলল। ওদিকে করবী ফুলের গাছ বলছে- আমি বন্ধু টুনটুনির কাছে শুনেছি খুব মিষ্টি গন্ধ হয় নাকি শিউলি ফুলের। এই নিয়ে সারাদিন কত কথা হলো। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এলো। হাসনাহেনা ফুটেছে। কি কড়া মিষ্টি গন্ধ! সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। ছোট ঘাসফুলগুলো কিন্তু এখনও জেগে আছে। কত কত জোনাকি এসেছে। ওরা ঘাসফুলের সঙ্গে খেলছে। জোনাকিরা ঘাসফুলদের বলছে- তোমরা শিউলি ফুলের গন্ধ পাবে সবার আগে। - কেন, কেন? আর আমরা এত ছোট, আমরা কি করে শিউলি ফুলের কাছে যাব?- ঘাসফুলেরা বলল। -আরে, তোমাদের যেতে হবে না। শিউলি ফুল নিজেই আসবে। ওই দেখ, ফুলগুলো ফুটে গেছে। - জোনাকিরা বলল- কি করে গো জোনাকি বন্ধু? - এখন বলব না, সকালেই দেখতে পাবে। ভোর হতে চলল এবার আমরা যাই। এই বলে ঘাসফুলেরাও জোনাকিদের বিদায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ করে সকালে সবার ঘুম ভাঙল হাল্কা মিষ্টি একটা গন্ধে। -এই তো শিউলি ফুল ফুটেছে। - বট গাছ বলল। কিন্তু গাছে এত কম ফুল কেন? - শিম গাছ বলল। যে উপর দেখে সব দেখতে পায়। হঠাৎ করে দেখতে পেল ঘাসের উপর অনেক ফুল পড়ে আছে আর ঘাসফুলগুলোকে আদর করছে। ছোট্ট টুনটুনিও এলো দেখতে। সঙ্গে কত পাখি এসেছে। সবাই গাছের ডালে বসে গান গাইছে। প্রজাপতিরা ফুলে ফুলে মধু খাচ্ছে। আজ সবাই খুব খুশি, শিম গাছও নিচে নেমে এলো শিউলি ফুলকে দেখতে। - আহ! কত মিঠেল গন্ধ। - এসব বলতে বলতে শিম এক টুকরো মেঘকে নিয়ে এলো শিউলি গাছের কাছে। শিউলি গাছ মেঘ ধরল। এই বনে কেউ কোনদিন মেঘকে ছুঁতে পারেনি কেবল শিম ছাড়া। সেসব নিয়ে বরাবরই শিমের একটু অহঙ্কার ছিল। আজ আর অহঙ্কারও নেই। শিউলি ফুলের আগমনে সবাই সবার বন্ধু হলো। শিম গাছ থেকে শুরু করে ছোট্ট ঘাসফুল পর্যন্ত সবাই এই মিঠেল গন্ধে পানির কল কল শব্দের সঙ্গে গান গাইতে লাগল আর ডালপালাগুলো নাড়াতে থাকল। এই বনের সবাই এবার খুশি।
×