ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুরে পুলিশের মারধরে কলেজছাত্র নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 শরীয়তপুরে পুলিশের মারধরে কলেজছাত্র নিহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর ॥ জাজিরা উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার বিকেনগর আনন্দ বাজার এলাকায় টহলরত পুলিশের নির্যাতনে স্থানীয় বিকেনগর বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে ২০১৮ সালের এইচএসসি উত্তীর্ণ রোকনুজ্জামান পাভেল মারা যায়। জাজিরা থানার ওসি বেলায়েত হোসাইনকেই এলাকাবাসী দায়ী করছে এই হত্যাকা-ের জন্য। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে পিকআপ নিয়ে টহলে বের হন জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসাইন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অপর এক পুলিশ সদস্য এবং গাড়িচালক। জাজিরা উপজেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় ৬ কিমি বিকেনগর আনন্দ বাজারের উত্তর মাথায় পৌঁছার পর রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল নিয়ে অবস্থানরত দুই কিশোরকে দেখে গাড়ি থামান ওসি বেলায়েত হোসাইন। ওই কিশোরদের দেহ তল্লাশি করতে চায় পুলিশ। এতে রাতে দেহ তল্লাশিতে আপত্তি জানায় পাভেল। পাভেলের আপত্তিতে নাখোশ হয়ে ওকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারে পুলিশ সদস্যরা। মুহূর্তেই পাভেল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। প্রথমে প্রত্যক্ষদর্শীরা পাভেলকে ধরাধরি করে একটি ওষুধের ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। সেখানে কোন চিকৎসা ব্যবস্থা না থাকায় পাভেলকে পুলিশের গাড়িতে করেই নেয়া হয় জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পাভেলকে মৃত ঘোষণা করেন। পাভেলের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে রাতেই শত শত মানুষ ভিড় করতে থাকে জাজিরা হাসপাতাল ও থানায়। পাভেলের পিতা বিকেনগর পশ্চিম কাজীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুর রব শেখ সন্তানের আকাল মৃত্যুর খবরে দৌড়ে যান হাসপাতালে। স্বজনরাও ছুটে আসেন হাসপাতালে। এসময় স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে জাজিরা হাসপাতালের পরিবেশ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পাভেলের সঙ্গে থাকা সঙ্গী শান্ত, সোহাগ ও শাহিন জানান, মোটরসাইকেলে আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন আমরা রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল থামিয়ে এক বন্ধুর অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় পুলিশের একটি গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। পুলিশ তখন আমাদের দেহ তল্লাশি করতে থাকে। এক পর্যায়ে পাভেলের দেহ তল্লাশি করতে চাইলে পাভেল অন্ধকারে দেহ তল্লাশিতে আপত্তি জানায়। তথন পুলিশ পাভেলকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারতে থাকলে পাভেল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর হাসপাতালে নিলে ডাক্তার পাভেলকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা পাভেলের মতো একজন নিষ্পাপ ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বেলায়েত হোসাইন বলেন, নিহত হওয়া ছাত্রের মৃগী রোগী ছিল। তাই সে মারা গিয়েছে। শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, টহলরত পুলিশ পাভেলকে চেক করতে গেলে সে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এরপর সে অপ্রত্যাশীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে আগে থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিল। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তারপরেও যদি পুলিশের কোন সংশ্লিষ্টতা বা ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
×