ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দশম সমাবর্তনে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রাণের সম্মিলন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রাণের সম্মিলন আজ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ উত্তরের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শুরু হয়েছে ১০ম সমাবর্তন উৎসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে আরাধ্য ক্ষণ পূরণ হতে চলেছে আজ শনিবার। দুপুর আড়াইটায় সমাবর্তন প্রাঙ্গণে প্রাণের উচ্ছ্বাসে ৬ হাজার গ্র্যাজুয়েট আকাশে ওড়াবেন ‘গ্র্যাজুয়েশনের কালো টুপি’। এই সমাবর্তনে যোগ দিতে তাই মতিহারের সবুজ চত্বরে পা রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা। একদিন আগেই শুক্রবার তাদের পদচারণায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। ‘আয় আর একটিবার আয়রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়/মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।’ রবিঠাকুরের প্রাণের এই আকুতির টানেই যেন রাবির সমাবর্তন উৎসব পরিণত হয়েছে সাবেকদের মিলনমেলায়। সেই কত বছর আগে ফেলে যাওয়া ক্যাম্পাসে আবার তাদের ফেরা। প্রাণের বন্ধুত্বের টানে সাড়া দিতেই পুরনো ক্লাস রুম, পুরনো হলের ফ্লোর, সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসে পা রেখেছেন সাবেকরা। চোখে-মুখে মিলনের এক অদ্ভুত আবেশ, হারানোকে ফিরে পাওয়ার উচ্ছ্বাসে বাঁধনহারা তারা। শুক্রবার সরেজমিনে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সমাবর্তন উৎসবে রাষ্ট্রপতি ও গ্র্যাজুয়েটদের বরণ করতে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে বর্ণিল সজ্জায়। প্রধান ফটক থেকে সমার্বতন স্থল স্টেডিয়াম পর্যন্ত ব্যানার ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী প্যারিস রোডের দুপাশের রং করা গাছগুলো যেন সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। জোহা চত্বর, শেখ রাসেল চত্বর, শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী চত্বর, কেন্দ্রীয় মসজিদ সাজানো হয়েছে নতুন করে। রং করা হয়েছে স্থাপনাগুলো। সন্ধ্যা হলেই প্রতি ভবনেই জ্বলছে সারি সারি রঙিন ঝাড়বাতি। ক্যাম্পাসজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর ড. লুৎফর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন গ্র্যাজুয়েটরা। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা দলে বলে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে পা রেখেছেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। উঠেছেন পুরনো সেই হলের রুমে। পরিচিত হচ্ছেন নতুনদের সঙ্গে। শুক্রবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে সাবেকদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ হয়ত বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। যে যেভাবে পারছেন উপভোগ করছেন বহুদিন বাদে প্রিয় চত্বরে ফেরার প্রতিটি মুহূর্ত। প্রায় চার বছর পর ক্যাম্পাসে এলেন রাবির সাবেক শিক্ষার্থী লাকমিনা জেসমিন সোমা। নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সেই যে পড়াশোনা শেষ করে গিয়েছিলাম তারপর আসা হয়নি। অনেকদিন পর এসে দেখি ক্যাম্পাসের অনেক পরিবর্তন। আমাদের রেখে যাওয়া ক্যাম্পাসটা অনেক বদলে গেছে। বহুদিন বাদে ফিরে এসে অনেক ভাল লাগছে। সমাবর্তনে যোগ দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম শাওন বলেন, যেই জায়গাটায় এতদিন পড়েছি, থেকেছি, কত স্মৃতি, কত মজার মজার মুহূর্ত! সেই জায়গাতে ফিরে আসা, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকার বিষয়টা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মনে হচ্ছে যেন, প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো আসছি অথচ সমাবর্তন শেষ হলে ক্যাম্পাসটার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সম্পর্কটাও শেষ হয়ে যাবে। এই বিষয়টিও কিছুটা কষ্ট দেয়। সাবেকদের পদচারণায় সমান উচ্ছ্বসিত বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. আকতার বানু আলপনা বলেন, একসময় যারা আমাদের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাদের সঙ্গে আগে নিয়মিত ক্লাসে দেখা হতো, সমাবর্তন উপলক্ষে দীর্ঘদিন বাদে তাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। এটা ভাল লাগার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাওন শাহনাজ রহমান বলেন, বিভাগের অনেক সিনিয়রের সঙ্গে সমাবর্তন উপলক্ষে দেখা হচ্ছে। তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনছি, ক্যারিয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাচ্ছি। ক্যাম্পাস জীবনে তাদের মজার মজার সব স্মৃতির কথা শুনছি। সব মিলিয়ে ভাল লাগাটা অনেক বেশি। সাবেক শিক্ষার্থীদের আসা এবং সমাবর্তনের উপকরণ সরবরাহ করা উপলক্ষে বিভাগগুলোতে নানা আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনগুলোও সাবেকদের নিয়ে মেতে উঠেছে নানা আয়োজনে। সব মিলিয়ে রাবির ১০ম সমাবর্তন যেন ক্যাম্পাসে পুনর্মিলনী উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বহুল প্রতীক্ষিত দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার। আচার্যের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বেশ ক’বার স্থগিত হয়েছিল দশম সমাবর্তনের দিনক্ষণ। তাই এ সমাবর্তনকে ঘিরে এবার প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে দেশের অন্যতম এ বিদ্যাপিঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের নয়টি সমাবর্তনের থেকে এবারের আয়োজনটি হবে আরও জাঁকজমকপূর্ণ। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, দশম সমাবর্তনকে সামনে রেখে প্রায় প্রস্তুত মতিহারের সবুজ চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে প্রস্তুত করা হচ্ছে সমাবর্তন মঞ্চ। রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং স্থাপনাগুলো সংস্কার করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
×