ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চালকের আসনে আওয়ামী লীগ, দুর্বল বিএনপি চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 চালকের আসনে আওয়ামী লীগ, দুর্বল বিএনপি চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগারই হচ্ছে রাজধানী ঢাকা মহানগর। এই মহানগর যে রাজনৈতিক দলের দখল রয়েছে, সেই দলই পরিচালনা করে গোটা দেশকে। দীর্ঘদিন ধরে দখলে ঢাকা রাজধানীর মাঠ আগামীতেও দখলে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। তবে এবার ঢাকা মহানগরকে দু’ভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি ঢাকা উত্তর, অপরটি ঢাকা দক্ষিণ। ঢাকা দক্ষিণে পড়েছে মহানগরের মোট সাত আসন। আর এই সাত আসনের মধ্যে ৫টি আওয়ামী লীগ এবং দুটি জোট শরিক জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে পড়া সাতটি আসন হচ্ছে ঢাকা-৪, ঢাকা-৫, ঢাকা-৬, ঢাকা-৭, ঢাকা-৮, ঢাকা-৯ এবং ঢাকা-১০। সারাদেশের মতো ঢাকার অতিব গুরুত্বপূর্ণ এই সাত আসনেই বইছে নির্বাচনের দমকা হাওয়া। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে এই সাত আসনেই আওয়ামী লীগ রয়েছে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে। অন্যদিকে সাড়ে ৯ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান সাতটি আসনেই অনেকটা দুর্বল। ঢাকা দক্ষিণের দুটি আসনে জাতীয় পার্টির এমপি থাকলেও এ দুটি আসনে দলটির সাংগঠনিক অবস্থান খুবই নাজুক। এ কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ দুটি আসন জোট শরিক জাপাকে ছেড়ে দিতে নারাজ। তবে মনোনয়নকে ঘিরে মাত্র একটি আসন ছাড়া বাকি ছয় আসনেই বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে একাধিক প্রার্থী। কয়েকটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ এখন প্রকাশ্য। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। অনেক পোড় খাওয়া সংসদ সদস্যকে ঘায়েল করতেও যেন উঠেপড়ে লেগেছে অপর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এই সাত আসনেই ঘুরে দেখা গেছে, সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হলেও শুধুমাত্র মমোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকা প্রার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুত এসব দ্বন্দ্ব নিরসন করে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারলে এই সাত আসনেই আওয়ামী লীগসহ জোটশরিক দলের নেতারাই বিজয়ী হবেন। ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলি) ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরশেনের শ্যামপুর থানার ৪৭, ৫১ ও ৫৪, কদমতলী থানার ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং শ্যামপুর ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-৪ আসন গঠিত। এ আসনটিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী হলেও জোটের অঙ্কের কারণে গত নির্বাচনে নিশ্চিত এ আসনটি ছেড়ে দিতে হয় জোটশরিক জাতীয় পার্টিকে। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার জাপাকে কোনভাবেই আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অবশ্য মনোনয়ন নামক সোনার হরিণটি ধরতে এ আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। গত নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এর আগের নির্বাচনে তিনি পার্শ¦বর্তী ঢাকা-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লার কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন শ্যামপুর-কদমতলী থানার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। গত নির্বাচনে কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে নিয়ে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়ে জাপার প্রার্থী বাবলার পক্ষে কাজ করেন। পরে সানজিদা খানমকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি করা হয়। তবে আবু হোসেন বাবলা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বাবলা-সানজিদার সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকবারই হামলা, সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। আগামী নির্বাচনে সৈয়দ বাবলাকে হটিয়ে এমপি পদে প্রার্থী হতে তৎপর সানজিদা খানম। এই দুই নেতার পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন। গত ৫০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করায় স্থানীয়দের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ দিলীপ রায়, শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন স্বপন। জাসদের (ইনু) স্থায়ী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকতও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে মনোনয়নকে ঘিরে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রায় পাঁচভাগে বিভক্ত। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সানজিদা খানম ও তোফাজ্জল হোসেনের বিরোধী প্রায়ই সহিংস আকার ধারণ করছে। ড. আওলাদ হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গেও সানজিদার দ্বন্দ্ব রয়েছে। অন্যদিকে এ আসনে সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই দুর্বল বিএনপি। অভিজ্ঞ প্রার্থী না থাকার সঙ্কটেও রয়েছে দলটি। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিএনপিরও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি হাজি মীর হোসেন মিরু, যুগ্ম সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবীনসহ আরও কয়েকজন। সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে বিএনপির সালাউদ্দিন আহমেদ দু’বার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আবদুল হাই বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। এরপর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ওই তিন নেতা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তাদের ঘিরে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। তিন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিত্যদিনই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী-কদমতলী আংশিক) ॥ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। এ আসন থেকে মোট তিনবার দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তবে এবার এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মাঠে নেমেছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মুন্না এবং ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান। তবে বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ তিনবারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা নিজে মনোনয়ন না পেলে তার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলকে প্রার্থী করার ব্যাপারে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিভেদের সুযোগ নিয়ে এ আসনে মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ। এছাড়া জোট শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুস রশিদ সরকার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (ইনু) সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলামও মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন। ১৯৯৬ সালে অবিভক্ত ডেমরা-শ্যামপুর (ঢাকা-৪) আসন থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। এরপর ২০০৮ ও সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আরও দু’বার নির্বাচিত হন তিনি। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে একবার পরাজিত হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। একবার তিনি জেলে থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বয়স ও শারীরিকভাবে অসুস্থ বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে একটি অংশ একাট্টা হয়ে বিরোধিতা করছেন। এ পক্ষের অভিযোগ, এমপি পদে থেকে নানা অপকর্মের মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এমপি মোল্লা। দলীয় নেতাকর্মীদের বদলে নিজের পরিবার ও বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পার্টির নেতাকর্র্মীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি মোল্লার সমর্থকরা বলেছেন, দলীয় মনোনয়নে চারবারের মধ্যে তিনবারই হাবিবুর রহমান মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে একবার জেলে থেকে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন তিনি। তার আমলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মুষ্টিমেয় যেসব নেতা এমপিকে জনবিচ্ছিন্ন বলছেন তাদের এলাকায় কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা সেটিও দেখা দরকার। তাই এ আসনে হাবিবুর রহমান মোল্লা ও তার পরিবারের কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন অন্তত পাঁচজন। মনোনয়নকে ঘিরে বিএনপিতেও রয়েছে চরম কোন্দল-দ্বন্দ্ব। এ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নবীউল্লাহ নবী। এসব নেতারা কে কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত কোন্দল-দ্বন্দ্ব সামাল দিতে না পারলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) ॥ এ আসনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক শক্তিশালী হলেও শুধুমাত্র নির্বাচনী জোটের অঙ্কের হিসেবে আসনটি জোট শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হয়। গত নির্বাচনে কাজী ফিরোজ রশীদ জাপা থেকে নির্বাচিত হলেও আসনটিতে দলটির সাংগঠনিক অবস্থান খুবই দুর্বল। এ কারণে আগামী নির্বাচনে আসনটি আর ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, দলের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় এ আসনে নিশ্চিত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে এমপি কাজী ফিরোজ রশীদের বিপক্ষে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের প্রায় হাফডজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন- দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়তুল ইসলাম স্বপন, সূত্রাপুর থানা সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ, ওয়ারী থানা সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (নায়ক ফারুক), স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাইদুর রহমান প্যাটেল প্রমুখ। জাসদের সৈয়দ নাভেদ হোসেনও জোটের মনোনয়ন চান। মহাজোটগত সমঝোতার কারণে জাপা প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদের সমর্থনে নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক এমপি মিজানুর রহমান খান দীপু। নির্বাচনের কিছুদিন পরই মারা যান তিনি। দীপু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকাকে পরাজিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ হয়ে নব্বই দশকে জাতীয় পার্টিতে আসা দলটির হেভিওয়েট নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী। মহাজোটগতভাবে নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনেও তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই তার নেতাকর্মীদের দাবি। এর আগে এরশাদ সরকারের সময়ে গোপালগঞ্জ থেকে এমপি হয়েছিলেন তিনি। তবে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, কাজের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় কাজী ফিরোজ রশীদের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া বেশ কঠিনই হবে। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক মেয়র ক্যান্সার আক্রান্ত সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এ কারণে এ আসনে নতুন মুখ খুঁজছে বিএনপি। অবশ্য আইনগত জটিলতা মোকাবেলা করে আগামী নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা অংশ নেবেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন তার অনুপস্থিতিতে বিএনপি এ আসনে কাকে মনোনয়ন দেবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তবে সাদেক হোসেন খোকার পুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে মাঠে নামানো হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সাদেক হোসেন খোকার অনুপস্থিতিতে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন- ঢাকা মহানগর বিএনপির সহ-সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ লিটন। এছাড়াও গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ও কাউন্সিলর মকবুল হোসেন খান টিপু এবং মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান বলে জানা গেছে। অন্যান্য দলের এ আসনে তেমন তৎপরতা নেই। ঢাকা-৭ (লালবাগ-চকবাজার) ॥ এ আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে এ আসনটি বিএনপির হাতছাড়া। আসনটির বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের হাজী মোহাম্মদ সেলিম অসুস্থতাজনিত কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় এ নেতার তার প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত নির্বাচনে হেরে গেলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন বিএমএয়ের বর্তমান সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। শারীরিকভাবে কিছু অসুস্থ হলেও বসে নেই বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। নিজের উত্তরসূরি হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের পুরান ঢাকার রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই নেতা হাজী সেলিম ও ডাঃ মোস্তফা জালালের মধ্যকার দ্বন্দ্বে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। ওই দুই নেতা ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আকতার হোসেন, বংশাল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবং সাবেক ছাত্রনেতা কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এবারও মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। পুরান ঢাকার আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ হাজী মোহাম্মদ সেলিম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েই ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবেক ঢাকা-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবুল হাসনাতকে পরাজিত করে এমপি হন তিনি। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে হেরে যান। সীমানাভাগের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে হারিয়ে এমপি হন আওয়ামী লীগের ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে ডা. মোস্তফা জালালকে হারিয়ে ফের চমক দেখান হাজী মোহাম্মদ সেলিম। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ডা. জালাল মনোনয়ন দৌঁড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি শক্তিশালী প্রার্থী সঙ্কটে ভুগছে। সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন পিন্টু কারাগারে মারা যাওয়ার পর দলটির সাংগঠনিক অবস্থাও বেশ নড়বড়ে। আগামী নির্বাচনে পিন্টুর স্থান দখলে মাঠে রয়েছে বিএনপির হাফ ডজনেরও বেশি নেতা। তবে মনোনয়ন তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন প্রয়াত পিন্টুও সহধর্মিনী নাসিমা আক্তার কল্পনা। তিনি ছাড়াও বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল, এবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব, সাবেক কমিশনার মোশাররফ হোসেন খোকন, যুগ্ম সম্পাদক রহমান নাদিমসহ আরও কয়েকজন মাঠে রয়েছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে আবদুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা-৮ (রমনা-মতিঝিল-পল্টন) ॥ রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ও রাজনীতির সুতিকাগার হচ্ছে এই অভিজাত আসনটি। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছেন জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আগামী নির্বাচনেও জোটের অন্যতম শরিক দলের হেভিওয়েট এই নেতা আবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে তার সমর্থকরা নিশ্চিত। তবে টানা দুইবারের এই এমপি স্থলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার দলীয় প্রার্থীর দাবি তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওয়ার্কার্স পার্টির এ আসনে ভাগ বসাতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের হাফডজনেরও বেশি নেতা। এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাবিব উন নবী সোহেলকে হারিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সবশেষ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন তিনি। মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে তার দল সরকারের অংশীদার না হলেও বর্তমানে মেয়াদে প্রথমে বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী এবং পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাশেদ খান মেনন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে হেভিওয়েট প্রার্থী রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন- আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার কামাল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, রমনা থানা সভাপতি ও সাবেক কমিশনার হাজী মোখলেছুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার এবং যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। এদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন ও ইসমাইল হোসেন সম্রাটের আসনটিতে রয়েছে বেশ শক্ত অবস্থান। অন্যদিকে আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের মধ্যে একজন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। অপরজন হলেন দলে যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। দুই নেতার মধ্যে সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচনে দলটিকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে নবম জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতার যোগ্যতা হারান মির্জা আব্বাস। তার অবর্তমানে মনোনয়ন পান হাবিব উন নবী সোহেল। তার সমর্থকদের অভিযোগ, ওই নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেননের কাছে সোহেলের পরাজয়ের পেছনে মির্জা আব্বাসের হাত রয়েছে। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মির্জা আব্বাস। বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সাংগঠনিক কর্মকা-ে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও সোহেলের সমর্থকদের এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ কারণে সাধারণ নেতাকর্মীরাও অনেকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। ঢাকা-৯ (খিলগাঁও-মুগদা-সবুজবাগ) ॥ এ আসনটিতেও আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। আগামী নির্বাচনেও বর্তমান সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর উপর আস্থা রাখবে আওয়ামী লীগ। এমনটাই দাবি ক্লিন ইমেজের হেভিওয়েট এই নেতার সমর্থকদের। তিনবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সংসদীয় গণতান্ত্রিক সংস্থা ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেন। আর সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরীই অনেক এগিয়ে রয়েছেন। সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সরকার পলাশ ও সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ। মহাজোটের মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকা-৬ আসনকে দুই ভাগ করে ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ করা হয়। এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শিরীন সুলতানাকে হারিয়ে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রাজনীতির মাঠে নবাগত সাবের চৌধুরী বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে হারিয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন। আগামীবার টানা পঞ্চমবারের মতো প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ২০ বছর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে রাজধানীতে সংগঠনকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন প্রবীণ রাজনীতিক মোজাফফর হোসেন পল্টু। এর স্বীকৃতি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদকও করা হয় তাকে। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দল থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। ২০১৭ সালে অভিজ্ঞ এ নেতাকে দলে ফেরায় আওয়ামী লীগ। করা হয় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে নগর ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতিতে পরিচিত পাওয়া গিয়াস উদ্দিন সরকার পলাশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আলাদা একটি গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে তার। তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো আইনী জটিলতা হলে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হন মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ আসনে মনোনয়ন চান তিনি। মির্জা আব্বাস ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এখান থেকে (তৎকালীন ঢাকা-৬ আসন) এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে হারলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। সে সময় কিছুদিন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রেরও দায়িত্ব পালন করেন মির্জা আব্বাস। তার ঘনিষ্ঠরা জানান, ঢাকা-৮ আসনে নিজে এবং ঢাকা-৯ আসনে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে প্রার্থী করতে চান মির্জা আব্বাস। ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-কলাবাগান-হাজারীবাগ-নিউমার্কেট) ॥ রাজধানী ঢাকার অপর অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এ আসনে তাপসের কোন বিকল্পও নেই দলটিতে। এ অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে অনেকটাই নির্ভার দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপিতে রয়েছে যোগ্য প্রার্থীর সঙ্কট। গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ননে এমপি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। এর মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমদকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন এ তরুণ আইনজীবী। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন শেখ পরিবারের অন্যতম এই উত্তরাধিকার। আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে শেখ ফজলে নূর তাপস ছাড়া আওয়ামী লীগে অন্য কারও নাম আলোচনায় না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ব্যারিস্টার তাপসের বাবা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ও মা আরজু মনিকেও হত্যা করেছিল নরপিশাচ খুনীরা। সে সময়ের স্কুলছাত্র তাপস ব্যারিস্টারি পাস করার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সরাসরি রাজনীতিতে নাম লেখান। পিতৃমাতৃহীন সৎ, বিচক্ষণ, সজ্জন ও সদালাপী ব্যারিস্টার তাপস রাজনীতিতে আসার পর তাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষ প্রথম নির্বাচনেই তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন। আগামী নির্বাচনেও তাকে বিজয়ী করতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এ আসনে যোগ্য প্রার্থীর সঙ্কটে রয়েছে বিএনপি। বারবার প্রার্থী বদলের কারণে বিএনপির স্থায়ী কোন নেতা তৈরি হয়নি। নতুন কোন নেতৃত্বও উঠে আসছে না এখান থেকে। বিশেষ করে প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো শক্ত ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। ফলে আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের উপরই মূলত নির্ভর করছে বিএনপির ভাগ্য। এ অবস্থায় বিএনপি থেকে দুই তরুণ নেতা আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। আলোচনায় থাকা এই দুই নেতা হচ্ছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম এবং নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনী তৎপরতা মূলত এই দুই নেতাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। তবে এবার বাইরে থেকে ভাড়াটে কোন প্রার্থী না দেয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রতি দাবি জানিয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ব্যারিস্টার অসীম মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও তিনি কয়েক বছর ধরেই লন্ডনে বসবাস করছেন। ফলে বিগত দিনের দলের কোন কর্মকান্ডেই তাকে পাননি এলাকার নেতাকর্মীরা। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ-খবরও রাখেন না তিনি। এ নিয়ে ব্যারিস্টার অসীমকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে।
×