বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কোন কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ না গেলেও কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যারা দেশ অচল করতে চায়, ঢাকা অচল করতে চায়, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরই অচল করে দেব। খবর আছে বিএনপির সাগরে ঢেউ নেই। মরা গাঙ্গে ঢেউ আসে না। বিএনপির আন্দোলন নেতিবাচক রাজনীতির জন্য মরা গাঙ্গে রূপ নিয়েছে। এই গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের ত্রাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে দুঃস্থ ও অসহায়দের মাঝে রিক্সা ও ভ্যান বিতরণ এবং দুপুরে মতিঝিলের বাফুফে মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের দোয়া মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
যুবলীগ দক্ষিণের কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা দখল-পাল্টা দখলে নেই। জনগণের সাড়া না পেয়ে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে যারা ঢাকা দখলের হুমকি দিচ্ছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের অচল করে দেব। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা আন্দোলনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাদেরকে বলব- আপনেরা আন্দোলন করে ঢাকা অচল করে দেবেন, আর আমরা ঘরে বসে বসে ডুগডুগি বাজাব? এটা হবে না। যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত হয়ে যান, যারাই আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য-সন্ত্রাস করার চেষ্টা করবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে অচল করে দেব। যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে, দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি জনগণের সাড়া পায়নি। তাই নাশকতা-সহিংসতার পথে যাচ্ছে। ঢাকা দখল, দেশ দখলের হুমকি দিচ্ছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা দখল-পাল্টা দখলে নেই। কিন্তু সহিংসতা করলে ছাড় দেব না। আমরা পাড়া, মহল্লায় ঘরে ঘরে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করব। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্পকে ধূলিসাত করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ের বন্দরে নিয়ে যাব।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির এখন টার্গেট আওয়ামী লীগ নয়। এখন তাদের টার্গেট বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা দেশের জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে দুবাই, লন্ডন, ব্যাঙ্ককে বৈঠক করছে, ষড়যন্ত্র করছে। তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, তারা যেন ভুলে না যায়, যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আর আজকের ২০১৮ সাল এক নয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আর ২০১৮ সাল এক নয়। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ শেখ হাসিনাকে ভাল ভাবে। ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কিছু হলে সারাদেশে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। সেই আগুনে ষড়যন্ত্রকারীরা পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
আগামী বছর থেকে শেখ হাসিনার জন্মদিনকে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার জন্মদিনকে জনগণের ক্ষমতায়ন দিবস হিসেবে পালনের দাবি করে আসছে যুবলীগ। আমি দলের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী বছর থেকে প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনকে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্মদিনকে জনগণের ক্ষমতায়ন দিবস হিসেবে পালনের জন্য আগামী আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিংয়ে আমি উত্থাপন করব। তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে, নির্বাচন বানচাল করার জন্য চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুবলীগকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর নেতৃত্বের কারণেই আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা পেয়েছি। আমরা মহাকাশ জয় করেছি। এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারও চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্মদিনকে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন দিবস’ হিসেবে পালনের বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জনগণের ক্ষমতায়ন করেছেন। জনগণ এখন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে। আর একজন দলীয় প্রধান বা সরকার প্রধান ভাবেন পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে। আর রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা ভাবেন পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে।
সভাপতির বক্তব্যে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা ভাল থাকলে, দেশের মানুষ ভাল থাকবে। তাকে ভাল রাখার দায়িত্ব আমাদের। আসুন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত পরাজিত করে রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী বানাই। দেশকে এগিয়ে নিতে রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান হিরণ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ২ লাখ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।
দুঃস্থদের মাঝে রিক্সা-ভ্যান বিতরণ ॥ আওয়ামী লীগের ত্রাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে রিক্সা-ভ্যান বিতরণকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, অনেকে নাকি রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছে অক্টোবরে নাকি মাঠ দখল করবে। ক্ষমতা ফিরে পেতে আবারও রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছে, মাঠ দখল করবে। বাংলাদেশ অচল করবে, ঢাকা অচল করবে। তাদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, কোনদিন তা বাস্তব হবে না।
ভোটের আগে এই মুহূর্তে আন্দোলন করার মানসিকতা ভোটারদের নেই- এমন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলন কখন হয়? যখন আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি বিরাজমান থাকে। কিন্তু এখন কারও মাঝে অসন্তোষ নেই। কোথাও জনমনে কোন ক্ষোভ নেই, অশান্তি নেই। অশান্তি শুধু বিএনপিকে কেন্দ্র করে। তারা ক্ষমতা চায়। তারা ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে লুটপাটের রাজত্ব করতে চায়।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা পাল্টাপাল্টি করব না। কাউন্টার কোন মিটিং করব না। তবে সব জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকবেন। কেউ যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে। নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়, ঘরে-ঘরে, গ্রামে-গ্রামে জনগণের কাছে আমরা যাব। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমরা ক্যাম্পেইন করব এবং নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অনুরোধ করব।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সচিব সুজিত রায় নন্দী, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
