ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বিশ্ব শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বেলজিয়ামের রাজনীতিক পাওলো কাসাকা

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচার বিশ্ব মানের

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচার বিশ্ব মানের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ একাত্তরে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাদের বিচারের জোরালো দাবি রাখে। এত বছর পরও আন্তর্জাতিকভাবে একাত্তরের গণহত্যার বিচারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারাটা আমাদের জন্য একটি ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বেলজিয়ামের সমাজকর্মী ও রাজনীতিক পাওলো কাসাকা বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর যে বিচার হচ্ছে এ বিচার পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের। শুক্রবার বেলা দশটায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বিশ্ব’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভস’ ও জাদুঘর ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ভারতীয় জাতীয় গবেষণা অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায়, বেলজিয়ামের সমাজকর্মী ও রাজনীতিক পাওলো কাসাকা, আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক থিজস বাউনেট, ভারতের পশ্চিমবাংলা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক বন্দোপাধ্যায়। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও চিত্রশিল্পী হাশেম খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। এর ভেতরেও অনেক অপশক্তির অনপ্রবেশ ঘটেছে। সেই শক্তিগুলো প্রতিহত করা আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ। যারা অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ্বাস করে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মানবাধিকার বিশ্বাস করে, তাদের ঐক্য হতে হবে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বিশালব্যাপ্তি। আমাদের ইতিহাসের ভারসাম্যহীনতার কারণ হচ্ছে এই যে, আমরা সব সময় বিজয়কে গুরুত্ব দিয়েছি বলেই আমাদের ইতিহাসের ভারসাম্যহীনতা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গণহত্যা-নির্যাতন। মানুষ এই গণহত্যা-নির্যাতন মনে রাখে, এটা মানুষের ধর্ম। তিনি বলেন, এই গণহত্যা সব সুপার পাওয়ার দেশ সমর্থন করেছিল, তারা ভাবেনি এই লুঙ্গিপরা-খালি গায়ের মানুষদের জয় হবে। তারা গণহত্যার বিষয়টি চাপা দিতে চেয়েছিল এই কারণে যে, বাংলাদেশের গণহত্যা যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় তাহলে এই দায় আমেরিকা, চীনকে নিতে হবে। এই কথাগুলো বলার সময় এসেছে। আমাদের দাবির ফলে সরকার ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস করেছে। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করার। ভারতের পশ্চিমবাংলা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক বন্দোপাধ্যায় বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ভারতীয় ইতিহাসবিদদের গবেষণায় এই বিষয়টি অনেকটাই পশ্চাৎপদ হলেও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হচ্ছে। ভারতীয় জাতীয় গবেষণা অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তারাও যেমন এই দেশে আছে, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারাও এখন সক্রিয় আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত ছিল। বেলজিয়ামের সমাজকর্মী পাওলো কাসাকা বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের যে বিচার শুরু হয়েছে এটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এটি স্বচ্ছতা ও বলিষ্ঠতার সঙ্গে বাংলাদেশ করে যাচ্ছে।
×