ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে ‘উইমেন এ্যান্ড আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিসিয়েটিভ’ (ওয়াইফাই) প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সম্প্রতি আরও ২১ জেলায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা এ বছরই দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। কর্মসূচীর আওতায় মোট ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই প্রকল্প সরকারের ভিশন ২১ বাস্তবায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। ভিশন ২১ এর আগেই এই সেক্টর হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত। আগামী জুনের মধ্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনা হবে। শহর গ্রামের বৈষম্য দূর করতে সরকার সব মানুষের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত করতে সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আইসিটি খাতে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও আইসিটির মাধ্যমে উপার্জনের লক্ষ্যে সরকার নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। উইমেন এ্যান্ড আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিসিয়েটিভের (ওয়াইফাই) প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবনের সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০ হাজার নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উচ্চতর ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ৩ বছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২ লাখ ৬০ হাজার নারীকে টেকসই নারী উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে ‘মোবাইল ট্রেনিং বাস’ চালু করা হয়েছে। ‘ন্যাশনাল হাই-স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্টের’ আওতায় নারীর জন্য প্রোগ্রামিং কনটেস্ট চালু করা হয়। নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে এ সব কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ ও টেকসই হবে। ফলে নারীরা সমাজ উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে নারীরা ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে এগিয়ে এসেছেন। তারা তাদের মেধার স্বাক্ষরও রাখছেন। এবার ওয়াইফাই কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের উদ্যমী নারীরা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সরকারের সহযোগিতায় যুক্ত হয়েছে।
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে সব ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আইসিটি বিষয়ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে কোন শিক্ষার্থী গ্রাজ্যুয়েশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে বের হবেন। ইনফো-৩ প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের দফতরে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদান, ১৫ হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ডিসি ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার ল্যাব, ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার, ১০ হাজার গ্রোথ সেন্টারে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স ও রেগুলেটরি ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব ও ভিএলএস ল্যাব স্থাপনসহ গ্রামপর্যায়ে ই-কমার্স চালু হচ্ছে। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একটি করে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স প্রতিষ্ঠা করা হলে গ্রামের মানুষ বাড়িতে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও নাগরিক সেবা পাবেন। এতে গ্রামীণ জনপদের মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল বৈষম্য দূর হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশ পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার দিলেই দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে না। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন। প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হবে। এ বছরের মধ্যে দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন হবে। সরকার বিপুলসংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তি তৈরি করতে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। নতুন করে আরও কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে এক লাখ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার টার্গেট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফার্স্ট ট্রাক ফিউচার লিডারের (এফটিএফএল) প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপ আপ আইটি এবং ২০ হাজার জনকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে তেরোটি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোতে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন হবে।
সূত্র মতে, তথ্যপ্রযুক্তি হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। এই খাত থেকে ’২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে।
