ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুচির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করল কানাডা

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

    সুচির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করল কানাডা

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করেছে কানাডা। তার নাগরিকত্ব বাতিলের একটি প্রস্তাব বৃহস্পতিবার কানাডার পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থতার কারণেই তার এ সম্মাননা কেড়ে নেয়া হয়। খবর বিবিসির। কানাডা ২০০৭ সালে সুচিকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছিল। দেশটি এখনও পর্যন্ত যে ছয়জনকে এ সম্মানে ভূষিত করেছে, মিয়ানমারের নেত্রী তাদের একজন। পার্লামেন্ট সর্বসম্মতভাবে সুচির সেই সম্মান ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বুধবার জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের নেত্রী এখনও কানাডার নাগরিকত্ব রাখার উপযুক্ত কি না পার্লামেন্ট তা খতিয়ে দেখছে। তবে নাগরিকত্ব বাতিলের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ কি হবে তা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাননি তিনি। অবশ্য এ পদক্ষেপ মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের দুর্দশা লাঘব করবে না বলেও মন্তব্য করেন ট্রুডো। কানাডার পার্লামেন্টের দুই কক্ষই যৌথ প্রস্তাবের মাধ্যমে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। বাতিলও করে একই প্রক্রিয়ায়। এর আগে সুচির অক্সফোর্ড, গ্লাসগো, এডিনবরা ও নিউক্যাসলের ফ্রিডম অব সিটি পুরস্কারও বাতিল হয়েছে। সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান সুচি। তার আগে পরে দীর্ঘ গৃহবন্দিত্ব দশার মধ্যেই বহু সম্মাননা, সম্মানসূচক ডিগ্রী ও পুরস্কার ঘোষণা করা হয় সুচির নামে। বেসামরিক সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের পর ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতে সুচি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর হন। দেশের বেসামরিক প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন তারই হাতে। তবে সাংবিধানিকভাবে সেনাবাহিনী এখনও ক্ষমতাধর। গত বছর আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন মিয়ানমারের নেত্রী। দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে গত এক বছরেই দেশটি ছেড়ে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয় সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও। সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ থাকলেও সুচি তা করতে রাজি হননি। গত বছরের এপ্রিলে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি উল্টো সেনাবাহিনীর পক্ষেই অবস্থান নেন। তিনি দাবি করেন, রাখাইনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়নি। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করেছে এই অভিযোগে গত বছর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে সমস্ত মৌলিক অধিকার ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। রোহিঙ্গারা বাঙালী বলে ব্যাপক অপপ্রচার চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া এবং শিক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে বলা হলেও দেশটির সরকার তা কর্ণপাত করছে না। হামলার পর স্থল, নৌ ও সাগর পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা নাগরিকত্ব ও পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া না হলে মিয়ানমারে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
×