ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলিগলিতেও পাকা পথ ॥ ঘরে ঘরে বিদ্যুত ॥ আলোকিত চর

বদলে যাওয়া জনপদ চারঘাট-বাঘা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বদলে যাওয়া জনপদ চারঘাট-বাঘা

২০০৮ সালের আগে রাজশাহীর যে জনপদ ছিল অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও অবহেলিত সে জনপদের পরতে পরতে এখন উন্নয়নের ছোঁয়া। শুধু একজন মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্নয়নের বদলে যাওয়া জনপদের নাম চারঘাট-বাঘা। রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, বিদ্যুত ব্যবস্থা, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ছাড়াও সব সেক্টরে এ দুই উপজেলায় লেগেছে উন্নয়নের হাওয়া। গ্রামের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক সবখানে এখন মসৃণ পথ। আর বিদ্যুতের আলো প্রান্তিক মানুষের ঘরে ঘরেও। এ দুই উপজেলায় গত ৯ বছরে গ্রামের চিত্রপট পরিবর্তনের কারিগর শাহরিয়ার আলম এমপি। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তিনি। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকা বাঘা-চারঘাটের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়ী হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেন তিনি। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে সদা সজাগ তিনি। তাই তার প্রচেষ্টায় অবহেলিত দুটি উপজেলায় এখন সর্বত্র উন্নয়নের দৃশ্যমান চিত্র। দুই উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের নেতৃত্বের কারণে এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের ৯ বছরে শুধু বাঘা উপজেলাতে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এ সব উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে- রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রিজ-কালভার্ট স্থাপন, স্যানিটেশন স্থাপন, বাস টার্মিনাল নির্মাণ, স্কুল-ঘর নির্মাণ ও সংস্কার, ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, আবাসন প্রকল্প ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ। প্রায় সমপরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে জেলার চারঘাটেও। দুই উপজেলার বাসিন্দারা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহীর এ দুই উপজেলায় অসংখ্য উন্নয়ন হয়েছে। আম উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। ৯ বছর আগেও রাজশাহীর এ দুটি উপজেলা ছিল অনেকটায় অন্ধকারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ^র থেকে ঈশ^রদী প্রধান সড়ক ছাড়া কোন সড়কই পাকা ছিল না। তবে দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে এ দুটি উপজেলার দৃশ্যপট। কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা, বিদ্যুত ব্যবস্থা, সৌরবিদ্যুত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মানে পুরদস্তুর পাল্টে গেছে চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। বদলে গেছে এ দুটি উপজেলার মানুষের জীবনচিত্র। এলাকাবাসীর ভাষ্য গত ৯ বছরের এ দুই উপজেলায় সব রাস্তায় প্রায় পাকা হয়ে গেছে। অনেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, এখন আর কাঁচা রাস্তা নেই এ দুই উপজেলায়। শুধু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ-মন্দির, গির্জা-প্যাগোডা, পার্ক-বিনোদন কেন্দ্র, হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যেখানে আগে কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত ছিল না, সেখানে এখন মসৃণ পাকা সড়ক। ভাঙা-চোরা মাটির রাস্তার বদলে কার্পেটিং রাস্তা। ঘরে ঘরে বিদ্যুত। অবসান ঘটেছে ‘চরমপন্থার’। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গেও নেই দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, হানাহানি! অনেকটায় শান্তিময় এখন এ দুটি উপজেলা। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দুই উপজেলার আমূল পরিবর্তনের ‘নায়ক’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। স্থানীয়রা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ দুটি উপজেলায় গত ৯ বছরে অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে লোকজন আবারও শাহরিয়ারকে মূল্যায়ন করবে। মূল্যায়ন করবে বর্তমান সরকারকে। সূত্রে জানা গেছে, শুধু বাঘা উপজেলায় ১৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯টি কলেজ, ৯টি মাদ্রাসা, ৫টি ভোকেশনাল ও ২টি স্কুল এ্যান্ড কলেজ। এর মধ্যে বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়, খালিদাস খালি, জোতরাঘর, চন্ডিপুর, দাদপুর ও মনিগ্রাম এই ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩০টি করে ল্যাপটপ বিতরণের মাধ্যমে ‘ল্যাব ভবন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ এবং ১০০টি প্রাথমিক, ২১টি মাধ্যমিক ও ১১টি কলেজে নতুন অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭টি কম্পিউটার এবং ৩৫টি প্রিন্টার বিতরণ করা হয়। একইভাবে উন্নয়ন হয়েছে চারঘাটেও। রাজশাহীর বাঘা-চারঘাটের মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ কৃষক। এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম আম, খেজুরের গুড়, ধান, পাট, আখ এবং আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। পদ্মার চরাঞ্চল এ উপজেলার মধ্যে পড়ায় সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয় এবং চরের ফসল স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করা সম্ভব হয়। বাঘায় দুটি পৌরসভার মাধ্যমে গত ৯ বছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ সমস্ত উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে গেছে উপজেলার গ্রামীণ জনপদ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের এপিএস সিরাজুল ইসলাম জানান, বাঘা-চারঘাটের তৃণমূল লোকজনের চাহিদা বিবেচনা করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উন্নয়ন কাজে হাত দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত ও বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সহযোগিতায় শুধু বাঘা-চারঘাট নয়, বৃহত্তর রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, শুধু রাস্তাঘাট নয়, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এ দুটি উপজেলায় বাস্তবায়ন হয়েছে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানিয়েছেন, সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গত দুই বছরে প্রায় দেড় হাজার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং টিয়ার-কাবিখা কর্মসূচীর মাধ্যমে অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অপরদিকে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ উপজেলার অন্যান্য দফতরের মাধ্যমেও ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সরেজমিনে এ দুটি উপজেলা ঘুরে উন্নয়নের চিত্র দেখা গেছে। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে নতুন বিদ্যুত সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, তৃণমূল মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×