ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কবিতা

তারাপদ বাবুর দারিদ্র্যরেখা আলমগীর রেজা চৌধুরী ছাতা হাতে নীল দিগন্তে এখন তারাপদ বাবু! আমাদের শহরের মানুষ মাভৃভূমি ছেড়ে দেশাস্তরিত হয়েছেন, বঙ্গীয় সাহিত্য করে পটল তুলেছেন। তাতে আমার খেদ নেই! তার প্রেমিকা মালিনীর সঙ্গে দেখা হবে না বাসু মিত্তির টমটমে চড়ে চারাবাড়ি গিয়েছিলে সে কথা চাউর, আমরা তা সুধীর কাকাকে বলবো না! কবি বলেই এতো লুকানো স্বভাব আপনার? বাজিতপুরের মেলা ফেরত কাতর নাগর। আমার বাল্যকালীন সহযাত্রী, গভীর রাতে ফেরা শঙ্কিত ভাই। এতো মমতা নিয়ে আমাকে ফেলে গেলেন? মানুষ সব কিছু ভুলে যায়, জাগতিক বিশ্বাস বৃক্ষের মগডালে ঝুলে থাকে। বাতাসে মিলায় বিলাপ যুবকের বুক জুড়ে একটি দীঘলয় হাহাকার। তারাপদ বাবু, দেখুন ক্যামন নাবাল আমি... আপনার দারিদ্র্যরেখা অতিক্রম করিনি ** আমার যা কিছু ইচ্ছা শামীম নওরোজ চাঁদ, ক্ষয়ে যাও আমি আর জোছনাকে সহ্য করতে পারছি না জল, আর একটু সরে যাও আমি কাদার উপর ঘুমাবো আমার উঠোনে চাঁদঘোরে ঘুরে বেড়ায় দু-একটি হরিণ। রাগ হয়, তবু তাড়াতে পারি না। যা কিছু দৃশ্যমান তাতে আমার বিশ্বাস নেই। অদৃশ্যের দৃশ্যের ভেতর হারিয়ে গেছে মায়া হরিণের কাল। আমার ঘরে একটি গোখরো সাপ ঢুকেছে। তার ফোঁস ফোঁস শব্দে ঘুমাতে পারি না। হরিণ, যদি পারো সাপটিকে সঙ্গে নিয়ে যাও। চাঁদ, ক্ষয়ে যাও আমি আর জোছনাকে সহ্য করতে পারছি না জল, আর একটু সরে যাও আমি কাদার উপর ঘুমাবো ** শব্দখোঁজ রোদেলা সুকৃতি কাউকে বিরক্ত করবো না এই সংকল্প আমার। খোলা মাঠে হেঁটে যাবো খোলা চুলে পাগল আমি। প্রতি পদে নৈঃশব্দ গুনি হারিয়ে যেতে চাই। প্ল্যাকার্ডের মতো লাগে সব লেখা কথাগুলো হারিয়ে গেছে নিঃশব্দে তাই শব্দ বুনি এখনও শব্দেরা হানা দেয় নির্ভয়ে ভয় পাই সশব্দে বুক কাঁপে এখনও। ** ২৬ জুলাইয়ের দিনলিপি রাব্বি আহমেদ আজ মল চত্বরে খানিকক্ষণ তোমার চলে যাওয়ার সঙ্গে সখ্যতা করে বৃষ্টি নামল বলে একটা পুরনো দুঃখ বুকে নিয়ে হাঁটলাম। সেই অবিকল আগের মতোই কেউ না থাকার এই ক্যাম্পাসে কোথায় খাব, কোথায় যাব, কী খাব ভাবতে ভাবতে খাওয়ার ইচ্ছেই মরে গেল, যেমন অনেক ইচ্ছে মরে যেত তোমার সঙ্গে প্রণয়ের পূর্বে। এই যে বিগত সন্ধ্যায় আপেল আর পেয়ারা দিয়ে বললে, নিয়ম করে ফল খেতে। তুমি তো জানো যে নিয়ম করে আমি কিছুই করতে পারি না। কিছু কিছু জীবন থাকে নিয়মের বাইরে। তবু মনে হলো তোমার রেখে যাওয়া এ ফলের মাঝে যতটা না পুষ্টি রয়েছে তারও বেশি সন্তুষ্টি লুকনো। আমি ফল খাবার ছলেই কতিপয় সন্তুষ্টি গিলে ফেলতে ফেলতে ভাবি, আমাদের দেখা না হলে কি এমন করে মল চত্বর বিদায়ের বর্ষা গায়ে মেখে ভিজে যেত? আর আমি কোথাও খাবার না পাওয়ার আরেকটা দুঃখ বুকে নিয়ে সিগারেট ধরাতাম। শোন, এই শ্রাবণের মতো কাতর করে দেয়া কোন বর্ষা আসেনি আমার জীবনে। দূরে যে যাও, ফিরেও এসো দ্রুত। যেন বৃষ্টি এসে ভ্রুকুটি না করে, এই দারুণ শ্রাবণ দিনে যুবক তুমি একলা ক্যানো? ** ধুতরা ফুল শাহীন মাহমুদ গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকার ফিকে হয়ে আসে। ভাদরের ভুলে জমে যায় আশ্বিন চোখ ধুতরার ফুল ডেকে বলে-গগনশিরীষের ডালে যে পাখি গেয়ে উঠে রোজ তাঁর তলে ঘুমিয়ে দুজন সাদাকালো যুগের মানুষ।আকাশকান শুনে মেঘের ধারাপাত।শায়িত মানুষ গুলো হঠাৎ জেগে উঠে স্থির হয়ে যায় শারদ সারেঙ্গী। এক ঝাঁক মৃত পাখি উড়ে যায় পশ্চিমে মৃত মানুষ গুলো ফিস ফিস কথা বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে চির তরে। ** সাঙ্গ হয়ে গেছে আদ্যনাথ ঘোষ উনুনে দগ্ধ খড়ির কয়লা হয়ে দেহখানা পড়ে থাকে পোড়া ঝলসানো রুটির মতো নিশ্চল নিথর পাথরখ- একদা এখানে ছিল জোয়ারের ছল ছল ঢেউ প্রণয়ের কোকিলেরা কুহু কুহু ডেকে যেত বসন্ত হাওয়ার পাখায় পাখায় ভ্রমরের গুনগুন ভেসে যেত স্বর্ণালী আকাশে জীবনের কচিপাতাগুলো খেলে যেত মনরাঙা শ্রাবণের রোদ্রের সাথে এখন সবই চলে গেছে বিস্মৃতির খাতায় সাঙ্গ হয়ে গেছে জীবনের সোনা ফলা স্বাপ্নিক আকাশ বাতাসের সাথে লুকোচুরি খেলা প্রণয়ের চুম্বন- যা ছিল আমার নিশার স্বপন। ** বেনামি পত্রপুটে নারীশ^র তুমি এক জাহান জলেশ^রী এত নগণ্য এর আগে লাগেনি কখনও মনে হলো কেউ যেনো প্রবল ধাক্কায় ফেলে দিল গভীর গিরিখাতে সেখানে ছিন্নভিন্ন শরীরে একজোড়া চোখ নিষ্প্রভ-নিরুত্তর প্রশ্ন ছুড়ে রাখে! আমি তুচ্ছ-সামান্য নারী বৈ কিছু নই মা নই, বোন নই, বউ নই, অনুপ্রেরণা নই, প্রেমিকা নই, ভালোবাসার মানুষ নই, নই আমি কিচ্ছু, আমি শূন্য- শিরোনামহীন! তবু, তোমার যে জীবনের খোঁজ কেউ রাখে না তাকেই আমি দিনের পর দিন করে তুলি ভুলে ভরা এ ব্রহ্মা-ের প্রধান সংবাদ- হলুদ খামের মতো ছোট্ট হৃদয়ের ডাকবাক্সে আমার বেনামি চিঠি লিখি রোজ তোমারই নামে।
×